ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপথগামীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজে লাগবে ইউরোপের অভিজ্ঞতা

চরমপন্থী মুসলিম ও নব্য নাৎসি একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ দুই

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৮ মার্চ ২০১৫

চরমপন্থী মুসলিম ও নব্য নাৎসি একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ দুই

ইব্রাহিম আহমেদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাছগাছালি ছাওয়া পশ্চিম লন্ডনে। স্থানীয় ফুটবল ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড় একসময় ছিলেন পশ্চিমা সঙ্গীতেরও ভক্ত। তার ভাষায় এগুলো হলো ‘হোয়াইট মিউজিক’ বা শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গীত। কিন্তু স্কুলে তাকে দেখা হতো একজন ‘মুসলিম’ হিসেবেই। ধীরে ধীরে ব্রিটিশ সমাজের সঙ্গে তার বিচ্যুতি ঘটে এবং তিনি ধর্মযুদ্ধের জন্য লোক সংগ্রাহকদের কবলে পড়ে তাদের দলে ভিড়ে যান। এদিকে সুইডেনে হিটলারের মেইন কাম্পফ বইটি পড়ে রবার্ট ওরেল তৈরি হন তার নিজের যুদ্ধের জন্য। অভিবাসী ওরেল স্কুলে পড়ার সময় থেকে সহপাঠীদের বিরূপ আচরণের শিকার হন। সহপাঠীরা তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। ওরেল একে বিবেচনা করতেন তার সংস্কৃতির প্রতি হুমকি হিসেবে। তিনি ভাবতে শুরু করলেন, তার নব্য নাজি বন্ধুরা যে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে সেগুলো নিয়ে আচমকা পার্লামেন্ট ভবন আক্রমণ করলে কেমন হয়। এ ঘটনাগুলোর আদর্শ ভিন্ন কিন্তু এটি চরমপন্থার দিকে ঠেলে দেয়ার দুটো চিত্র মাত্র। চরমপন্থা, কট্টরপন্থা বা জঙ্গীবাদে দীক্ষা নেয়ার পেছনের কাহিনীগুলো মোটামুটি এরকমই। তবে উল্লেখিত দুইজনের ক্ষেত্রে ঘটনা অবশ্য সে পথে গড়ায়নি। তাদের কেউই চরমপন্থার দিকে অগ্রসর না হয়ে স্বাভাবিক পথে ফিরে এসেছেন। ইউরোপে গত দুই মাসে দুটো রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাগুলোর জন্য মুসলিম চরমপন্থীদের দায়ী করা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে আহমেদ ও ওরেলের কাহিনীকে দুটো আশাব্যঞ্জক উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের মুসলিম তরুণদের একটা অংশ ইসলামী চরমপন্থী মতাদর্শে আকৃষ্ট হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা এখন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরমপন্থায় দীক্ষার প্রক্রিয়াটা বিশ্বজুড়ে প্রায় একই ধরনের। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর টেরোরিজম এ্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালক জন হর্গান বলছেন, আদর্শগত মতপার্থক্য যাই থাক জিহাদী ও নব্য নাজিদের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে। হর্গান সাইকোলজি অব টেরোরিজম নামে একটি বইও লিখেছেন। চরমপন্থার দীক্ষা নেয়া, চরমপন্থী দলে ঢোকা এবং এসব দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার মধ্যে প্রচুর মিল আছে বলে তিনি মনে করেন। সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থী চিন্তাধারার বিপরীতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ইউরোপ মহাদেশকে একটি সমৃদ্ধ গবেষণাগার হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কারণ মার্কসবাদী থেকে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীকে কার্যকর মোকাবেলার দীর্ঘ ইতিহাস মহাদেশটির রয়েছে। বর্তমানে আইএসে যেভাবে মুসলিম তরুণরা যোগ দিচ্ছে সেটা ইউরোপের অনেক দেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এক্ষেত্রে চরমপন্থার বিপরীতে তাদের কিভাবে উদ্বুদ্ধ করা যায় সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন চরমপন্থা ছেড়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে তারা এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন আহমদ আর ওরেল এখন তাই করছেন। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×