ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেলসনে লাল সবুজ পতাকা উড়িয়ে বুলন্দ আওয়াজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ মার্চ ২০১৫

নেলসনে লাল সবুজ পতাকা উড়িয়ে বুলন্দ আওয়াজ

ফজলুল বারী, সেক্সটন ওভাল, নেলসন থেকে ॥ সব মিলিয়ে কী এক শ’ বাংলাদেশী সমর্থক হবে নেলসনের সেক্সটন ওভালে? সে তর্ক নিষ্প্রয়োজন। কারণ এই পরিমাণ দর্শকই হাজার বাংলাদেশীর আওয়াজ তুলছেন নেলসনের সেক্সটন ওভালে। লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে বুলন্দ আওয়াজে চিৎকার করে জানাচ্ছেন নিজেদের অনুভূতি, বাংলাদেশ বাংলাদেশ! তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ। ক্লান্তিহীন এই মানুষগুলো বৃহস্পতিবার নজর কেড়েছে নেলসনবাসীর। এদের একজনও বাংলাদেশের জার্সি ছাড়া নেই। সবাই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা। স্থানীয় এক হাসপাতালের নার্স মারিয়া বললেন, এমন প্রাণোচ্ছল মানুষ জীবনে খুব কম দেখেছি। এক কথায় ওসাম। নেলসনের এই মাঠের দর্শক ধারণক্ষমতা ৫ হাজার। সব মিলিয়ে তিন হাজারের কম দর্শক খেলাটি দেখতে আসেন। এর সিংহভাগই স্কটিশ। বিভিন্ন স্কুল থেকে বাচ্চাদের খেলায় নিয়ে আসেন শিক্ষকরা। এলাকার লোকজন নানাভাবে খেলাটিতে সহায়তা করছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন এলাকার নানা বয়সী মানুষ। কেউ লোকজনকে ঘুরে ঘুরে পানি খাওয়াচ্ছেন। গরম থেকে অঙ্গ বাঁচাতে দিচ্ছেন সানস্ক্রিম। বৃহস্পতিবার এখানে তাপ চড়েছিল ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এলাকার যত লোকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, সবাই বলার চেষ্টা করেছেন তাদের এলাকায় এমন একটি খেলা হচ্ছে, এটি তাদের জন্য যেমন গর্বের তেমনি এটি তাদের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক পর্যটক এসেছেন নেলসনে। অনেকের কাজের সুযোগ হয়েছে। ব্যবসা বেড়েছে। এর জন্যও খেলাটি তাদের কাছে আশীর্বাদের মতো হয়েছে। সারা মাঠ ঘুরে একজন বাংলাদেশীও পাওয়া যায়নি, যারা নেলসনে থাকেন! মাঠের বাংলাদেশী সাপোর্টারদের সবাই এসেছেন ৫১০ কি.মি. দূরের ক্রাইস্টচার্চ নামের একটি শহর থেকে। ড্রাইভ করে আসতে ছ’ঘণ্টার বেশি লেগেছে। এদের অনেকে সেখানে পড়াশোনা করেন, অনেকে নির্মাণ শ্রমিক। ক্রাইস্টচার্চের সর্বশেষ ভূমিকম্পের পর শহরের পুনর্নির্মাণে যাদের সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে এসেছে স্থানীয় একটি রিক্রুটিং এজেন্সি, এমন এক প্রবাসী বাংলাদেশী শাহীন বলেছেন, এই খেলাকে কেন্দ্র করে কাজ থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে এসেছেন। তিন দিন কাজ না করলে মজুরি হবে না। কিন্তু দেশ যে সবার আগে। বাংলাদেশের এক সিনিয়র সাংবাদিকের সন্তান কাইটেরিটরি নামের একটি শহরে চাকরি নিয়ে এসেছেন মাত্র দু’মাস। খেলা দেখতে ছুটে এসেছেন তনয়ও। বললেন, খেলাটিকে কেন্দ্র করে যে আমাদের কী আবেগ তা ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। মাঠের আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো। স্কটল্যান্ড ৩১৮ করার পরও সমর্থকদের একজনকেও পাওয়া যায়নি যিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ হারবে! দেশের দলকে নিয়ে সবার এমনই বিশ্বাস।
×