ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভূমিকা ভাল নয়

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভূমিকা ভাল নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই। কেননা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই স্বচ্ছতার সঙ্গে এখানে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। শনিবার ‘বাংলাদেশে গণহত্যা ও ন্যয়বিচার’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। এছাড়া একটি দেশে গণহত্যার বিচার না হলে পুনরায় তা ঘটতে পারে বলেও তাঁরা মন্তব্য করেন। বক্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচেরও সমালোচনা করেছেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তিন দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। এদিন চারটি অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের গণহত্যা বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে এখানকার কোন কোন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু থেকেই দাবি করা হচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আমি এটা মনে করি না। একটি দেশে গণহত্যা ঘটলে তার বিচার হওয়া উচিত। সেটাই স্বাভাবিক। আমিও এই বিচারকে এভাবেই দেখি। পাওলো কাসাকা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সমালোচনা করে বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র নিয়ে বিবৃতি দিয়ে থাকে। তবে তাদের অধিকাংশ বিবৃতিই সঠিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া দেখতে গত বছর বাংলাদেশে এসেছিলাম। এই বিচার প্রক্রিয়া আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। তবে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করার কোন সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই এখানে বিচার চলছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য হেলমুট স্কুলজ বলেন, ভবিষ্যতে যেন কোন গণহত্যার ঘটনা না ঘটে সেজন্যই গণহত্যার বিচার করতে হবে। এই বিচার করা খুবই জরুরী। কোন হত্যাকা-ের বিচার না হলে পুনরায় হত্যাকা- ঘটতে পারে। তাই গণহত্যার বিচার ফেলে রাখা উচিত নয়। তিনি বলেন, যে কোন দেশে গণহত্যার বিচারের সময় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট খুবই বিবেচ্য। তাই অনেক কিছুই বিবেচনায় নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে গণহত্যার বিচার করতে হয়। সব সময় মনে রাখতে হয়, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না ওঠে। আর বিষয়গুলো সে দেশের তরুণ প্রজন্মকেও বুঝতে হবে। সেমিনারে আর্জেন্টিনার লোমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইরেনে ভিক্টোরিয়া মাসিমিনো লাতিন আমেরিকার চারটি দেশের গণহত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গণহত্যার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন। বেশিরভাগ দেশে সামরিক শাসনের আমলে গণহত্যা হয়েছে। আর্জেন্টিনায় ১৯৭৬ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত গণহত্যায় প্রায় ৩০ হাজার লোক মারা গেছে। এছাড়া ৭০ থেকে ৯০ দশকের মধ্যে চিলি, কলম্বিয়া ও গুয়েতেমালায় গণহত্যার বলি হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এসব দেশেও গণহত্যা বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সেখানেও বিচার চলছে। আমি বলতে চাই, এসব গণহত্যা ছিল অবশ্যই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তাই সকল দেশেরই গণহত্যার বিচার শেষ করতে হবে। অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে যৌথ ও একক সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর মানুষরা যৌথ সাক্ষ্য দিয়েছে। এছাড়া মুকসেদপুর থেকে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌথ সাক্ষ্য এসেছে। আবার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোমেনা খাতুন এককভাবে সাক্ষ্য দিয়েছে। এভাবে একক ও যৌথ সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে অনেকেই এসব মামলায় সাক্ষী দিতে গিয়ে ট্রমাটাইজের শিকার হয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আর্জেন্টিনা ট্রাইব্যুনালের বিচারক ডেনিয়েল হোরাসিও বলেন, কোন দেশে একটি গোষ্ঠী গণহত্যা ঘটালে সেখান থেকে সামরিক শক্তি সুযোগ নিতে পারে। এছাড়া গণহত্যার কারণে সে দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই গণহত্যার বিরুদ্ধে সব সময়েই সতর্ক থাকতে হবে। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- কম্বোডিয়ার ইসিসিসি আদালতের সাবেক বিচারক ড. হেলেন জার্ভিস, সুইজারল্যান্ডের গণহত্যা বিশেষজ্ঞ মাইকেল গোটের্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক উম্মে ওয়ারা, আর্জেন্টিনার গবেষক অধ্যাপক সিলভিয়া আন্দ্রে এ্যালোনসো প্রমুখ। রবিবার এই সেমিনার শেষ হবে।
×