ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শর্ত ভঙ্গ করে ব্যবসা

বাতিল হতে পারে চার এমএলএম কোম্পানির লাইসেন্স

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাতিল হতে পারে চার এমএলএম কোম্পানির লাইসেন্স

এম শাহজাহান ॥ শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কারণে চারটি এমএলএম কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। এই চার এমএলএম কোম্পানি হচ্ছে স্বাধীন অনলাইন পাবলিক লিমিটেড, রিচ বিজনেস সিস্টেম বাংলাদেশ লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লিঃ ও এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড লিমিটেড। এসব কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেনি। নবায়নের জন্য আবেদন করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বাস্তবতায় একমাস সময় বাড়িয়েছে সরকার। সেই সময়ও শেষ হচ্ছে আগামী ৪ মার্চ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত চার প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি একটি সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করেছে। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তাদের রিপোর্টের ওপরই লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই চার এমএলএম কোম্পানির ভাগ্য নির্ভর করছে। তবে উদ্যোক্তাদের দাবি, আইন মেনে ব্যবসা করায় তাঁদের লাইসেন্স বাতিল হবে না। নবায়নেরও সুযোগ দেয়া হবে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আইন ভঙ্গ করে এমএলএম ব্যবসা করার দায়ে প্রথম দফায় পাঁচটি বাদে সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এই পাঁচটির মধ্যেও আইন ভঙ্গের বিষয়টি ধরা পড়ায় জার ইলেক্ট্রনিক্স পালস লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল করেছে সরকার। এখন বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে সংসদীয় কমিটি। এই কমিটির মেয়াদ দু’মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগামী এপ্রিলের শেষ নাগাদ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট পাওয়া গেলে লাইসেন্সের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ব্যবসা করার কারণে ডেসটিনি, ইউনিপে টুসহ বহু আলোচিত কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। আগামীতেও যারা আইন ভঙ্গ করে এমএলএম ব্যবসা চালিয়ে যাবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করবে সরকার। জানা গেছে, এমএলএম কোম্পানিগুলো যাতে জনগণকে প্রতারিত করতে না পারে সে লক্ষ্যে সরকার পৃথক তিনটি আইন প্রণয়ন করেছে। এমএলএম আইন-২০১৩ অনুসারে আইন অমান্য করে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুর্ধ ১০ বছর ও অন্যূন ৫ বছর কারাদ- এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইন বাস্তবায়নে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৪ ও সংশোধিত বিধিমালা, ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে বা আইন ভঙ্গ করে কেউ এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করলে ওই আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে, সরকারের লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমএলএম কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। আইন করার পাশাপাশি ইতোপূর্বে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বহুস্তর বিপণন পদ্ধতির আওতায় পিরামিডসদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম চালানো যাবে না। এমনকি অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে এমন কোন পণ্য বা সেবা বিপণন করা যাবে না। জানা গেছে, লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। লাইসেন্স না পেলেও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা বন্ধ করেনি। ওইসব কোম্পানি তাদের কৌশল হিসেবে নতুন গ্রাহক তৈরি, পণ্য বিক্রি ও লেনদেনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে গ্রাহকরা নতুনভাবে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ নতুন আইনে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং অবৈধ। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকৃত ১৭ কোম্পানি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে এমএলএম ব্যবসা করছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। নতুন গ্রাহক তৈরি, প্রতারণা ও অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ রয়েছে ডেসটিনির মতো পিরামিডসদৃশ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও দেশে লাইসেন্স বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এমএলএম ব্যবসা করছে।
×