ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এটা অনৈতিক!

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১১ মার্চ ২০১৫

এটা অনৈতিক!

যারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান বিতরণ করেন, উন্নয়ন ও সভ্যতার ভিত রচনা করেন, তারা শিক্ষক। মানুষের শিক্ষার আগ্রহকে উৎসাহিত করা এবং অনুপ্রেরণা দান করাই হচ্ছে শিক্ষকদের কাজ। এই পেশার অনুসারীরা সভ্যতা ও সমাজের অভিভাবক, সমাজের প্রতিনিধি। কার্যত শিক্ষক বলতে একজন আলোকিত, জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিকে বোঝায়। শিক্ষক শিক্ষার নিবেদিতপ্রাণ সেবক, ব্যবসায়ী নন। শিক্ষক তার আচার-আচরণ, মন ও মননে নিজেই বটবৃক্ষের ছায়ার মতো। তার সাফল্যের ভিত্তি হলো পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, নির্মল চারিত্রিক গুণাবলী, জ্ঞান সঞ্চারণে আন্তরিক সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা। তাই শিক্ষক বলতে এমন এক অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ববান জ্ঞানী, গুণী ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি শিক্ষার্থীকে শিখন প্রক্রিয়ায়, জ্ঞান অন্বেষণ ও আহরণ, মেধাবিকাশ ও উন্নয়ন, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠন, নৈতিক ও মানসিক গুণাবলী বিকাশে এবং শিক্ষিত সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কোন শিক্ষক যদি এই সব গুণ থেকে বিচ্যুত হন, আরও স্পষ্ট করে বললে কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি আর্থিক অনিয়ম বা অসততার অভিযোগ ওঠে তখন তা সত্যিই দুঃখজনক। তেমনই এক সংবাদ সোমবার শিরোনাম হয়েছে সহযোগী একটি দৈনিকে। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, অননুমোদিত ছুটি নিয়ে বিদেশে অবস্থান করায় বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত ৫২ শিক্ষক এখনও ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেননি। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় যেসব শিক্ষকের কাছে টাকা পায়, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগ করা এই শিক্ষকদের বার বার চিঠি দিয়ে তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করছেন না। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। সংবাদটি দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। শিক্ষকদের কাছে সমাজের প্রত্যাশা অনেক। মেধাবিকাশে, অজ্ঞতা দূরীকরণে, মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে, নৈতিকতার উন্নয়নে, উদ্ভাবনী কাজে, গবেষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে তৎপর থাকবেন শিক্ষক। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক নন, তিনি সমাজেরও শিক্ষক। বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষকদের জন্য একটি দিকনির্দেশনামূলক বিধি রয়েছে। দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে লিখিত বিধি-বিধানও চালু রয়েছে। চাকরির শর্তাবলী বা চাকরিবিধি নামে নির্ধারিত এসব আদেশ পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা উচিত। তা দায়িত্ব এবং কর্তব্যও বটে। তবুও অনেক শিক্ষক সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেন না, কর্তব্যের প্রতি নেই একাগ্রতা। তাই শিক্ষকতা এদের কাছে বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাতারে দাঁড়িয়েছে, যা খুবই লজ্জাকর। এটা রীতিমতো গর্হিত কাজ। শিক্ষকের নামে, শিক্ষকতা পেশার নামে এ সকল ব্যক্তি কেবল এই মহান পেশাটির ওপর কালিমালেপন করছেন, যা কখনও কাম্য হতে পারে না। এমন উদাহরণ যাতে আর কোথাও সৃষ্টি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি দেয়া দরকার। কারণ এটা নৈতিকতা বিরুদ্ধ।
×