ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৪ মার্চ ২০১৫

পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (আরএডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা মোট আরএডিপির ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। পরিবহন খাতের মোট বরাদ্দ তিন ভাগে ভাগ করে সড়ক পরিবহন খাতে দেয়া হচ্ছে চার হাজার ২৯০ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে আট হাজার ৫৬৫ কোটি এবং রেলওয়ে-নৌ ও বেসামরিক বিমান পরিবহনে চার হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আগামী ১০ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ খসড়া উপস্থাপন করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৮ হাজার ৬৬২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুত খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৮ হাজার ৩১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, পরিবহন খাত হচ্ছে দেশের অন্যতম খাত। কেননা এর মাধ্যমে সার্বিক যোগাযোগ নিশ্চিত হয়। পণ্য চলাচল সচল থাকে। ফলে পণ্যের ব্যয় কমে যায়। এতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয় অংশই লাভবান হয়। তাছাড়া শিক্ষা, ধর্ম ও বিদ্যুত খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট, কেননা অর্থবছরের খুব বেশি সময় বাকিী নেই। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ দিয়ে গুরুত্ব বিবেচনা করা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতিরিক্ত যে চাহিদা রয়েছে সে বিষয়ে এনইসিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। চাহিদা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে তিনি তিনি অতীতে বরাদ্দ বাড়িয়েও ছিলেন। তাই এ বছরও আশা করা যায় কিছুটা বরাদ্দ বাড়াতে পারেন। ৭২ হাজার কোটি টাকার আরএডিপি ॥ পরিকল্পনা কমিশনের খসড়া অনুযায়ী মোট সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৪৭ হাজার ১০০ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে ৮ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপির সরকারী তহবিল থেকে কমছে ৫ হাজার ৫১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে কমছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত চাওয়া হবে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ॥ অন্যদিকে খসড়া চূড়ান্ত হলেও এখনও অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) আরও ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ দাবি করা হবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতির প্রেক্ষিতে এ বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করেছে, বিদ্যুত বিভাগ ৬১৯ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩০০ কোটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক হাজার কোটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫০ কোটি এবং এলজিইডি এক হাজার কোটি টাকা। কমছে প্রকল্প ॥ পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা কমানো হচ্ছে। মূল এডিপির এক হাজার ২২৪ টি প্রকল্প থেকে কমিয়ে করা হচ্ছে এক হাজার ১৯৭টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৮টি, কারিগরি প্রকল্প ১৬৮টি এবং জাপানী ঋল মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ২১টি প্রকল্প। অন্যান্য খাতের বরাদ্দ ॥ পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ৭ হাজার ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, ভৌত পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ৬ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে ৪ হাজার ৭৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ৬৩০ কোটি ২৭ লাখ, কৃষি খাতে ৪ হাজার ১৯৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ৭ হাজার ৫ কোটি টাকা, পানি সম্পদ খাতে ২ হাজার ৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, শিল্প খাতে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা, তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ১ হাজার ৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যোগোযোগ খাতে ৭৪৩ কোটি ৫৮ লাখ, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ৬ হাজার ৮৪৪ কোটি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ১৬৬ কোটি ৯২ লাখ, গণসংযোগ খাতে ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ, সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাতে ৪০৯ কোটি ৪ লাখ, জনপ্রশাসন খাতে ১ হাজার ৭০১ কোটি ৪৬ লাখ, জন প্রশাসন খাতে ১ হাজার ৭০১ কোটি ৪৬ লাখ, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ৬৩০ কোটি ২৭ লাখ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৪৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পদ্মা সেতুর বরাদ্দ কাটছাঁট হচ্ছে না ॥ সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে না পদ্মা সেতু প্রকল্পে। মূল এডিপিতে এই সেতুর জন্য বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এটিই ঠিক থাকছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা সেতুর কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতু, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, তদারকি ও পরিবেশ কার্যক্রমসহ অন্যান্য অংশ মিলে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৪ দশমিক ১২ শতাংশ কাজ। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ, এর পরেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শেষ হবে পুনর্বাসনের কাজও। পদ্মা সেতুর সময় ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং অর্জিত ফলাফর শীর্ষক এক প্রতিবেদনে অগ্রগতির এ চিত্র উঠে এসেছে। এজন্যই বরাদ্দ বাড়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। অগ্রগতি বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মূল সেতু নির্মাণসহ প্রধান কার্যক্রমগুলো ধরলে এখন পর্যন্ত সেতুর কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে যেভাবে কাজ এগিয়ে চলছে এতে করে আমরা আশাবাদী ২০১৮ সালের মধ্যেই এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। বর্তমানে আমাদের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে। এ অগ্রগতিতে আমরা সন্তুষ্ট। মূল এডিপি বাস্তবায়নের বর্তমান চিত্র ॥ হরতাল ও অবরোধের মধ্যেও চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) ৩২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থব্যয় হয়েছে ৩৩ শতাংশ, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩১ শতাংশ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় হয়েছে ২৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট এডিপির বাস্তবায়ন হার ছিল ৩১ শতাংশ। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরে এক শতাংশ বাস্তবায়ন হার বেড়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মোট ব্যয় করেছে ২৭ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৮ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮ হাজার ৫০৯ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে (সিটি করপোরেশন পৌরসভা ইত্যাদি) এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত এডিপির যে বাস্তবায়ন হয়েছে এতে আমরা সন্তুষ্ট। কেননা গত অর্থবছরের সাত মাসে ছিল ৩১ শতাংশ এবার হয়েছে ৩২ শতাংশ, এটি তো খারাপ কিছু নয়। এ ক্ষেত্রে বলতে পারি জানুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নে হরতাল-অবরোধের কোন প্রভাব পড়েনি। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে এ অবস্থা যদি চলতেই থাকে তাহলে পরবর্তীতে খারাপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
×