ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্কটল্যান্ডের স্বপ্ন ভঙ্গ

আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একাদশতম বিশ্বকাপে চমকের নাম আফগানিস্তান। কিন্তু বৃহস্পতিবার এই আফগানদের হারিয়েই বিস্ময়ের জন্ম দিতে চেয়েছিল স্কটল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচের শেষ পর্যন্ত স্কটল্যান্ড নয়, আফগানরাই বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম জয়ের স্বাদ পায়। ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে দারুণ লড়াইয়ের পর স্কটল্যান্ডকে ১ উইকেটে হারায় আফগানিস্তান। এর ফলে পুরো আফগানিস্তানই এখন উদযাপনের জোয়াড়ে ভাসছে। কেননা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে আসে আফগানিস্তান। আর প্রথম আসরের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর তৃতীয় ম্যাচে জয়ের আনন্দ পায় তারা। যে কারণে আফগানদের জন্য দিনটি অতি আনন্দের। তেমনি স্কটল্যান্ডের সামনে জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা। পরপর দুইদিন বিশ্বকাপের দুই ম্যাচে দুটি সহযোগী দেশ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। এই ম্যাচগুলো ছিল নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ। সেইসঙ্গে ছোট দলগুলোর বিপক্ষে জয় তুলে নেয়ারও। প্রথম ম্যাচে ব্রিসবেনে আয়ারল্যান্ড ২ উইকেটে হারায় সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। আর বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডকে ১ উইকেটে হারায় আফগানিস্তান। শেষ উইকেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শাপুর জারদান ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার ইয়ান ওয়ারড্লর বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে স্মরণীয় জয় উপহার দেন। ডানেডিনে প্রথমে ব্যাটিং করে ২১০ রান করে স্কটল্যান্ড। জবাবে শুরুটা দারুণভাবেই করে আফগানিস্তান। ৮ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৮৫ রান সংগ্রহ করে তারা। কিন্তু এরপরই হঠাৎ বিপর্যয়। ৯৭ রানে নেই আফগানদের ৭ উইকেট। দলীয় ১৩২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপের মধ্যে পড়ে তারা। তবে সতীর্থ ক্রিকেটররা আসা যাওয়ার মিছিল করলেও একপাশ আগলে রাখেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। তার ৯৬ রানের অসাধারণ ইনিংসই শেষ পর্যন্ত আফগানদের জয় নিশ্চিত করে। এদিন শেনওয়ারি ৯৬ রানের ইনিংসটি ১৪৭ বল দ্বারা সাজান। যেখানে ৫ ছক্কা ও ৭ চারের মার ছিল। কিন্তু যখন তিনি ছক্কা মারতে গিয়ে অফ স্পিনার মাজিদ হকের বলে ডাভির হাতে ধরা পড়েন তখন জয়ের জন্য আফগানিস্তানের প্রয়োজন ১৯ বলে মাত্র ১৯ রান। এরপর হাতে ছিল মাত্র একটি উইকেট। কিন্তু শেষ উইকেটে হামিদ হাসান (১৫*) এবং শাপুর জারদান (১২*) নিজেদের উইকেটে ধরে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর উচ্ছ্বসিত গোটা আফগানিস্তান। উচ্ছ্বাসের কমতি নেই সামিউল্লাহ শেনওয়ারির কণ্ঠেও। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ম্যাচটা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল। কারণ আমরা দ্রুতই বেশ ক’টি উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু ওই সময় আউট হওয়া উচিত হয়নি। মূলত আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়েই আমি আউট হই। কিন্তু দিনের শেষে এটা দারুণ একটি জয় ছিল।’ আফগানিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি ব্যাটসম্যানদের পারফর্মেন্সে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন স্কটল্যান্ডকে ২১০ রানে গুটিয়ে দেয়ার পরে ব্যাটসম্যানরা অযথাই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছে। যে কারণেই সহজ ম্যাচটিকে কঠিন করে তুলেছিল। বাঁহাতি পেসার শাপুর দুর্দান্ত বোলিং করে ৩৮ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তাই শাপুরের প্রশংসা করেছেন আফগান অধিনায়ক। তবে পারফর্মেন্স যেমনই হোক না কেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম জয়ের ফলে গোটা আফগানিস্তানই এখন আনন্দে উদ্বেলিত বলে মনে করেন নবি। ম্যাচ শেষে নবি বলেন, ‘আমাদের উপর দারুণ চাপ ছিল, কিন্তু শেনওয়ারি অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। নিজেদের নামের পাশে আমরা দুই পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছি। এটা বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম জয়। আমি নিশ্চিত দেশের মাটিতে সবাই এই জয় উদযাপন করছে।’ তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে স্কটল্যান্ড। এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও জয়ের স্বাদ পায়নি তারা। কিন্তু আফগানদের হারানোর দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি স্কটিশরা। যে কারণে স্কটল্যান্ডের জন্য এই পরাজয়টা ছিল দারুণ কষ্টের। এ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলগুলোর পাশে স্কটল্যান্ড। এই ম্যাচ থেকেই তারা জয়ের আশা করেছিল। ম্যাচ শেষে স্কটিশ অধিনায়ক প্রিস্টন মোমসেনের কণ্ঠেও তাই শোনা গেল হতাশা। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে স্কটল্যান্ড শক্তিশালী নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কাছেও হার মানে।
×