ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবনে দস্যুদের উপদ্রবে বিপাকে বনজীবীরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১০ মার্চ ২০১৫

সুন্দরবনে দস্যুদের উপদ্রবে বিপাকে বনজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ সুন্দরবনে রাজস্ব বৃদ্ধি ও বনদস্যুদের চাঁদাবাজিতে বনজীবীরা বিপাকে পড়েছে। গোলপাতা আহরণে আগ্রহ হারাচ্ছে বাওয়ালরা। ফলে চলতি মৌসুমে বনবিভাগের রাজস্ব আদায়ও কমে গেছে। এতে এক দিকে যেমন বনবিভাগ রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের উদ্ভিদ জাতীয় বনজ সম্পদ গোলপাতা। এ বনের অভ্যন্তরের নদী ও খালের পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে থাকে প্রচুর পরিমাণ গোলগাছ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার বাওয়ালী গোলপাতা আহরণ, পরিবহন ও বিক্রির কাজে জড়িত হয়ে থাকে। প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গোলপাতা আহরণ মৌসুম। গোলপাতা আহরণের সঙ্গে জড়িত বাওয়ালী ও ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার চলমান দুরাবস্থার জন্য বনদস্যুদের উৎপাত, বনবিভাগের কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণের কথাই বলছেন। বাওয়ালী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোলপাতার মণ প্রতি সরকারী রাজস্ব ৪ টাকার স্থলে বাড়িয়ে ২০০৯ সালে ১২ টাকা করা হয়। এছাড়া রয়েছে বনদস্যু বাহিনীগুলোর চাঁদবাজি, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা বিড়ম্বনা। এছাড়া গোলপাতার দামবৃদ্ধি ও টিনের দাম কম হওয়ায় বাওয়ালী ও ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। মংলার গোলপাতা আহরণকারী জাকির হোসেন জানান, এবছর কূপগুলোতে পাতার পরিমাণ খুব কম। এছাড়া অন্যান্য বছর গোলপাতার নৌকায় ঝুল (নৌকার ভারসাম্য রক্ষায় দু’পাশে ব্যবহৃত গাছ) হিসেবে বন থেকে কেটে নেয়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থেকেও তাদের বাড়তি আয় হতো। কিন্তু এবার তাও বন্ধ করে দিয়েছে বনবিভাগ, তাই আমাদের লোকসান হচ্ছে। শরণখোলার বাওয়ালী সবুর বলেন, চলতি গোলপাতা আহরণ মৌসুমে সুন্দরবনে ডাকাতের খুব চাপ। আমরা যা আয় করি তার অর্ধেকই ডাকাতদের দিতে হয়। তা না হলে আমাদের লোকজন ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে। এদিকে রামপালের বাওয়ালী আবুল হোসেন বলেন, আমরা ধার-দেনা করে নৌকা নিয়ে গোলপাতা কাটি এ দিয়ে আমাদের সংসার চলে। গোলপাতা না কাটলে পাতা নষ্ট হয়ে যায়। বাওয়ালীরা আরও বলেন, প্রতিবছর নিয়ম মাফিক গোলপাতা সংগ্রহ করলে গোল গাছের পরিচর্যা হয় ও এর পরিমাণও বেড়ে যায়। আর সময় মতো গোলপাতা কাটা ও সংগ্রহ করা না হলে পাতা নষ্ট হয়ে গোলপাতার বাগানে মড়ক ও ঝাড় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চলতি মৌসুমে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের ৩টি, পশ্চিম সুন্দরবনের নলিয়ান ও বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জের ৩টি কূপের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখ মণ গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সুন্দরবন বিভাগ। এবছর রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবনের ফরেস্ট রেঞ্জার ও চাঁদপাই স্টেশন অফিসার গাজী মতিয়ার রহমান। তিনি আরও জানান, বাওয়ালীরা এবার অনেক দেরি করে পাস নিয়েছে, এতে তাদের গোলপাতা সংগ্রহের পরিমাণ কম হবে। এ কারণে আমাদের রাজস্ব আদায়ও কম হবে। এছাড়া ডাকাতের উপদ্রব অনেক বেশি থাকায় বাওয়ালীরা আসতে ভয় পাচ্ছে। গোলপাতার কূপগুলোতে নিয়োজিত বনপ্রহরীদের কাছে কোন অস্ত্র নেই, তারপরও রয়েছে জনবল সংকট। সবকিছু মিলিয়ে নানা সমস্যার কারণে বাওয়ালরা গোলপাতা আহরণে আগ্রহ হারাচ্ছে।
×