ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবৃদ্ধি অর্জনের সিঁড়ি হবে শিল্প খাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রবৃদ্ধি অর্জনের সিঁড়ি  হবে শিল্প খাত

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শিল্প খাতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল নেয়া হচ্ছে। কেননা আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬ থেকে ’২০ সাল পর্যন্ত) গড় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করতে হলে শিল্পের ওপরই জোর দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া ওই সময়ে ১ কোটি ৩২ লাখ নতুন কর্মসংস্থান করতে হলে শিল্প ও সেবা খাত নির্ভরতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষি খাতেও যাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে সেই প্রচেষ্টাও থাকবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, গত পাঁচ বছরে চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে অবশ্যই শিল্পের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, কৃষিকে অবহেলা করা হয়েছে। কৃষি তার অবস্থানেই ছিল। কিন্তু শিল্প এগিয়ে গেছে দ্রুত, যা কৃষির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কৃষির বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়, যাতে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আগামী পাঁচ বছরে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্প (ম্যানুফেকচারিং) খাতে গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। এ খাতে পাঁচ বছরে অর্থবছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগামী পাঁচ বছরে সেবা খাতে গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ খাতে অর্থবছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। তৈরি হতে যাওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে কৃষি খাতে গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এ খাতে অর্থবছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং পরিকল্পনার শেষ বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্প, সেবা ও কৃষি এই তিন খাত মিলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬ থেকে ’২০ সাল পর্যন্ত) গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থবছরভিত্তিক ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিকল্পনা বছর শেষে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৮ শতাংশ। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির সিঁড়িতে উঠেছে। কিন্তু এ সময় যতটা দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা ছিল তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা পিছুটানের কারণে। তবে এখন শিল্পের ক্ষেত্রে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগাতে অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। এ জন্য বিশেষ কিছু করার দরকার নেই। সরকার যেগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেগুলো শেষ করতে পারলেই আপাতত হয়। যেমন চট্টগ্রাম বন্দরের পুরোপুরি ব্যবহার, ঢাকা-চিটাগাং চার লেনের কাজ শেষ করা এবং যে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো দ্রুত শেষ করলেই কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত পশ্চিমা দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করেছে সব অর্থনীতির একই ধরনের কাঠামো ছিল। প্রথমদিকে অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর, তারপর শিল্পের দিকে যাত্রা করেছে। বিশেষ করে শিল্পের অগ্রগতির শুরুটা আবার বস্ত্র খাতের উন্নতি দিয়ে হয়। যেমন ইংল্যান্ডে হয়েছিল। বাংলাদেশও সেই পথেই যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃর্ষি থেকে শিল্পের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৫ বছরের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও শিল্প প্রবৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
×