ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল বিরোধ তুঙ্গে

নেতানিয়াহুকে ভর্ৎসনা ওবামার

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৫ মার্চ ২০১৫

নেতানিয়াহুকে ভর্ৎসনা ওবামার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরান প্রসঙ্গে কংগ্রেসে দেয়া ভাষণকে কেন্দ্র করে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ভর্ৎসা জানিয়েছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল বিরোধ আরও ঘনীভূত হলো। নেতানিয়াহু মঙ্গলবার তার ওই ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে এক অশুভ চুক্তির লক্ষ্যে দাঙ্গা চলছে বলে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, এরূপ চুক্তির ফলে ইরান পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে এবং যুদ্ধের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওবামা বলেন, নেতানিয়াহু তার ভাষণে তেহরানের সঙ্গে চলমান আলোচনার কোন বাস্তব বিকল্প ভঙ্গের প্রস্তাব করেননি। খবর বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। নেতানিয়াহু তার ভাষণে ওবামার ইরান সম্পর্কিত কূটনীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে প্রেসিডেন্টের বিরোধী রিপাবলিকান সদস্যরা তার প্রতি সমর্থন জানান। ওবামা তার জবাবে ওবাল অফিস থেকে হতাশার সুরে নেতানিয়াহু নতুন কিছু বলেননি বলে ঘোষণা করেন। আর ইরান সরকার নেতানিয়াহুর ৩৯ মিনিটের ওই ভাষণকে “ক্লান্তিকর ও একই কথা পুনরাবৃত্তি” বলে চিহ্নিত করে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা এ কথা জানায়। নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের নেতৃত্ব সব সময়ের মতই এখনও উগ্রপন্থী রয়ে গেছেন এবং তাদের বিশ্বাস করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তি যে চুক্তি প্রণয়ন করছে, তা ইরানের পররাণু অস্ত্র তৈরির পথেব বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বরং বোমা তৈরির পথই সুগম করবে। ইসরাইলি নেতা বলেন, ইরান যাতে বহু সংখ্যক পরমাণু অস্ত্র পেতে পারে, ওই চুক্তি সেটিই নিশ্চিত করবে। আমরা আরও অনেক বিপজ্জনক এক ইরাকের মুখোমুখি হব, মধ্যপ্রাচ্যে দেখা যাবে পরমাণু বোমার ছড়াছড়ি এবং এক সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন আমাদের ঘিরে ধরবে। নেতানিয়াহু চান, ইরানের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ক কোন চুক্তি স্বাক্ষর রোধ করতে কংগ্রেস যথাসাধ্য চেষ্টা করুক। এটি মার্কিন রাজনীতিতে এক সরাসরি হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, যে কোন চুক্তির আগে ইরানকে অবশ্যই এর আচরণ বদলাতে হবে। ওবামা বলেন, তিনি ওই ভাষণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারেননি, কিন্তু তিনি যখন এর ট্রান্সক্রিপ্ট পড়েন তখন এতে নতুন কিছু দেখতে পাননি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে বিকল্প পথ দেখাচ্ছেন তা হলো ‘কোন চুক্তি নয়’। এক্ষেত্রে ইরান অবিলম্বে এর পরমাণু কর্মসূচী আবারও চালিয়ে যাওয়া শুরু করবে। ইরান এর পরমাণু কর্মসূচীর গতি ত্বরান্বিত করবে, অথচ জানতে পারব না এবং তাদের ওপর কোন বাধা থাকবে না। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, ইরানকে কোন বিকল্প পথের প্রস্তাব না দিয়ে নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট কাজে আসবে না। প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটিক নেতা ন্যান্সি পেলোসি ওই ভাষণকে মার্কিন ‘গোয়েন্দা বিভাগের প্রতি অবমাননাকর’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে, তিনি ইরানি হুমকি সম্পর্কে আমেরিকার জ্ঞানকে খাটো করে দেখানোতে তিনি খুবই ব্যথিত হয়েছেন। কংগ্রেসের ২৩২ ডেমোক্র্যাটিক সদস্যের মধ্যে ৬০ জনই ওই ভাষণের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয় কারণ ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ে কংগ্রেসে সাধারণত মতৈক্য দেখা যায়। ইরান কোন পরমাণু বোমা তৈরি করতে চেষ্টা চালানোর কথা অস্বীকার করে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্য একমাত্র ইসরাইলের হাতেই পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়। ইরান নিয়ে চলমান কূটনৈতিক প্রয়াসের কড়া সমালোচনা করলেও নেতানিয়াহু দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানাননি। ওবামা ইতোপূর্বে বলেন যে, এরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ চলমান আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং কংগ্রেস তা আরোপ করতে চাইলে তিনি এতে ভেটো দেবেন।
×