ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফের হোঁচট খেল বিডিএফ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৬ মার্চ ২০১৫

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফের হোঁচট খেল বিডিএফ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আবারও হোঁচট খেল বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক। পরপর কয়েকবার প্রস্তুতি নিয়েও পদ্মা সেতু নিয়ে টানাপোড়েন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাতীয় নির্বাচন- এ তিন ইস্যুতেই এতদিন আটকে ছিল দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক। সর্বশেষ আবারও যুক্ত হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা ইস্যু। ফলে আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে এ বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে প্রস্তুতি গুটিয়ে এনেও এ বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বলছে, সময় স্বল্পতার কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে অবশ্যই বৈঠকটি করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, শুধু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই বিডিএফ স্থগিতের কারণ নয়। সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২০১০ সালের ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিডিএফ’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালের ২ ও ৩ নবেম্বর বিডিএফ বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করার পরও শেষ পর্যন্ত দাতাদের কারণেই এটি বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালেও এ বৈঠক হওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। বৈঠক স্থগিত বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, এটি বর্তমানে স্থগিত করা হয়েছে। কেন এমনটি হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ বলতে পারব না। তবে এটুকু শুনেছি তাড়াহুড়া না করে একটু সময় নিয়ে ভালভাবে করার জন্য এমনটি করা হয়েছে। আশা করছি এ বছরই বিডিএফ‘র বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, দীর্ঘ চার বছর ঝুলে থাকার পর ঋণদাতাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক এপ্রিল মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠানের সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে দাতাদের সমন্বিত সংস্থা লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) ডিপি এক্সকম গ্রুপের সঙ্গে প্রস্তুতি সভাও করেছিল সংস্থাটি। বৈঠকে অংশ নেন এক্সকম গ্রুপের অন্য সদস্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাজুহিকো হিগুচি, ডিএফআইডির সারাহ কোকি (এক্সকমের ভাইস চেয়ার), কইকার কিম বুক হি, এসডিসি’র ডেরেক মুলার এবং জাতিসংঘের ক্রিস্টা রাডার। সাধারণত এ গ্রুপটিই পুরো দাতাদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তাই ওই বৈঠকে প্রাথমিক সম্মতি পাওয়ার পর বিডিএফ বিষয়ে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। বিডিএফ বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া তৈরির কাজও জোরেশোরেই শুরু হয়। এছাড়া বৈঠকে এজেন্ডাও চূড়ান্ত করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সম্প্রতি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে এ বৈঠকটি স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে নিযুক্ত লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের বৈঠক হলে উন্নয়ন সহযোগীরা এক টেবিলে বসে সরকারের আর্থিক কৌশল, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিষয় জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী কোন দাতা সংস্থা বা দেশ কোন খাতে সহযোগিতা দেবে সেসব বিষয়ে একটি কমিটমেন্ট পাওয়া যায়। ফলে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেশন হয় না। এ ক্ষেত্রে সরকারও জানতে পারে কোথায় কি ধরনের সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বোধ হয় বড় কারণ নয়, কেননা কয়েকদিন আগেই আমাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেছেন। সেখানে তো সমস্যা হয়নি। এটি স্থগিতের কারণ হচ্ছে, বিডিএফ তো আর প্রতি মাসে হয় না, তাই আমরা এবং সরকার চায় দাতাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দাতা দেশগুলো মন্ত্রী পর্যায়ের অংশগ্রহণ। কিন্তু এত কম সময়ে তা সম্ভব নয়। আর একটি কারণ হচ্ছে এজেন্ডা তৈরির ক্ষেত্রে মূল টেকনিক্যাল বিষয় হচ্ছে এবারের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এপ্রিলের মধ্যে সেই ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়েও একটা সংশয় রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর তো বিডিএফ হয়নি, কিন্তু বৈদেশিক সহায়তা কমেনি। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এপ্রিলে বিডিএফ বৈঠকটি হলে ভাল হতো। কেননা এতে করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমাদের অগ্রাধিকার, গুরুত্ব, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির কোন জায়গায় আমরা যেতে চাই, এজন্য কি ধরনের কৌশল নেয়া হচ্ছে, সম্পদের কি অবস্থা এসব বিষয় উন্নয়ন সহযোগীরা জানতে পারত। পরামর্শ থাকলে দিতে পারত। এছাড়া আমরা যেহেতু উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাচ্ছি সেহেতু এতে উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
×