ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১০ মার্চ ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

ঢাকার দিন আর রাতের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। রাতে রীতিমতো শীত লাগতে শুরু করেছে। সচল সিলিং ফ্যানগুলো ফের বন্ধ। ফাল্গুন এসেছে বলে যারা কম্বল-কাঁথা সব দেরাজে তোলার তোড়জোড় করেছিলেন, তাঁরা আবার সেসব শয্যাপাশে ফিরিয়ে আনছেন। গত সপ্তাহে রাতে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বনিম্ন পনের ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল পর পর ক’দিন। আর দিনের বেলা ঊনত্রিশ ছুঁই ছুঁই- দস্তুরমতো প্যাঁচপেঁচে গরম। আর সে কী রোদ! সূর্য আগুনের গোলা ছুড়ে দিচ্ছে মুহুর্মুহু। এই যে দিন আর রাতের তাপমাত্রার এমন বেজায় ফারাক চলেছে তাতে বিপদে পড়েছে মূলত শিশু ও অল্পবয়সীরাই। খুদে শরীর এই বিষম ওঠানামার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি ঠিকমতো। ফলে সর্দি ও জ্বরজারি উটকো অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছে রাজধানীর বহু ঘরে। তারপরও সময়টা যে ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের ছটা এসে লাগছে অনেকের চোখমুখে, বিশেষ করে মনের নিভৃত কোণে। সময় করে কেউ যদি প্রায় বিরান বৃক্ষের এই মহানগরীর গাছপালায় চোখ রাখেন তাহলে বিপরীতমুখী সৌন্দর্য দৃষ্টিকে খানিকটা আচ্ছন্ন করে তুলবে। ঢাকার উত্তর প্রান্তে বিমানবন্দর সড়কের পাশে পাতাশূন্য দীর্ঘদেহী গাছগুলোর দিকে তাকালে মন উদাস হয়ে যাওয়ারই কথা। পাতা ঝরে পড়া শুরু হয়ে গেছে। আবার প্রকৃতিপ্রেমীদের অনুসন্ধান চলছে বসন্তের পুষ্পপল্লব শোভার। আমাদের কবিবন্ধু সুফি সাধক সৈয়দ তারিক এই বসন্তে চষে বেড়াচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান। তিনি আমাদের জানাচ্ছেন- এই ঋতুতে শিরীষ গাছের পত্রবিরল শাখায় রাশি রাশি স্বর্ণাভ শুকনো ফল বিচিত্র এক দৃশ্যের অবতারণা করেছে। আর মেহগনি গাছভর্তি ফল পেকে ফেটে পড়তে শুরু করেছে। এর থেকে বেরিয়ে আসে প্রপেলারের মতো আকৃতির আবরণে ঢাকা বীজ। ফাগুন-পূর্ণিমার ভিন্ন মাহাত্ম রয়েছে প্রেমিকজুটির হৃদয়ে। রবিঠাকুরের সেই বিখ্যাত গানের কথা অবধারিতভাবে মনে পড়ে যায়- আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে/ বসন্তের এই মাতাল সমীরণে...। ফাগুন-পূর্ণিমাকে দোল পূর্ণিমা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রা উপলক্ষে সেদিন সকাল থেকে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মেলাঙ্গনে দোল উৎসব ও কীর্তন শুরু হয়ে যায়। সেখানে তো বটেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও দিনব্যাপী চলে উৎসব। অনেকে এই দোল উৎসবকে হোলি উৎসবও বলে থাকেন। রঙের খেলায় মেতে ওঠে তরুণ-তরুণীরা। আবির রাঙা তরুণীদের ছবি যথানিয়মে জায়গা করে নেয় খবরের কাগজের পাতায়। নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও এখন অন্য ধর্মের লোকেরাও হোলিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এখন এরকম একটি কথা বেশ চালু হয়ে গেছে তারুণ্যের মেলায়। এবার হোলির রঙের সঙ্গে যেন ঢাকার কোন কোন এলাকায় মিশে গিয়েছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়ার জয়ের আনন্দের রঙও। ৩০০ রান তাড়া করে জেতার ইতিহাস তো বাংলাদেশের ছিল না। তাই এবারের জয়ের উৎসবটাও ছিল সীমাহীন। সত্যি হরতাল-অবরোধ আর পেট্রোল বোমার রক্তচক্ষুর ভেতর বৃহস্পতিবারটা ছিল রঙ ছড়ানো একটা আনন্দের দিন। বৃহস্পতি সেদিন তুঙ্গেই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। অভিজিত হত্যা, এফবিআই মুক্তমনা লেখক অভিজিত হত্যার স্বল্পতম সময়ের ভেতর মারাত্মকভাবে আহত তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে আমেরিকায়। অভিজিত হত্যাকা-ে বাংলাদেশ সরকারকে অধিকতর সহায়তা প্রদানে এরই মধ্যে এফবিআইয়ের সদস্যরা ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা ঘটনাস্থলটি পরিদর্শন করেছেন। প্রতিদিনই ঢাকায় কোনো না কোনো সংগঠনের পক্ষে অভিজিত হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করা হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার পাশাপাশি ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিজিত স্মরণে বহুকৌণিক রচনা প্রকাশিত হয়ে চলেছে। অভিজিত রায়ের স্মরণে সাত দিনের প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচী পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ। অভিজিত যেখানে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন, সেই চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বলনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। একাধিক সন্ধ্যায় অভিজিত স্মরণে প্রজন্ম চত্বর থেকে অভিজিত চত্বর পর্যন্ত আলোর মিছিল এবং মিছিল শেষে আলোক প্রজ্বলন করা হয়েছে। এছাড়া অভিজিতকে যে স্থানটিতে হত্যা করা হয়েছে সেখানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের পক্ষ থেকে একটি ‘মৌলবাদবিরোধী ম্যুরাল’ স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়। ‘অভিজিত রায়রা হারলে হারবে বাংলাদেশ’- এই স্লোগানের আলোকে ব্লগার ও লেখকদের প্রতিবাদ অব্যাহত আছে দেশজুড়ে। ফেসবুকে এক ব্লগার লিখেছেন- ‘ব্লগ লেখার জন্য ২০১৩ সালে জেলে যেতে হয়েছে সুব্রত শুভ, রাসেল পারভেজ আর মশিউর রহমানকে। ঘাতকের আক্রমণের শিকার হয়েছেন শামসুর রাহমান, সনৎ কুমার সাহা, আঘাত এসেছে এ দেশের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ওপর। ঘাতক হত্যা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউনুস আর অধ্যাপক তাহেরকে। হত্যা করেছে সর্বশেষ বাউলসাধক অধ্যাপক শফিউল আলমকে। তাই প্রশ্ন জাগে, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নেতা কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুল ওদুদ কিংবা আহমদ শরীফ, বেগম রোকেয়া আজ বেঁচে থাকলে তাঁদেরও কি একই পরিণতি হতো? পাকিস্তান-মনস্তত্ত্ব থেকে কতটা এগোলো দেশ তবে?’ সবাই ক্রিকেটবোদ্ধা! মৌচাক ঘিরে যেমন থাকে মৌমাছিরা, অনেকটা সেরকম যেন পথের পাশের টিভি সেটের শোরুমের বাইরে ঝাঁকবেঁধে থাকে পথচলতি ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। বিশেষ করে যেদিন বাংলাদেশের ম্যাচ থাকবে সেদিন ভিড়টা নজর কাড়ে সবার। দর্শকদের ভিড়ে ফুটপাথ উপচে ওঠে। আর হঠাৎ হঠাৎ খুশির শোরগোল শোনা যায়। এমন ভিড়ের ভেতর টাই পরা ভদ্দরনোক আর লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা মুটেমজুর দিব্যি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সারসের মতো গলা উঁচু করে খেলা দেখেন। কে কোন শ্রেণীর, কে খুলনার কে নোয়াখালীর তার হিসাব কেউ রাখেন না। সবার তখন একই পরিচয়- বাঙালী। বাংলাদেশী। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মাথাটা উঁচু হোক- এটাই সবার প্রত্যাশা। বাংলাদেশ দলের জয়ে সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েন আর পরাজয়ে হয়ে যান মাথা নিচু করা হতশ্রী-হতাশ। বাংলাদেশের খেলা চললে বাসের ভেতর দু-একজন পেয়েই যাবেন যারা কানে এয়ারফোন গুঁজে মোবাইল ফোনের রেডিওতে খেলার ধারাবিবরণী শোনেন। শুধু কি শোনেন? তিনিও সংক্ষিপ্ত ধারাবিবরণী দিয়ে চলেন আশপাশের যাত্রীদের। আর যদি সমবয়সী ক’জন ছাত্রবন্ধু একসঙ্গে জুটে যায় তাহলে তো কথাই নেই। তাদের বিশেষজ্ঞসুলভ আলোচনা থেকে আপনি কান সরাতে পারবেন না সহজে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার, ব্যক্তিগত তথ্য তাদের জানা! সেসব বিশ্লেষণও তাদের নখদর্পণে। পারফরম্যান্স নয়, চাচা-মামার জোরে কে চান্স পেয়েছে টিমে, কে কোন্ বলটা খেলতে গিয়ে ভেতরে ভেতরে কেঁপে ওঠে ভয়ে- এসব কথা তাদের যেন শেষ হতে চায় না। রসিকতায়ও কেউ কম যায় না। রুবেল-হ্যাপির নামটা এভাবে সেদিন কানে এলো। বোলার হলেও রুবেলের হাতে মার আছে। জয় তখনও সুনিশ্চিত হয়নি, খেলার এমন একটা পর্যায়ে কানে এয়ারফোনওয়ালা উচ্চারণ করল- ‘কে জানে খেলার শেষে রুবেল আমাদের হ্যাপিও করে দিতে পারে!’ রাজপথে সাতই মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার মাস মার্চের প্রতিটি দিনই স্মরণযোগ্য। তবে এর মধ্যে বিশেষ দুটি দিন হলো সাত এবং পঁচিশে মার্চ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) একাত্তরের সাতই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেন সেটি কেবল ঐতিহাসিক বিচারেই তাৎপর্যপূর্ণ নয়, বিশ্বের সর্বকালের সেরা ২৫টি ভাষণের মধ্যে তা আপনগুণে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সাতই মার্চে ঢাকার প্রধান প্রধান রাজপথই কেবল নয়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মাইকে এই ভাষণ শোনা যায়। এতগুলো বছর পরেও যখন এই ভাষণ শুনি তখন শিহরিত না হয়ে পারি না। শুনতে শুনতে বরাবরের মতো আমার দুটি প্রতিক্রিয়া হয়। ধারণা করি এমন প্রতিক্রিয়া আমার মতো লক্ষজনেরই। প্রথমত, বাঙালী হিসেবে পরম গৌরব বোধ হয়। যে মহান নেতাকে আমি কখনও চোখে দেখিনি, মানসপটে তাঁর পূর্ণাঙ্গ অবয়ব ভেসে ওঠে। স্পষ্ট যেন দেখতে পাই ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে তিনি বলছেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ দ্বিতীয়ত, চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। মনে পড়ে এই মানুষটিকেই এ দেশেরই কিছু নাগরিক নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করেছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিংবা যাদের জন্ম পঁচাত্তরের অব্যবহিত আগে কিংবা পরে- তারা কি এই ভাষণটির জন্য আবেগ বোধ করে? আজকের তরুণ প্রজন্ম যেন দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নির্দেশনা সংবলিত কবিতার মতো আবেদনময় ও হৃদয়স্পর্শী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণটির প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাত্র ২০-২৫ মিনিটের সুগ্রন্থিত ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমেই এটি করা সম্ভব। এতে ইতিহাস বিকৃতির থাবা থেকেও ভবিষ্যত সুরক্ষা পাবে বলে আশা করতে পারি। নগরপিতা হওয়ার দৌড়ে... তফসিল ঘোষণা না হলেও ঢাকার বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আমেজ। আগাম নির্বাচনী হাওয়ার সূচনা হিসেবে ইতোমধ্যে আগ্রহী মেয়র প্রার্থীরা ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে বিলবোর্ড ও ব্যানারে প্রচার শুরু করেছেন। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ দুই প্রান্তের নগরপিতার দৌড়ে একই দলের একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে ব্যবসায়ী আনিসুল হক এবং দক্ষিণে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকনকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও এর পর পরই নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ হাজী মো. সেলিমসহ আরও এক সাংসদের নামে পোস্টার দেখা যাচ্ছে। ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট থেকে শুরু করে পলাশী, আজিমপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ডেমরা, মুগদা ক্রসিং, বাসাবো, সবুজবাগ, খিলগাঁও, শাহবাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে, মৎস্য ভবন, শিক্ষা ভবন মোড়, মগবাজার ও মালিবাগ এলাকা সাঈদ খোকন ও হাজী সেলিমের বিলবোর্ড-ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বড় বড় বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না বাঙালী রাজনীতিবিদদের মানস। বিলবোর্ডে লেখা হয়েছে- জনগণই আমার শক্তি, উন্নয়নই আমার অঙ্গীকার/ বিশ্বাস একবার চলে গেলে তা ফিরে অর্জন করা সম্ভব না। আমি বিশ্বাসে বিশ্বাসী।/ আসুন সম্ভাবনার পথে চলি...। হরতালে ট্রাফিক জ্যাম গত মাসের মতো চলতি মাসেও প্রতি সপ্তাহে রবিবার থেকে ৭২ ঘণ্টা হরতাল আহ্বান করা হচ্ছে; পরে আবার তা দু’দিন বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টিও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সপ্তাহের প্রতিটি কর্মদিবসেই হরতাল! তবে কোথাও কোনো প্রভাব পড়ুক বা না পড়ুক এসএসসি পরীক্ষা এই পাঁচ দিন বন্ধ রয়েছে। পরিবর্তে শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা গ্রহণ চলছে। গত সপ্তাহে প্রথম লক্ষ্য করা গেল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারে হরতালের দিনে প্রচ- যানজট। অফিস আওয়ারে মহাখালী উড়াল সড়কের ওপর নিকট অতীতে শেষ কবে থেমে থাকা গাড়ির সারি দেখেছি মনে পড়ছে না। একই ভাবে রাত ১০টার পর নিউমার্কেট থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত প্রায় স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে যান চলাচলের ক্ষেত্রে। লাগাতার অবরোধ-হরতালের কর্মসূচী দেয়ার পর এমনটা খুব কমই দেখা যায়। অন্তত যানজটের বিচারে দিনে ও রাতে ঢাকা তার চিরাচরিত রূপই যেন ফিরে পেয়েছে। মঞ্চে রবীন্দ্রনাথ নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর-এর আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত নাট্যোৎসবে পর পর দু’দিন রবীন্দ্রসৃষ্টি ‘রক্তকরবী’ ও ‘শেষের কবিতা’ দেখে যথাক্রমে পশ্চিমবঙ্গ ও ঢাকার দুই নাট্যদলের রবীন্দ্র প্রযোজনা সম্পর্কে একটা ধারণা হলো। পশ্চিমবঙ্গের নাট্যদল পূর্ব-পশ্চিম-এর প্রযোজনা ‘রক্তকরবী’। নন্দিনী চরিত্রটি এ নাটকের প্রাণভোমরা। তাই এই চরিত্রে রূপদানকারীর ওপর মঞ্চনাটকটির সফলতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। ঢাকার টিভি-মঞ্চে দিলশাদ খানম থেকে শুরু করে অপি করিম পর্যন্ত অভিনয়শিল্পীরা চরিত্রটি যত রাবীন্দ্রিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ততটা পেরেছেন বলে আমার তো মনে হলো না। শিল্পীর শারীরিক উচ্চতা যেমন একটা ফ্যাক্টর, তেমনি সংলাপ প্রক্ষেপণে, বাচনে চরিত্রানুগ থাকা একটা চ্যালেঞ্জ বটে। অন্যদিকে আয়োজক নাট্যদলের পরিবেশনা ‘শেষের কবিতা’ দেখে মনে হলো দলটিতে দক্ষ অভিনয়শিল্পীর সঙ্কট তীব্র। একজন অভিনয়শিল্পীর ওপরই তাদের ভরসা করতে হয়েছে। দলের প্রধান অভিনয়শিল্পী লাবণ্য ও কেতকী উভয় চরিত্র চিত্রন করেন, ফলে আংশিকভাবে লাবণ্য চরিত্রের জন্য অপর এক নবিস নৃত্যশিল্পীকে কাস্ট করতে হয়েছে। বেশ গোলমেলে ব্যাপার। উপন্যাস থেকে নাট্যরূপদান এবং মঞ্চে তার প্রয়োগ ঘটাতে গিয়ে যথাযথ রবীন্দ্রসুধা পরিবেশনের পরিবর্তে বরং প্রধান হয়ে উঠেছে গড়পড়তা সাধারণ মানের দর্শকদের সুলভ বিনোদন দেয়ার ব্যাপারটি। প্রেমের ক্ল্যাসিক উপন্যাসের নাট্যরূপায়ণে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। শব্দশিল্পীর মৃত্যু এই তো সেদিন বইমেলায় দূর থেকে ডাক দিয়ে দ্রুত হেঁটে এসে সদ্যপ্রকাশিত ‘জয় বাংলা ও অন্যান্য গল্প’ উপহার দিলেন কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর। আর মার্চের ৭ তারিখে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে! মাত্র পেরিয়েছিলেন পঞ্চাশের দরজা। শব্দশিল্পীর অকালমৃত্যু দেশের কথাশিল্পাঙ্গনের মানুষগুলোকে বিমূঢ় করে দিয়েছে। রীতিমতো সিরিয়াস সাহিত্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। শুধু গল্প-উপন্যাস লিখতেন না, সেসব নিয়ে আলোচনা করতেন। আড্ডায়-আলোচনায়, লিখিত আলোচনায় বার বার আলোকিত হয়েছে দেশীয় কথাসাহিত্য। ‘কথা’ নামে কথাসাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এরকম একজন নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যপ্রেমীর চলে যাওয়াটা আমাদের ক্ষুদ্র প্রায় নিস্তরঙ্গ সাহিত্যসভাকে আরও একটু প্রাণহীন করে তোলে। ইত্তেফাকে কর্মরত অনুজপ্রতিম লেখক মাইনুল শাহিদ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে : ‘তাঁর মৃত্যু সংবাদে একটা হতাশা ঘিরে ধরেছে আমাকে। গত কয়েক বছরে সাহিত্য সম্পাদনা করতে গিয়ে যে কজন মানুষ তাঁর গুণে ও লেখালেখিতে আমাকে মুগ্ধ রেখেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। সত্যিকারের ভদ্রলোক ছিলেন তিনি। দেখা হলেই অমায়িক হাসি দিতেন, যে হাসি কেবল আপনজনের সঙ্গেই বিনিময় হয়। আন্তরিকতা ছিল অশেষ। একজন অত্যন্ত বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন তিনি। সৃষ্টিশীলতায় তিনি আপন মেধা ও মনন সংযোগে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন তাতে বাংলা ভাষা-সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হতো নিঃসন্দেহে। তাঁর প্রয়াণে আমরা হারিয়েছি শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, বাংলা ভাষাভাষীর ভবিষ্যত নির্মাণের একজন একনিষ্ঠ নিবিড় যোদ্ধাকেও।’ ৮ মার্চ ২০১৫ [email protected]
×