ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসের বহুমুখিতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২ মার্চ ২০১৫

সন্ত্রাসের বহুমুখিতা

সমাজের সুস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য যা যা দরকার তার সব উপাদানই বিদ্যমান সন্ত্রাসের শিকড় ও ডালপালায়। সন্ত্রাস এক বিকট বিপুল রাক্ষস, তার রয়েছে হাজারো বাহু, শত শত মস্তক। সন্ত্রাসের সূচনামুখ তাহলে কোথায়? নিঃসন্দেহে তা অবিবেচক স্বার্থান্ধ সত্তায় এবং অপরাজনীতিতে। সন্ত্রাস অনেকটা বিষাক্ত সাপের মতোই। যে সাপ সমাজদেহে দংশন করলে তার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে সর্বশরীরে। সন্ত্রাসের পথ রচনার নানা কৌশল আছে। হরতাল ও অবরোধ- এ দুটি শক্তিমান পথ। রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসেবে আখ্যা দেয়া হলেও তা আসলে আহ্বান করে হরেক রকম সন্ত্রাসকে। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, হরতাল ও অবরোধের ভেতর সন্ত্রাসীরা ভয়হীন সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকা-ে আক্রান্ত ও আহত হয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা, সুস্থচিন্তা, শুভবোধ। হরতাল-অবরোধ ছাড়া অন্য সময়ে সন্ত্রাস হয় না, এ কথা বলা যায় না। তবে হরতাল-অবরোধের মধ্যে সন্ত্রাস চালানোর লাইসেন্স পেয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। বিগত প্রায় দু’মাস ধরে প্রথমে অবরোধ, পরে হরতাল সহযোগে অবরোধ চালানো হচ্ছে। সময়জুড়ে দেশ হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসের জনপদ। কে কোথায় কখন ককটেল ফাটাবে, পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেবেÑ তার যেন কোন ঠিক নেই। মানতেই হবে সন্ত্রাসকবলিত সমাজে সন্ত্রাস আর একমুখী থাকে না; সে অর্জন করে বহুমুখিতা। আগুনের পরিবর্তে সন্ত্রাসের উপকরণ হয়ে উঠতে পারে ছুরি-চাপাতি-রাম দা। সেই সঙ্গে বাকসন্ত্রাসও শুরু হয় প্রবল শক্তি নিয়ে। সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করতে করতে সন্ত্রাসীরা পূর্বনির্ধারিত টার্গেট ব্যক্তির ওপরও সন্ত্রাস চালায়। যেমন চালিয়েছে মুক্তমনা অভিজিতের ওপর। তাই সন্ত্রাস ভয়ঙ্কর! তার বহুমুখিতা ততোধিক ভয়ঙ্কর। বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাসের এই বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জানেন বলেই তাদের অবস্থান হয় সন্ত্রাসের বিপরীতে। গণতন্ত্র ও সন্ত্রাস এক পঙ্ক্তিতে উচ্চারণযোগ্য শব্দ নয়, বরং দুটোই বিপরীতমুখী। একটি যদি হয় সুস্থতা, তবে অপরটি কেবল ব্যাধিই নয়, নিশ্চিতরূপে সে সুস্থতাবিনাশী। একটিকে সুন্দর বললে অপরটিকে ভয়ঙ্কর বলতেই হবে। তাই এই দুটি বিষয় এক সঙ্গে চলতে পারে না এবং গণতন্ত্রের জন্য সন্ত্রাস কাম্য নয়, বরং সন্ত্রাস গণতন্ত্রের মহাশত্রু। রাজনৈতিক দল হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ্য ও চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালালে রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী দলই বলতে হয়। সেই সঙ্গে এ কথাও বলা জরুরী যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। প্যারিস, লিবিয়া, মিসর ও ডেনমার্কেও রক্ত ঝরছে একই রকম। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের অংশ হিসেবেও দেখা চলে বাংলাদেশের চলমান সন্ত্রাসকে। প্রশ্ন হচ্ছে- বাংলাদেশ কি সন্ত্রাসের কাছে নতিস্বীকার করবে? তার বহুমুখিতার পরিচয় পেয়ে বিমূঢ় হয়ে পড়বে? না, কখনোই নয়। ইতিহাস তা বলে না। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মারণাস্ত্রের সৃষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বীর বাঙালী। সেই সন্ত্রাসকে রুখে দিয়ে, পরাস্ত করেই বিজয় নিশান উড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। আজকের যে চলমান সন্ত্রাস তা বহু মুখ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সুনিশ্চিতভাবে তাকেও মোকাবেলা করবে দেশের সাধারণ মানুষ। তবে এক্ষেত্রে সরকারের দায় ও কর্তব্যই প্রধান। কারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। কঠোরতার সঙ্গে সন্ত্রাস দমনে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেবে- দেশের মানুষ সেটাই আশা করে।
×