ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেডিও স্পেকট্রামের সুষ্ঠু ব্যবহার নেই ॥ ফোরজি প্রযুক্তি অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ মার্চ ২০১৫

রেডিও স্পেকট্রামের সুষ্ঠু ব্যবহার নেই ॥ ফোরজি প্রযুক্তি অনিশ্চিত

ফিরোজ মান্না ॥ হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ রেডিও স্পেকট্রাম বা ফ্রিকুয়েন্সির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। সাময়িক গাইডলাইন ও নির্দেশনার মাধ্যমে রেডিও স্পেকট্রাম বরাদ্দ দিচ্ছে বিটিআরসি। রেডিও স্পেকট্রামের জন্য স্থায়ী কোন স্পেকট্রাম নীতিমালা এখন পর্যন্ত বিটিআরসি করতে পারেনি। ফলে মূল্যবান এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না। এ কারণে ফোরজি সেবাসহ অন্যান্য অনেক সেবা দিতে পারছে না অপারেটররা। বিটিআরসির বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফোরজি নিলাম অনেক পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দপ্রাপ্ত স্পেকট্রামের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। রেডিও স্পেকট্রাম অপরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ দেয়ায় এখন বিটিআরসির হাতে স্পেকট্রামের ঘাটতি পড়েছে। স্পেকট্রাম ব্যবহারে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করায় সুযোগ থাকার পরেও ফোরজি প্রযুক্তি চালুও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিটিআরসি’র গাইডলাইনে ১৮০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করে ফোরজি চালুর বাস্তবতা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র টুজির জন্য এই ব্যান্ড ব্যবহারের শর্ত দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহাটর্জে স্পেকট্রাম নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্টজের বেশি বরাদ্দ থাকার কারণে চলতি নিলামের গাইডলাইনের শর্ত অনুযায়ী গ্রামীণফোন প্রথম ধাপে নিলাম থেকে বাদ পড়েছে। এদিকে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কক্ষপথ ভাড়ার চুক্তি অনুষ্ঠান শেষে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে থ্রিজির জন্য ২১০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলাম করা হবে। তার আগে সবার সঙ্গে কথা বলে গাইডলাইন তৈরি করা হবে। আসলে কোন অপারেটর বা টেলিযোগাযোগ সেক্টরের কারও সঙ্গে কথা না বলেই খসড়া গাইডলাইন তৈরি করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ফোরজির ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলামের পরিকল্পনা রয়েছে। ২১০০ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম ফোরজির গাইডলাইনে রাখা হয়নি বলে জানা গেছে। স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রযুক্তিবিদরা বলেন, বিটিআরসিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেতে বাধ্য করার পর থেকে বিটিআরসির ভেতরে এক ধরনের অরাজকতা চলছে, যা কিনা প্রতিষ্ঠানের জন্য শুভকর কোন কিছু বয়ে আনবে না। স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও টেলিকম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন কাউকেও কোন সভায় ডাকা হয় না। এতে মহামূল্যবান স্পেকট্রামের সুষ্ঠু ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে টেলিকম শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিদেশী বিনিয়োগও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি সর্বশেষ স্পেকট্রাম বরাদ্দের চিত্র অনুযায়ী বর্তমানে পাঁচটি জিএসএম মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণ ফোনের জন্য ৯০০, ১৮০০ এবং ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে মোট ৩২ মেগাহার্টজ, বাংলালিংক ২০ মেগাহাটর্জ, রবি’র ১৯ দশমিক ৮ মেগাহার্টজ, এয়ারটেলের ২০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ রয়েছে। এই পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটরের জন্য মোট বরাদ্দের বিবেচনায় গ্রামীণফোনের স্পেকট্রাম শেয়ার ২৭ শতাংশ, বাংলালিংকের ১৭ শতাংশ, রবি’র ১৭ শতাংশ, এয়ারটেলের ১৭ শতাংশ এবং টেলিটকের ২২ শতাংশ।
×