ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেট পরাজিত করেছে রাজনীতির খেলাকে, জাগিয়েছে দেশাত্মবোধ

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১১ মার্চ ২০১৫

ক্রিকেট পরাজিত করেছে রাজনীতির খেলাকে, জাগিয়েছে দেশাত্মবোধ

মোরসালিন মিজান ॥ রাজনীতির খেলা চলছিল। ভয়ঙ্কর এক খেলা। গাড়িতে পেট্রোলবোমা ছোড়া হচ্ছিল। নিরীহ নির্দোষ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছিল প্রতিদিন। আন্দোলনের নামে চলছিল সহিংসতা। উগ্র মৌলবাদীদের বর্বর আক্রমণের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে এও তো সত্য, এই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের। এই বাংলাদেশ মাথা নোয়াবার নয়। হয়ত তাই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে বিপুল বিজয়ের খবর। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করেছে টাইগাররা। নিশ্চিত করেছে কোয়ার্টার ফায়নাল। কিক্রেটের এই জয়ে বাংলাদেশকে পেছন থেকে টেনে ধরা অপশক্তির মুখাগ্নি হয়েছে। দেশকে অশান্ত করার সকল চেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ। এখন বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা দেশ। আত্মবিশ্বাসী গোটা জাতি। প্রিয় এই খেলা পরাজিত করেছে রাজনীতির খেলাকে। জাগিয়ে তুলেছে দেশাত্মবোধ। বিজয়ী ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া, ভক্তদের লাল সবুজে উদ্যাপন সে কথাই বলছে। বলা বাহুল্য, এই দেশে বসবাসকারী কিছু মানুষের গান নেই। কবিতা নেই। এরা মুক্তমনা লেখককে রক্তাক্ত করে। নির্মমভাবে খুন করে। শহীদ মিনার ভাঙে। স্মৃতিসৌধে যায় না। এভাবে বাঙালীর যা কিছু গর্বের, এরা তুচ্ছ করে। তুচ্ছ করে এসেছে। ঠিক একইভাবে সোমবার এরা ক্রিকেট ভুলে ছিল। যখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়ছে টিম বাংলাদেশ, তখনও অব্যাহত রেখেছিল হরতাল অবরোধ। আগুন দেয়া ও ভাংচুরের খবর আসছিল যথারীতি। তবে বাংলাদেশে বিশ্বাসীরা বসেছিলেন টেলিভিশন সেটের সামনে। মাশরাফি বাহিনীর জন্য শুভ কামনা করে যাচ্ছিলেন। দিন শেষে সত্য হয় কোটি বাঙালীর স্বপ্ন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিপুল বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ। দেশের এমন বিজয়ে দেশবিরোধী রাজনীতি যেন মাঠে মারা যায়। মুখথুবড়ে পড়ে। খেলা শেষ হতে না হতেই অপশক্তি গর্তে মাথা লুকোয়। অন্যদিকে, বিপুল বিজয় নতুন করে জাগিয়ে তোলে দেশাত্মবোধ। শুরুটা করেছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। খেলা শেষে দেয়া প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলাদেশের বিজয়কে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করার কথা জানিয়েছিলেন। এমন কথা জেনে গোটা বাংলাদেশ একসঙ্গে ‘শাবাশ’ বলে উঠেছিল। নতুন করে অনুধাবন করেছিল, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গৌরব করতে শিখলে, অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে পারলেই কেবল বিজয় এত সহজে ধরা দেয়। অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। এভাবে ক্রিকেটের বিজয় একাত্তরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সোমবার বিজয় উদ্যাপনের সময় প্রিয় পতাকার লাল সবুজে সেজে এসেছিল বাঙালী। তথাকথিত হরতাল অবরোধ প্রত্যাখ্যান করে নেমে রাজপথে নেমে এসেছিল। বিকেল থেকেই রাজধানী শহরের অলি গলি থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। ছেলে বুড়ো নারী শিশু কেউ বাদ যায়নি। সবাই বিজয় মিছিলে অংশ নেন। নেচে গেয়ে উদ্যাপন করেন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া। গভীর রাত পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে ভেসে এসেছে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’। বুকের ভেতর থেকে উচ্চারিত হয়েছে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান। এ সময় কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। কেউ কপালে বেঁধেছিলেন লাল-সবুজ। সোমবারের মতো মঙ্গলবারও চেতনার রঙে সেজেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অদ্ভুত জাগরণ। আনন্দ হাসি রাশি তো ছিলই। সেইসঙ্গে দৃশ্যমান হয়েছে দেশাত্মবোধ। সর্বত্র উড়ছিল ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া জাতীয় পতাকা। গান নাচ পতাকা সবই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে উর্ধে তুলে ধরছিল। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বললেন, আমরা তো বীরের জাতি। নয় মাস যুদ্ধে লড়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের কে রুখবে? আর তাই বীভৎস রাজনীতির এ সময়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তানিয়া নামের অপর শিক্ষার্থীর বলাটি ছিল এরকমÑ মুক্তিযুদ্ধ ছিল ন্যায়ের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ী বাঙালীকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ক্রিকেট সে কথা আরও একবার প্রমাণ করেছে। মাঝবয়সী ব্যাংকার হাসান হাবিব বললেন, গত কয়েক মাস ধরে রাজনীতির নামে যা হচ্ছে তা এক কথায় অকল্পনীয়। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশটাকে পুড়ে যেন ছাই করে দিচ্ছিল। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের এমন বর্বর কর্মকা-ের নিন্দা হচ্ছিল। সেই নিন্দাকে প্রশংসায় পরিণত করেছে ক্রিকেট। বাঙালীর সাহস শক্তির উৎসমূল ১৯৭১ জানিয়ে তিনি বলেন, সেই বিজয়ের ইতিহাস মনে রাখা গেলে যত বাধাই আসুক এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বাঙালী এগিয়ে যাবে।
×