ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ফলাও করে প্রচার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ফলাও করে প্রচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৌলবাদ বিরোধী লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা- বিদেশী গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। বিবিসি, এপি, এএফপির মতো উল্লেখযোগ্য বার্তা সংস্থা ছাড়াও গার্ডিয়ান, হাফিংটন পোস্টসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে এ হত্যাকা- নিয়ে ব্যাপক সংবাদ প্রচার করেছে। দেশে দেশে এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদে বিভিন্ন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন প্রবাসীরা। অভিজিৎ হত্যাকা-কে নৃশংস আখ্যায়িত করে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। হাফিংটন পোস্টের শিরোনাম ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্লগার অভিজিৎ রায় বাংলাদেশে খুন, খুনীদের চাপাতির কোপে স্ত্রীও আহত’। সংবাদে বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় মার্কিন ব্লগার ও মৌলবাদবিরোধী লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করেছে অজ্ঞাত হামলাকারীরা। রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিৎ হামলার শিকার হন। হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা গুরুতর আহত হয়েছেন। খবরে জানানো হয়, রায় ‘মুক্তমনা’ নামের বাংলার ব্লগ লিখতেন। ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লেখার জন্য এর আগে তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। ‘মার্কিন নাস্তিক ব্লগারকে বাংলাদেশে কুপিয়ে হত্যা’ শিরোনামে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, মুক্তমনা ব্লগের উদারপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ লেখক অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিখ্যাত মার্কিন এ ব্লগারকে অজ্ঞাত হামলাকারীরা কুপিয়ে হত্যা করে। লেখকের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইসলামী উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে তিনি অনেক হুমকি পেয়েছিলেন। বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে অভিজিতকে নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটির শিরোনাম, ‘বইমেলার বাইরে সন্ত্রাসী হামলায় লেখক ও ব্লগার নিহত’, অপর সংবাদের শিরোনাম ‘ইসলামবিরোধী অপরাধে অভিজিতকে হত্যা : আনসার বাংলা টিম। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, আনসার বাংলা সেভেন নামের এক টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়েছে, ব্লগার অভিজিৎ রায়কে তাঁর ‘ইসলামবিরোধী অপরাধের’ জন্য হত্যা করা হয়েছে। আনসার বাংলা সেভেনের এ্যাকাউন্ট থেকে পর পর বেশ কয়েকটি টুইট করা হয় অভিজিৎ রায় নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর। একটি টুইটে বলা হয়, ‘ইসলামবিরোধী ব্লগার মার্কিন-বাঙালী অভিজিৎ রায়কে রাজধানী ঢাকায় হত্যা করা হয়েছে তার ইসলামবিরোধী অপরাধের জন্য।’ অপর একটি টুইটে বলা হয়, এই হত্যাকা- খোরাসান এবং শামে সম্প্রতি শহীদ আমাদের দুই ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ (দ্য টার্গেট ওয়াজ এন আমেরিকান সিটিজেন। টু-ইন-ওয়ান। আমেরিকা রিসেন্টলি মার্টার্ড টু অব আওয়ার ব্রাদার্স ইন খোরাসান এ্যান্ড শাম। রিভেঞ্জ। পানিশমেন্ট)। উল্লেখ্য বাংলাদেশে আনসারউল্লাহ বাংলা টিম নামে একটি জঙ্গী ইসলামী সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে। সরকার সংগঠনটি নিষিদ্ধ করেছে। তবে এই টুইটার এ্যাকাউন্ট এই জঙ্গী সংগঠনটির কি না তা জানা যায়নি। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, রিক্সায় গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে দুই হামলাকারী তাঁদের রিক্সার গতিরোধ করে। এরপর অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রীকে টেনে ফুটপাথে নিয়ে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। দীর্ঘদিন ধরে উগ্রপন্থীরা নাস্তিক ব্লগারদের প্রকাশ্যে হত্যার দাবি করে আসছে। ইসলামের সমালোচনা করে লেখা বন্ধ করতে নতুন আইনের দাবি করে আসছে বলে এএফপির খবরে জানানো হয়। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ঢাকায় একুশে বইমেলার বাইরে কুপিয়ে খুন- লেখক হুমায়ুন আজাদের পর এ বার লেখক অভিজিৎ রায়। ফের জঙ্গীদের হামলায় রক্তাক্ত হল ঢাকার রাজপথ। একুশে বইমেলার ঠিক বাইরে ভাষা শহীদ মিনারের অদূরে টিএসসি চত্বরে সস্ত্রীক অভিজিতের ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে দু’জনকে কোপানো হয়। হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ। গুরুতর আহত হয়ে তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর হাতের কয়েকটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে মার্কিন প্রবাসী অভিজিৎ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। ‘মুক্তমনা’ নামের ব্লগের এই প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কলম ধরে বেশ কয়েক বার জঙ্গীদের হুমকি পেয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা নয়। এ বারের বইমেলাতেও তাঁর দুটি বই প্রকাশ পেয়েছে। মূলত বইমেলা ও একুশের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্যই ১৫ তারিখে ঢাকায় ফিরেছিলেন অভিজিৎ।’ নৃশংস হত্যাকা-ে মর্মাহত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ॥ অভিজিৎ হত্যাকা-কে নৃশংস আখ্যায়িত করে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। শুক্রবার এক টুইটে তিনি লিখেছেন, অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকা-ে আমি মর্মাহত যেমন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে সংঘটিত সব সহিংস ঘটনায় আঘাত পেয়েছি।
×