ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসড়কের গাছ লুট

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২ মার্চ ২০১৫

মহাসড়কের গাছ লুট

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ টেন্ডার ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর ভুরঘাটা থেকে বরিশাল অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটার মহাসড়কের ওপর ঝুলে থাকা গাছের ডালপালা কাটার নামে শত শত গাছের মূল অংশ কেটে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বিগত এক মাস থেকে প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকার সরকারী গাছ ও ডালপালা কেটে বরিশাল সওজ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও নগরীর প্রভাবশালী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারী গাছ কাটার বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন সওজ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ফলে মহাসড়কের পার্শ¦বর্তী সরকারী গাছ এখন হরিলুটের বাতাসায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশবিদরা জরুরী ভিত্তিতে মহাসড়কের গাছ নিধন বন্ধ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। রবিবার দুপুরে সরেজমিন মহাসড়কের গৌরনদীর বেজহার আকন বাড়ির কাছে গিয়ে দেখা গেছে, সওজ বিভাগের দুইজন কার্যসহকারীর উপস্থিতিতে মহাসড়কের পাশের বিশাল আকৃতির রেইনট্রি, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডালপালাসহ বিশাল আকৃতির মূল অংশ কাটা হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ১০-১২ জন শ্রমিক। তারা প্রায় ৫-৭ ফুট গোলাকারের এসব ডালপালা কেটে বিভিন্ন আকারের সাইজ করে মিনি ট্রাকে বোঝাই করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই কার্যসহকারী বলেন, আমরা স্যারের নির্দেশ পালন করছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। ট্রাকচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, গত ২২ দিন ধরে তারা দুটি মিনিট্রাকে করে বরিশাল আমতলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে গাছ পৌঁছে দিচ্ছেন। এ জন্য দৈনিক ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় তারা গড়ে ৫ থেকে ৬ ট্রাক গাছ সেখানে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভাড়ার টাকা সওজের কর্মকর্তারা পরিশোধ করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বরিশাল সওজ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, ২৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ তুহিনসহ নগরীর কয়েকজন সরকারী দলের নেতাকর্মীরা অফিস ম্যানেজ করে অর্ধেকভাগে গাছের ডালপালা কাটার দায়িত্ব নিয়েছেন। গাছ ও ডালপালা কাটার পর ছাত্রলীগ নেতারা অর্ধেক নিয়ে যাচ্ছেন। বাকি অর্ধেক যাচ্ছে সওজের বরিশালের আমতলা অফিসে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সওজের কর্মকর্তারা গাছের সিংহভাগ বিক্রি করে নামেমাত্র ডালপালা আমতলা অফিসের স্টকইয়ার্ডে স্তূপ করে রেখেছেন। মহাসড়কের ভূরঘাটা থেকে বরিশাল অংশের জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উজিরপুরের সানুহার থেকে গৌরনদী ভূরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী স্থানের বিশাল আকৃতির মেহগনি, রেইনট্রি, চাম্বলসহ বিভিন্ন জাতের শত শত পুরনো গাছের বড় বড় ডালপালা ও গাছের মূল অংশ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। অসংখ্য গাছের মূল অংশ ও কা- কেটে ফেলার কারণে অচিরেই শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত মূল্যবান গাছ। গত এক সপ্তাহ পূর্বে গৌরনদীর বাটাজোর এলাকায় এভাবে গাছ কাটা শুরু করলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা প্রদান করেন। এ কারণে একদিনের জন্য গাছ কাটা বন্ধ থাকলেও রহস্যজনক কারণে পরেরদিন থেকে পুনরায় গাছ কাটা শুরু হয়। এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের ২৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি মোঃ তুহিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা শুধু ঝুঁকিপূর্ণ ডাল কেটে পরিষ্কার করছি। এতে গাছের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তিনি কাটার জন্য অর্ধেক ডালপালা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ কাজের সঙ্গে যুক্ত নই। তুহিন সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে মহাসড়কের ওপর ঝুলে থাকা গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করছে। বরিশাল সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাসেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কের ওপর ঝুলে থাকা গাছের ডালপালা ঝড় হলে রাস্তার ওপর পড়ে যানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এটা ভেবে ওইসব ডালপালা কাটার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়েই আমরা ডালপালা কাটা শুরু করেছি। সওজের কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাছ লুটের অভিযোগ তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। রাজশাহীতে নিলামের নামে হরিলুট স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, গোদাগাড়ী উপজেলায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় রোপিত ৫৮৮টি গাছ নিলামে নিয়ে কেটে নাশ করা হয়েছে সহস্রাধিক। অভিযোগ উঠেছে রোপিত গাছ ছাড়াও রাস্তার পাশের সরকারী অন্যান্য গাছও ঠিকাদারের করাতের নিচে কাটা পড়ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বারহাটি, ছোট নারায়ণপুর ও বড় নারায়ণপুর গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে। জানা গেছে, বেসরকারী সংস্থা প্রশিকার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় উপকারভোগীরা গাছগুলো রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। প্রশিকার গোদাগাড়ীর এলাকা সমন্বয়কারী সৈয়দ আবু মাসার জানান, সম্প্রতি সাতটি লটে তাদের রোপিত ৫৮৮টি শিশু গাছ প্রায় সাত লাখ টাকায় নিলাম দেয়া হয়। পবার দামকুড়াহাট এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ রানা নিলামে গাছগুলো কেনেন। বারহাটির ছোট নারায়ণপুর গ্রাম থেকে গাছ কাটা শুরু হয়েছে ১৫ দিন আগে। এখন গাছ কাটা হচ্ছে বড় নারায়ণপুর এলাকায়। বড় নারায়ণপুর ব্রিজ পর্যন্ত গাছগুলো কাটা হবে। রবিবার দুপুরে নারায়াণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে সরকারী গাছ নিধনের দৃশ্য। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় সে সময় শুধু শিশু গাছ লাগানো হয়েছিল। অথচ এখন রাস্তার পাশের যে কোন গাছই কেটে নিচ্ছেন ঠিকাদারের শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে এলাকার অন্তত হাজার খানেক গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। নতুন করে গাছও লাগানো হচ্ছে না। কেটে নেয়া গাছের ডালপালা পুড়ছে ইটভাটায়। বড় নারায়ণপুরের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, গাছ না থাকার প্রভাব তারা এখনই টের পেতে শুরু করেছেন। রাস্তার পাশে আর একটি গাছও নেই। তবে ঠিকাদার মাসুদ রানার দাবি, গাছ বৈধভাবেই কাটা হচ্ছে। নিলামের বাইরে একটি গাছও বেশি কাটা হচ্ছে না। এর বেশি তিনি কোন কথা বলতে চাননি। গাছ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মোস্তাক হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত ৭১৪টি গাছ কাটা হয়েছে। তবে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে ৫৮৮টি। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। নিলামের বাইরে অতিরিক্ত একটি গাছও কাটা হলে খোঁজ-খবর নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×