ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘গায়েবি’ সালাহউদ্দিন অন্তর্ধান রহস্য কি সাজানো নাটক!

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ মার্চ ২০১৫

‘গায়েবি’ সালাহউদ্দিন অন্তর্ধান রহস্য কি সাজানো নাটক!

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ অজ্ঞাত স্থান থেকে দীর্ঘদিন ধরে ‘গায়েবি বিবৃতি’ দিয়ে অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমার নাশকতার উস্কানিদাতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদের রহস্যজনক অন্তর্ধান অবস্থা থেকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এদিকে আল কায়েদা স্টাইলে নাশকতার উস্কানিমূলক বিবৃতিদাতা সালাহউদ্দিন নিখোঁজের বিষয়টি, তিনি কোথায় আছেন, তাঁকে কেউ ধরে নিয়ে গেছেন কিনা, সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে বলে বুধবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান। ‘আমার স্বামী দুই দিন ধরে নিখোঁজ, থানায় জিডি নেয়া হলো না, স্বামীকে ফেরত চাই- ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে এ কথা বলেছেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়নিÑ বলেছেন পুলিশের আইজি শহীদুল হক। এতদিন ধরে আল কায়েদা স্টাইলে যে সালাহউদ্দিন অজ্ঞাত স্থান থেকে গায়েবি বিবৃতি দিয়ে নাশকতার উস্কানি দেয়ার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোস্টওয়ান্টেড, হঠাৎ করেই তার রহস্যজনক অন্তর্ধান ঘটনাটি সাজানো নাটক কিনা তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের উর্ধতন কর্মকতা জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া নিজেও আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামি। যে কোন সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন তিনি। আদাললতের নির্দেশে অনুযায়ী যে কোন দিন তল্লাশি চালানো হতে পারে তার গুলশানের কার্যালয়। গ্রেফতার হতে পারেন বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নেয়া নাশকতা মামলার আসামিরা। মামলা মোকদ্দমায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা-কর্মীরা। অবরোধ-হরতালের আন্দোলনের মাঠে নেই তারা। অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা চালিয়েও চাঙ্গা করা যাচ্ছে না আন্দোলন। বিএনপি-জামায়াত জোট এখন ডুবন্ত জাহাজের সঙ্গে তুলনীয়। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য সালাহউদ্দিনকে বলির পাঁঠা বানিয়ে নাটক সাজানো হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশে আগামী রবিবারের মধ্যে সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করার জন্য তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। এই অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত জোটের কোন মহল থেকে তাঁকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে মানুষজনকে পুড়িয়ে মারার নাশকতার জন্য অজ্ঞাতস্থান থেকে বিবৃতি দিয়ে উস্কানি দিয়ে আসছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ। অজ্ঞাত স্থান থেকে নাশকতার উস্কানি দেয়ায় অভিযুক্ত এই ব্যক্তি কোথায় আছেন তার সন্ধান করে তাকে গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা আন্দোলনের নামে নাশকতা চালানোর ঘটনার পর থেকেই জনসমক্ষে দেখা যায়নি তাকে। তিনি তো নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন? এখন আবার তিনি কোথায় অন্তর্ধান হয়েছেন? নিজেই অন্তর্ধান হয়ে নাটক সাজানো হয়েছে কিনা? কারণ অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোল বোমার আগুনে মানুষজনকে পুড়িয়ে মারার কারণে জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আন্দোলনের নামে নাশকতার ঘটনাও ভাটা পড়েছে। খোদ রাজধানীতেই বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মী পরিচয় দেয়া কোন লোককে রাস্তায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় যারা মাঠে ছিল তার এখন মাঠছাড়া। অবরোধ-হরতাল নামক আন্দোলন এখন ডুবন্ত জাহাজ আর বিএনপি-জামায়াত জোট হচ্ছে ডুবন্ত জাহাজের ডুবুরি। বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে কোন সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট এর আগে তাদের অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতার আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছে। ভারতের বিজেপি প্রধান অমিত শাহর সঙ্গে ফোনালাপ না করেই ফোনালাপ হয়েছে বলে কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নিউইয়র্কে অবস্থারত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা, ‘সেনা বিদ্রোহের উস্কানি’ ইত্যাদি ফাঁস হয়েছে। এখন আবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদকে দিয়ে অন্তর্ধান বা নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে কোন কেলেঙ্কারির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। হাইকোর্টের নির্দেশ ॥ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে রবিবারের মধ্যে খুঁজে বের করতে এবং আদালতে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিকেলে সালাউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের দায়ের করা এক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আগামী রবিবারের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, র‌্যাবের মহাপরিদর্শক, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (এসবি), পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (সিআইডি), ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে হাসিনা আহমেদ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে একটি ফৌজদারি আবেদন করেন। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা রুল দিতে আদালতে চাপাচাপি করেন। পরে আদালত রুল জারি করেন। যদি তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদকে আদালতে হাজির করতে হবে বলেও তিনি জানান। যা বলেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ॥ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক বা গ্রেফতার করেনি। বৃহস্পতিবার মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওনাকে (সালাহউদ্দিন) গ্রেফতার করেনি। যদি গ্রেফতার করত তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করত। বিষয়টি স্পষ্ট না। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুযায়ী সব কিছু করা হবে।’ সালাহউদ্দিনের স্ত্রীর বক্তব্য ॥ আদেশের পর ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আজ দু’দিন হয়েছে আমার স্বামীর কোন হদিস নাই। আমরা যখন থানায় জিডি করতে গেলাম আমার জিডি নেয়া হয়নি। জাতির কাছে এতটুকুই চাওয়া, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফেরত দেয়া হোক। আমার শুধু এতটুকুই চাওয়া। তিনি বলেন, একটি মানুষকে তুলে নিয়ে যাবে, আর তার কোন হদিস থাকবে না, সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করবে যে, তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নাই। তারা না নিয়ে গেলে কে নিয়ে গেল? দেশে থেকে মানুষকে এভাবে তুলে নিয়ে যাবে, আর কেউ কিছু বলবে না, আর আমরা থানায় থানায় ঘুরব, কোন প্রতিকার পাব না। আমরা কোন দেশে বসবাস করছি? হাসিনা আহমেদ বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি আর কিছু দেশবাসীকে জানাতে চাই, গত শনিবার রাত পৌনে তিনটা থেকে চারটার দিকে আমার বাড়ির দুই ড্রাইভার, আমার স্বামীর ব্যক্তিগত সহকারীকে যার যার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। দুইদিন তাদের পরিবারবর্গ তাদের কোন খোঁজ জানতে পারেনি। তাদের অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে। তিন দিন পর তাদের গুলশান থানায় দিয়ে আসে। তাদের বোমা বিস্ফোরণের মামলায় দিয়েছে। এখন তারা তিন দিনের রিমান্ডে আছে। তিনি আরও বলেন, এই গরিব মানুষ যারা আমার কাছে পেটের দায়ে চাকরি করতে এসেছে, তাদের কি দোষ? তাদের মামলা মোকাদ্দমায় ঢুকিয়ে দেয়া হলো। আমি দেশবাসীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, আমার স্বামীকে যেন সহি-সালামতে আমার কাছে ফেরত দেয়া হয়, যেভাবে অক্ষত অবস্থায় তুলে নেয়া হয়েছে, সেভাবে যেন ফেরত দেয়া হয়। আদালতের কাছে হাজির করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ নাই, পার্টির কারও সঙ্গে যোগাযোগ নাই। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নাই, এটাতো হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আমরা শিওর, বাসার দারোয়ানকে ওনারা ডিবির কার্ড দেখিয়েছে, আমরা ডিবি লোক। ছয় গাড়ি লোক গিয়ে চোখ বেঁধে হাত বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। সর্বশেষ যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, ওনারা বাসায় দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করতেছিল, তখনই উনি আমাকে ফোন করে জানানোর চেষ্টা করেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমি তখন বুঝতে পারিনি। আমার আবার চেষ্টা করতে থাকি। না পেরে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি, যদি পাই কি-না।
×