ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি পর এবার বিশ্বকাপ ও ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম দেড় শ’ (১৫) রানের রেকর্ড প্রোটিয়া অধিনায়কের!

টর্নেডোর নাম ডি ভিলিয়ার্স

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

টর্নেডোর নাম ডি ভিলিয়ার্স

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ দু’দিন আগেই বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৫ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন ক্রিস গেইল। এবার তার ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই বিপক্ষে কি না ঝড় তুললেন এবি ডি ভিলিয়ার্স! মাত্র ৬৪ বলে ১৫০- অবিশ্বাস্য ব্যাটিং তা-বে দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা বিশ্বকাপ তো বটেই, গড়লেন ওয়ানডে ইতিহাসেরই দ্রুততম দেড় শ’ রানের নতুন রেকর্ড! শেষ অবদি ৬৬ বলে ১৭ চার ও ৮ ছক্কায় খেললেন অপরাজেয় ১৬২ রানের টর্নেডো ইনিংস!! সিডনিতে ক্যারিবিয়ান বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মাতলেন প্রোটিয়া সেনাপতি- যার বর্ণনা ভাষায় প্রকাশের নয়। এ নিয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি ও দেড় শ’ রানের তিন-তিনটি বিরল রেকর্ডে নিজের নামটি লেখালেন ৩১ বছর বয়সী প্রিটোরিয়ান। আগের দ্রুততম দেড় শ’ (১৫০) রানের রেকর্ডটি ছিল শেন ওয়াটসনেরÑ ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯৬ বলে ১৮৫ রানের পথে ৮৩ বলে ১৫০ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার। কাল ডি ভিলিয়ার্স সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫২ বলেÑ যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির নজির। এক্ষেত্রে তার সামনে কেবল আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েনÑ গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন আইরিশ এই তারকা। সর্বোপরি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে ডি ভিলিয়ার্সের এটি তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। প্রথম নামটিও তারই! গত জানুয়ারিতে জোহানেসবার্গে ৩১ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন, নিউজিল্যান্ডের কোরি এ্যান্ডারসনকে পেছনে ফেলে গড়েছিলেন দ্রুততম সেঞ্চুরি নতুন রেকর্ড। সেদিনই ১৬ বলে ৫০ রানের পথে গড়েছিলেন দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডও! মজার বিষয়, গেইলের বিশ্বকাপে-রেকর্ড ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে কালকের ডি ভিলিয়ার্সের দেড় শ’র মিল অনেক। ৫২ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়া দক্ষিণ আফ্রিকান সেনসেশন তার ইনিংসের বাকি অংশটুকুতে খেলেন মোটে ১২ বল, তাতেই নামের পাশে জ্বলজ্বলে অপরাজিত ১৬২! সেঞ্চুরি পূরণে চার ১২ ও ছক্কা মাত্র ২টি, সেই তিনিই কিনা বাকি ৬২-এর পথে মোট চার ১৭ ও ছক্কা হাঁকান ৮টি করে। অর্থাৎ শেষ হাফ সেঞ্চুরির পথে বল হাওয়ায় ভাসিয়েছেন ১১ বার!! ক্যারিবীয় বোলারদের রীতিমতো কাঁদিয়ে ছেড়েছেন প্রোটিয়া সেনাপতি। সবেচেয় বেশি চড়াও হয়েছেন প্রতিপক্ষ উইন্ডিজ অধিনায়কের ওপরই। হোল্ডারের শেষ ২ ওভার থেকেই নিয়েছেন ৬৪ রান (৩৪ ও ৩০)!! ডি ভিরিয়ার্স যেখানে সেঞ্চুরি করেছেন ৫২ বলে, সেখানে সেঞ্চুরি থেকে দেড় শ’Ñ পরবর্তী ৫০ রান মাত্র ১২ বলে! আসলে তিনি যা করেছেন, তাতে প্রতি বাক্যে আশ্চর্যবোধক চিহ্নের ব্যবহার করতে হবে। শেষ অবদি টর্নোডো ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৭ চার ও ৮ বিশাল ছক্কা দিয়ে। ভিলিয়ার্স তা-ব, সঙ্গে রাইলি রুশোর ৩৯ বলে ৬১ রানের ঝড়ে এলোমেলো হয়েছে আরও অনেক ইতিহাসই। ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৪০৮ রানের পাহাড় গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাÑ বিশ্বকাপে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। সর্বোচ্চ ৪১৩/৫-০ ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার বিপক্ষে যেটি করেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। সর্বোপরি ওয়ানডেতে চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় রানের ইনিংস এটি। শেষ ১৫ ওভারে ২২২ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা, এটিও ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা। পাওয়ার প্লেতে ৭২ রান যোগ করে প্রোটিয়ারা, যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের কোন ডট বল করারই সুযোগ দেয়নি তারা। ক্যারিবীয় সব বোলারকেই বেধড়ক পেটান ডি ভিলিয়ার্স-রুশেরা। ১০ ওভারে ১০৪ রান দিয়ে সবচেয়ে খরুচে উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। দুরন্ত ইনিংস খেলে ডি ভিলিয়ার্স নিজেই অবাক! যা গোপন করেননি প্রোটিয়া সেনাপতি, ‘আমার জন্য এটা ছিল সত্যি আনন্দের দিন। শুরুতে উইকেট ধরে রাখার পর যা ঘটেছে তার সবই ছিল আমার অনুকূলে। ঠিক যেভাবে চেয়েছি সেভাবে হয়েছে। দলীয় সংগ্রহ ৩শ’তে পৌঁছানোর পর আমি আরও রিল্যাক্স হয়ে ব্যাট চালিয়েছি। শেষ ১৫ ওভারে এত ভাল ব্যাটিং কোন দল খুব কমই করেছে। সব মিলিয়ে এটি রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। আশা করছি ভারতের বিপক্ষে হারের দুঃখ ভুলে আমরা এখন আরও উজ্জীবিত হতে পারব।’ বলেন তিনি।
×