ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোলটেবিল আলোচনা

জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ৮ মার্চ ২০১৫

জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় ব্যবস্থা বর্তমান সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এ ব্যবস্থায় ভোট জালিয়াতি প্রায় অসম্ভব। আর এ ব্যবস্থা চালু হলে তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভাজন কমিয়ে আনবে, যা প্রশাসনকে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি থেকে বের করে নিয়ে আসবে। ‘গণতন্ত্রের পুনঃচিন্তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলন কক্ষে পিআরআই এবং ইন্টারন্যাশনাল পলিটেকনিক্যাল সায়েন্স এ্যাসোসিয়েশন (আইপিএসএ) ‘রিথিংকিং ডেমোক্রাটাইজেশন : কনসেনসাস বিল্ডিং ফর রেজাল্ট’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়রাম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সিপিডির অনারারি ফেলো ড. রওনক জাহান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান, অধ্যাপক আতাউর রহমান, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুরসহ অন্যরা। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপিএসএর চেয়রাম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান খান। গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করা কঠিন। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় যে কোন লোক ১০ বা ৫ ভোটও যদি এগিয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচিত হয়ে যায়। ফলে এখানে সূক্ষ্ম, স্থুল বহুরকম কারচুপি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে ৯ কোটি ভোটের মধ্যে ১ শতাংশ ভোট জালিয়াতি করা মানে ৯ লাখ ভোট জালিয়াতি করা। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে দলগুলোর মধ্যে যে রাজনৈতিক বিভাজন বর্তমানে রয়েছে তার ফলে একে অপরের সঙ্গে দেখা করে না এবং সৌজন্যতাবোধ নেই। ফলে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা আনা হলে নিজ স্বার্থেই একে অপরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবে। দুই দলের ভোটের হিসাব বিবেচনা করলে কেউই ৫১ শতাংশ ভোট পাবে না। ফলে এখানে ঐকমত্যের সরকার গঠন করার সম্ভাবনা বেশি। ফলে দুই দলের দূরত্ব কমে আসবে। আর এক্ষেত্রে প্রসাশনকে যদি বিরাজনীতিকরণ করতে হয়, তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। এছাড়া সংসদে নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষের বিষয়ে মত আসে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, এক্ষেত্রে নিম্নকক্ষ বর্তমান যে প্রক্রিয়া রয়েছে তার মতোই হবে। আর উচ্চকক্ষ সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে হবে। আলোচনায় ড. আকবর আলি খান বলেন, এই মুহূর্তে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের জন্য দুইপক্ষ থেকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যে এক পক্ষ কিছু করলে আরেক পক্ষ কিছু বলবে। এটা যদি করা যায়, তবে আলোচনা সম্ভব। অন্যথায় কোন আলোচনা হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে হবে। এ বিষয়ে জোর দেয়ার কারণ হলোÑ বাংলাদেশে যে সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক না কেন সেটা অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। তার কারণ হলো নির্বাচন সংঘটিত হয় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। তবে আরও কয়েক লাখ সরকারী কর্মচারী এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আর এ কয়েক লাখ সরকারী কর্মচারীর মধ্যে রাজনীতি এমনভাবে ঢুকে গেছে, তা দিয়ে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করা কষ্টকর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ফরাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে সব পরিবর্তন করা যাবে না। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থায় যা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে। সাংবিধানিক পদে নিয়োগে পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দিতে হবে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন মানেই পূর্ণ গণতন্ত্র নয়। এটি গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম স্তর। গণতন্ত্রের আরও স্তর রয়েছে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে যেমন- নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন সেগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া নিতে হবে। এ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন লক্ষ্য এবং কৌশল প্রায় একই। তবে দুটি দলই নির্বাচন প্রক্রিয়ার শিকার। অসাংবিধানিক সরকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করানো হলে তা পক্ষপাতিত্বমূলক এবং অনাস্থার জন্ম দেয়। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ’৭০ সালের নির্বাচনের সময় ইয়াহিয়া খানকে তৎকালীন গেয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য দিয়েছিল যে, নির্বাচন হলে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে বিজয়ী হবে না। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াহিয়া খান নির্বাচন দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাস করল, তখন ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে গণহত্যার পথ বেছে নিলেন। এ ঘটনা শেখ হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি হয়ত উৎসাহিত করেছিল যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর হলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ক্ষমতাসীন দল গড়িমসি করবে। তাই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
×