স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ সব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা নিষ্পত্তির প্রেক্ষিতে সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা’- শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডি (বিআইআইএসএস)। সেমিনারের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় অনেক সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ আহরণে দক্ষতা অর্জন ও ব্যবস্থাপনা বাড়াতে চায় সরকার। দেশের সমুদ্রসীমায় সম্পদ আহরণে দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগও প্রয়োজন রয়েছে। সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে সমুদ্রে যেমন আমাদের সীমানা বেড়েছে, তেমনি এ সমুদ্র এলাকায় অনেক সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ ব্যবহারে মানবসম্পদ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম সেমিনারে বলেন, সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সমুদ্র সম্পদের মধ্যে মাছ আহরণ ছাড়াও নৌ ও বন্দর ব্যবহার, খনিজ সম্পদ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। খুরশেদ আলম আরও বলেন, ভবিষ্যতে মানুষের শেষ ভরসাই হয়ে উঠবে সমুদ্র সম্পদ। এটি অনেক বড় বিষয়। এ সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
সেমিনারে উন্মুক্ত পর্বের আলোচনায় ঢাকার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পরে দুই দেশেরই জয় হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় বলা হয়ে থাকে, এ মামলায় শুধু বাংলাদেশ জিতেছে, এটা ঠিক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) মৃদু পবন দাশ বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পরে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কিভাবে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানো যায়, সেটাই সকলের চিন্তা করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমুদ্র সম্পদ আহরণ একটি বহুমুখী বিষয়। একদিনে আলোচনা করে এর শেষ করা যাবে না। আমাদের সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে হলে প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সৈয়দ নাসিম মনজুর বলেন, সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ এগিয়ে আছে। ভারত ও চীনও সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই আমাদেরও এ সম্পদ কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।
সেমিনারে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বৃহত্তর সচেতনতা গড়ে তোলার বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য পায়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাওসার আহমেদ, পেট্রোবাংলার পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নে সাগর-মহাসাগর সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আহরণে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। যা দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে। এছাড়া বর্তমান সমুদ্র অর্থনীতির ধারণাটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীনসহ বৈশ্বিক শক্তিগুলোর কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির প্রসারে বাংলাদেশেরও তাই নব নির্ধারিত সমুদ্রসীমায় সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে জানান বক্তারা। সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, গবেষক, শিক্ষক, নীতি-নির্ধারক ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।