ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১১ মার্চ ২০১৫

অস্ত্র উদ্ধার অভিযান

অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে। ওত পেতে আছে আততায়ী। বিস্ফোরক জড়ো করা হচ্ছে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। জঙ্গীবাদের ছায়ার নিচে যেন দাঁড়িয়ে আছে দেশ। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও সীতাকু-ের দুর্গম পাহাড়ে বিপুল অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারের ঘটনা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। রাজধানীতে তিন ছাত্রদল নেতার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিস্ফোরকভর্তি বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ৫৮টি ককটেল, একটি পাইপবোমা, ৪৮টি পেট্রোলবোমা, ৫০০ গ্রাম সালফার পাউডার এবং নাশকতার কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম। এ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পেলে ঘাতকরা কী ভয়ানক ক্ষতিসাধনই না করত! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটককৃত বোমাবাজদের বয়ানে বিস্মিত হয়েছেন। মৃত্যুর ধ্বংসাত্মক খেলায় তাদের পরিচয় পেয়ে হতবাক হতে হয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থাপনায় চলতি সপ্তাহেই অভিনব কৌশলে নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নেয় তারা। কিন্তু র‌্যাবের কাছে তা ধরা পড়ে। একটা সাইকেল যে কোন স্থানে বা প্রতিষ্ঠানে পার্কিং করা সম্ভব। তাতে কারও সন্দেহের উদ্রেক হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে তারা অস্বাভাবিক করে তুলতে চেয়েছিল চারপাশের পরিস্থিতি। সাইকেলের বিভিন্ন পাইপের ভেতরে কারিগরি কৌশলে বিস্ফোরকদ্রব্যাদি ঢোকানো হয়, যা ছিল গুপ্ত। ভয়ঙ্কর বিষয়টি হলো, সেই সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিলেই সেটা মুহূর্তেই বিকট শব্দে চারপাশে বড় ধরনের আতঙ্ক ছড়াত। চট্টগ্রামে, বিশেষ করে পাহাড়ী অঞ্চলে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নতুন নয়। বলা যায়, নিয়মিত বিরতি দিয়ে র‌্যাব পরিচালিত অভিযানে দফায় দফায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের ধারাবাহিকতায় হালিশহর এলাকায় র‌্যাব ১৫০ কেজি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক, ৭৬টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা, ২৪টি অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। আটক করা হয় তিন জঙ্গীকে। চট্টগ্রামে তিনটি জঙ্গী আস্তানার পর এবার দুর্গম পাহাড়ে ছাত্রশিবিরের একটি গোপন আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান নাশকতাই শুধু নয়, ভবিষ্যতে দেশকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর এবং একটি জঙ্গীরাষ্ট্রে পরিণত করার নীলনক্সা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সারাদেশেই অস্ত্র ও গোলাবারুদের এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, অস্ত্রবাজরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে, মানুষ মারার উপায় হিসেবে তারা নিত্যনতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটাচ্ছে। তাই আর নিয়মিত বিরতিতে রুটিন অভিযান নয়, প্রয়োজন সম্মিলিত বাহিনীর পরিচালনায় সমন্বিতভাবে বড় ধরনের অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। সারা দেশে জরুরী ভিত্তিতে চালাতে হবে এ ধরনের উদ্ধার অভিযান। একটি অভিযানে সাফল্য এলেই আত্মতুষ্টি নয়, বরং বাড়তি সতর্কতা নিয়ে নতুন করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জঙ্গীবাদের কাছে কোনক্রমেই নতিস্বীকার নয়, বরং জঙ্গীদের সকল অস্ত্রভা-ার খুঁজে বের করে নাশকতার আশঙ্কা নাশের মাধ্যমে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
×