ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপক্ষ ত্যাগ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও রণাঙ্গনে বিপর্যয়

আইএসের শক্তি ফুরিয়ে আসছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১০ মার্চ ২০১৫

আইএসের শক্তি ফুরিয়ে আসছে

ইসলামিক স্টেট ভেতর থেকেই ক্ষয়ে পড়তে শুরু করেছে বলে মনে হয়। জঙ্গী দলটি এর বিদেশী ও স্থানীয় সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে কঠিন সমস্যায় পড়েছে। কোন্দল, স্বপক্ষত্যাগ এবং রণাঙ্গনে বিপর্যয় দলটির প্রাণশক্তি নিঃশেষ করে নিচ্ছে এবং দলটি অজেয় এমন ধারণা এর স্বেচ্ছাচারী শাসনাধীনে বসবাসরত মানুষের মন থেকে ক্রিমশ বিলীন করে দিচ্ছে। বিদেশী ও স্থানীয় যোদ্ধাদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়া, রণাঙ্গনে শত্রুর মোকাবেলা করতে স্থানীয় নাগরিকদের রিক্রুট করার চেষ্টায় ক্রমশ ব্যর্থ হওয়া এবং ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের ওপর গেরিলা হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে মনে হয়, জঙ্গীরা এক কল্পিত ইসলামিক রাষ্ট্রে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করছে এমন এক ভীতিকর বাহিনী হিসেবে তাদের সযতেœ গড়ে তোলা ভাবমূর্তি বজায় রাখতে কঠিন অবস্থায় পড়েছে। আইএস সুন্নী অধ্যুষিত পূর্ব সিরিয়া ও পশ্চিম ইরাকের ওপর এর আধিপত্য নিয়ে কোন অত্যাসন্ন হুমকির মুখে পড়েছে বলে প্রাপ্ত খবরাদি থেকে কোন আভাস পাওয়া যায় না। এসব ভূখণ্ড এ দলটির স্বঘোষিত খেলাফতের ভিত্তি। আইএসের টিকে থাকার সামর্থ্যরে প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি এর ভেতর থেকেই আসতে পারে। কারণ এর বড় বড় প্রতিশ্রুতি বাস্তব পরিস্থিতির বিপরীত। বৈরুতের কার্নেগি মিডলইস্ট সেন্টারের ডিরেক্টর লিনা খাতিন একথা বলেন। তিনি বলেন, ঠিক এখন আইএস যে প্রধান সমস্যার সম্মুখীন, তা যতখানি না বাহ্যিক, তার চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ। আমরা মূলত আইএসের মতবাদের মূলনীতির এক ব্যর্থতা দেখছি। খেলাফতের আওতায় বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই এ নীতির লক্ষ্য। এটি বাস্তবে কাজ করছে না। এতে আইএস শাসন করা এবং সামরিক তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে তেমন কার্যকরতার পরিচয় দিতে পারছে না। বিদেশী ও স্থানীয় যোদ্ধাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধই সবচেয়ে লক্ষণীয়। বিদেশীদের বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধাসহ স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বিদেশী যোদ্ধারা শহরে বাস করার সুযোগ পায়। সেখানে বেসামরিক লোকজন হতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় কোয়ালিশন বাহিনীর বিমান হামলার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত খুবই কম। আর সিরীয় যোদ্ধাদের গ্রামাঞ্চলের ফাঁড়িগুলোতে কাজ করতে বাধ্য করা হয় অথচ সেগুলো হামলার মুখে বেশি অরক্ষিত। আইএস বিরোধী এক কর্মী একথা জানান। তিনি ইরাক সংলগ্ন সিরীয় সীমান্ত শহর আবু কামালে বাস করেন। কিছু কিছু বিদেশী জিহাদী ক্রমশ মোহমুক্ত হওয়ারও আভাস দেখা যাচ্ছে। সিরিয়ার দেইর আল জুর ও রাকা প্রদেশগুলোতে বিদেশীরা সীমান্ত পেরিয়ে তুরস্কে পালিয়ে যেতে স্থানীয়দের সহায়তা চায় এমন কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে আইএস বিরোধী কর্মীরা গত মাসে রাকার তাকবা শহরে ৩০-৪০ ব্যক্তির মৃতদের পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের অনেকেই এশীয় বলে মনে হয়। সেগুলো এমন একদল জিহাদী যোদ্ধার দেহাবশেষ বলে মনে করা হয়, যারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ধরা পড়েছিল। আইএসের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে থাকে এমন একটি গ্রুপ একথা জানায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আইএসের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ঢোকা ও সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে লোকজনকে পারাপার করতে ট্রাক চালকদের নিষেধ করা হয়েছে। ওই গ্রুপটি একথা জানায়। সম্প্রতি আইএসের প্রায় ১২০ জন নিজস্ব সদস্যের মৃত্যুদ- প্রকাশ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলে ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটোরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়। একই সময়ে আইএস উত্তর সিরিয়া ও ইরাকে প্রতিপক্ষের কাছে ভূখণ্ড হারাচ্ছে। এতে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, দলটি গত গ্রীষ্মে ইরাক ও সিরিয়াতে বিরাট বিজয় অর্জন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেও এখন কেবল আত্মরক্ষামূলক অবস্থানই নিয়েছে; উপরন্তু জঙ্গীরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ একাধিক বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার কৌশলও সহজে খুঁজে পাচ্ছে না। -ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইন
×