ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালাও পোড়াও কঠোর হাতে দমন চান কূটনীতিকরা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ মার্চ ২০১৫

জ্বালাও পোড়াও কঠোর হাতে দমন চান কূটনীতিকরা

তৌহিদুর রহমান ॥ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে, আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে বিএনপি জোট। সাধারণ মানুষের চলাফেরার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে তারা। তবে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। এদিকে বিদেশী কূটনীতিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা কঠোরভাবে দমনের জন্য সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। কূটনীতিকদের অভিমত, বিরোধীপক্ষের আন্দোলনের অধিকার থাকলেও কোন ধরনের সহিংসতা করার অধিকার নেই। গণতন্ত্রে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোন স্থানও নেই। তাই যেকোন ধরনের সহিংসতা সরকারকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রশংসাও করেছেন তাঁরা। তবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কূটনীতিকদের কেউ কেউ সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছেন। সরকারের সঙ্গে ৫ দফা বৈঠকে বিদেশী কূটনীতিকরা এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি কেন্দ্র করে বিএনপির ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ৫ দফায় ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সরকারের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠকের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কানাডা, ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হয়। তৃতীয় দফায় সার্ক ও আসিয়ান দেশের প্রতিনিধি, চতুর্থ দফায় ওআইসি ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পঞ্চম দফার বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের আবাসিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫ দফায় এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের ৫ দফার বৈঠকে তাঁরা আন্দোলনের নামে সহিংসতা দমনের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সরকার বিরোধীপক্ষের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে সেই আন্দোলন যেন কোন ধরনের সহিংসতায় না পৌঁছে। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের প্রতি রাজনৈতিকদলগুলোকে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ দেয়ার জন্যও আহ্বান জানান তাঁরা। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু, শতাধিক হতাহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানের কূটনীতিকরা দেশের চলমান সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, সহিংস কর্মকা- চালিয়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী করা যায় না। ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন থেকে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। এদিকে কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের সর্বশেষ বৈঠকে লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিজিত রায়ের হত্যার বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্বসহকারে নেয়া হয়েছে। খুনীদের দ্রুত গ্রেফতারে আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশেও বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে কূটনীতিকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা, জ্বালাও, পোড়াও চলছে, সেটা যেন সরকার কঠোর হাতে দমন করে। সাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। উল্লেখ্য, বিএনপির টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে পেট্রোলবোমায় ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন ১১৫জন। আহত হয়েছেন আরও শত শত লোক। বাস-ট্রাকের পাশাপাশি ট্রেনেও হামলা চালানো হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা বা বিশ্ব এজতেমার মতো বড় ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়ও অবরোধ ও হরতাল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, সহিংসতা কখনই রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। আর এই ধরনের সহিংসতা সৃষ্টিকারী দলের প্রতি তাদের কোন ধরনের নৈতিক সমর্থনও নেই। তারপরেও বিএনপি জোট আন্দোলনের নামে সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে।
×