ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে জয়ের মুখ দেখল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ মার্চ ২০১৫

অবশেষে জয়ের মুখ দেখল পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়াহাব রিয়াজের দুরন্ত অলরাউন্ডার নৈপুণ্য, অভিজ্ঞ মিসবাহ-উল হকের দায়িত্বশীল ব্যাটিং ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে জিম্বাবুইকে ২০ রানে হারাল পাকিস্তান। ব্রিসবেনে বোলারদের দাপুটে ম্যাচে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৫ রানের স্কোর গড়ে পাকিরা। জবাবে হারার আগে হারেনি এলটন চিগম্বুরার দল। ইনিংসের মাত্র ২ বল বাকি থাকতে ২১৫ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুইয়ে। ব্যাট হাতে মহাগুরুত্বপূর্ণ অপরাজিত ৫৪ রানের পাশাপাশি ৪ উইকেট নিয়ে ‘নায়ক’ ওয়াহাব রিয়াজ। ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টানা দুই হারে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান, জিম্বাবুইয়েকে হারানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম সাফল্য দেখল মিসবাহবাহিনী। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াল তারা। পাকিস্তানের মূল সমস্যা ব্যাটিং। আগের দুই ম্যাচে সেটিই দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ব্যর্থ ইউনুস খানকে বাইরে রেখে ম্যাচের একাদশ সাজান পাক-নির্বাচকরা। আহমেদ শেহজাদের সঙ্গে ওপেন করেন নাসির জামসেদ। কিন্তু তাতে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই ব্যক্তিগত ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের ঘরোয় লীগ বিপিএলে ঝলক দেখিয়ে আলোচনায় আসা জামসেদ। পেসার তেন্দাই চাতারা এরপর শূন্য রানে শেহজাদকে ফিরিয়ে জোড়া আঘাত হানেন, দলীয় ৪ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তান। এ পর্যায়ে হারিস সোহেলকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মিসবাহ। উইকেট আগলে রেখে ধীরালয়ে খেলতে থাকেন দু-জনে। তৃতীয় উইকেটে ৫৪ রান যোগ করেন তারা। ২৭ রান করা সোহেল সাজঘরে ফিরলে মিসবাহর সঙ্গী হন উমর আকমল। ২০ ওভারে মাত্র ৫৮ রান করা পাকিস্তানকে এরপর ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১৩ ওভারে ৬৯ রান যোগ করে এ জুটি। ৪২ বলে ৩৩ রানে ফেরেন আকমল। দলের রান তখন ৪ উইকেটে ৩৪ ওভারে ১২৭। খুব দ্রুত শহীদ আফ্রিদি ও শোয়েব মাকসুদ আউট হলে ১৫৫ রানেই ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে পাকিরা। সেখান থেকে দলকে ফাইটিং অবস্থানে নেয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মিসবাহ ও ওয়াহাব রিয়াজের। সপ্তম উইকেটে ৭.৫ ওভারে দলের ভা-ারে ৪৭ রান এনে দেন তারা। ১২১ বলে ৩ চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৭৩ রান করে আউট হন মিসবাহ। ক্যারিয়ারে কোন সেঞ্চুরি না পাওয়া পাকিস্তান অধিনায়কের এটি ৪০তম হাফ সেঞ্চুরি! ৪৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়াহাব, এটি তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ও ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে আব্দুর রাজ্জাকের পর (২০১১) পাকিস্তানী হিসেবে আট নম্বরে নেমে ওয়াহাবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের নজির এটি। ২৩৫ রান ওয়ানডেতে আহামরি স্কোর নয়Ñ তবে ম্যাচের ভেন্যু ব্রিসবেন বলেই সম্ভাবনার পাল্লাটা ছিল পাকিস্তানের দিকে। যেখানে সর্বশেষ ১০ ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করে ২০০-২৫০ রান করা দল জিতেছে ৭ বার! ২২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার চামু চিভাবা (৯) ও সিকান্দার রাজাকে (৮) ফিরিয়ে দিয়ে তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেন দীর্ঘদেহী পেসার মোহাম্মদ ইরফান। দুই সেরা ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ব্রেন্ডন টেইলর অবশ্য দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান। তৃতীয় উইকেটে ৫২ রান যোগ করেন তারা। ২৯ রান করা মাসাকাদজাকে তুলে নিয়ে এ জুটিও ভাঙ্গেন ইরফান। এরপর টেইলর-শন উইলিয়ামসন আরও ৫৪ রান যোগ করে জিম্বাবুইয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন! ৫০ রান করা টেইলরকে সাজঘরে পাঠিয়ে আবার ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। তবে শেষ দিকে মিসবাহর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন অধিনায়ক চিগম্বুরা (৩৫ বলে ৩৫) ও তিনাশে পানিয়াঙ্গারা (২৮ বলে ১০)। চিগম্বুরাকে আউট করে পাকিস্তানকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান ম্যাচের চমক-ওয়াহাব। দুরন্ত হাফ সেঞ্চুরির পর বল হাতে এমন নৈপুণ্য (৪/৪৫)Ñ ওয়াহাবকে ম্যাচসেরা হিসেবে বেছে নিতে এতটুকু কষ্ট হয়নি। ‘আমাদের জন্য এটা ছিল ‘ডু অর ডাই ম্যাচ।’ জিম্বাবুইয়ে কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছে। ব্যাটে-বলে ওয়াহাব রিয়াজ অসাধারণ খেলেছে। আমরা খুশি।’ ম্যাচ শেষে বলেন অধিনায়ক মিসবাহ। বিপরীতে দারুণ ফাইট দিয়েও জিততে না পেরে হতাশ জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক এলটন চিগম্বুরা।
×