ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেগম মমতাজ হোসেন

আমাদের নারী সমাজ

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৮ মার্চ ২০১৫

আমাদের নারী সমাজ

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের নারী সমাজের কাছে ৮ মার্চ মানে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সমমর্যদা অর্জন করা। আজ নারী সমাজের যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, আছে নির্যাতন, বৈষম্যমূলক আচরণ, অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, যন্ত্রণা ও বেদনার করুণ কাহিনী। সময়টি ছিল ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ। নিউইয়র্কের একটি সুচ কারখানায় নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে ছিল সীমাহীন বৈষম্য। প্রথমত, নারী শ্রমিকদের মজুরি ছিল পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক। দ্বিতীয়ত, নারী শ্রমিকদের কাজের সময় ছিল পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে অনেক বেশি। তৃতীয়ত, নারী শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে কাজ করতে হতো ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ত। চতুর্থত, নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে কোনরকম সহানুভূতি প্রদর্শন করা তো দূরের কথা, চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেয়া হতো। তখন নারী শ্রমিকরা এক দিন রাস্তায় মিছিল করে। এই মিছিল তদানীন্তন সরকার তাদের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ৫০ বছর পরে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক নারী সংগঠন একটি নারী সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে নেতৃত্ব প্রদান করেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন। আমেরিকার নারী সংগঠন চেষ্টা চালায়, বিশ্বের সব দেশের নারীরা যদি একসঙ্গে দাবির প্রশ্ন তুলতে সক্ষম হয় তাহলে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এই আন্দোলনে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির একজন স্থপতি হিসেবে ক্লারা জেটকিনের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে ১৭টি দেশের শতাধিক নারী নেত্রী অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন প্রস্তাব করেন যে, প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হোক। আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, ১৯১১ সাল থেকে নারীর সমঅধিকার হিসেবে দিনটি পালন করা হবে। ক্রমেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী সংগঠনগুলো নিজ নিজ দেশে সমাবেশ করতে শুরু করে। চীন, জাপান, সোভিয়েত রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সব দেশের নারী সংগঠন নারী অধিকারের জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে। সমাজতন্ত্রী নারী সংগঠনগুলো একই সঙ্গে কর্ম জগতে সমঅধিকার, ভোটের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, সমমজুরির অধিকার এবং যোগ্য সম্মানের দাবি করে। এভাবেই আন্দোলন চলতে থাকে। একপর্যায়ে আন্দোলনের নেতা ক্লারা জেটকিন ১৯৩০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ধীরে ধীরে মেয়েদের দাবির কিছু অংশ বাস্তবায়িত হতে থাকে। অবশেষে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ বিষয়টির গরুত্ব দেয় এবং জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পৃথিবীর সব দেশে পালন করা হয়। প্রতি ১০ বছর পর পর বিশ্বের সব নারী নেত্রীকে নিয়ে সম্মেলন হয়ে থাকে। যারা এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে নারীদের জন্য চলার পথটি সুগম করেছেন, তাঁরা আজ কেউ বেঁচে নেই। বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রপথিক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জ্বালানো প্রদীপের আলোর শিখা নিয়ে বর্তমানে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও নারী-পুরুষের মাঝে অনেক বৈষম্য বিরাজমান। বাংলাদেশের নারীরাও চাকরি করে, রোজগার করে সংসারের অর্থনৈতিক কাজে ব্যয় করে। কারণ গৃহর্মীরা এখন গার্মেন্টসে কাজ করে বেশি অর্থ রোজগার করে। নারী দিবসে আমাদের দেশের অবহেলিত নারী সমাজ তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে- এমন প্রত্যশা সবার।
×