ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা দুই সেঞ্চুরিতে মাহমুদুল্লাহর অনন্য ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৪ মার্চ ২০১৫

টানা দুই সেঞ্চুরিতে মাহমুদুল্লাহর অনন্য ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রিকেটে ভাগ্য বিধাতার আশীর্বাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেশ ছাড়ার আগে তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহীমের মতো বড় তারকারা বলেছিলেন, চার-চারটি বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গেল অথচ সেঞ্চুরি নেই বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের, ১১তম আসরে এবার সেই আক্ষেপ ঘোচাতে চান তাঁরা। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত পারফর্মার, তামিম-সাকিবদের মুখেই তা মানায়। ইংল্যান্ড বধে আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাসে নাম লেখান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, কাল সেটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তিনি। যেখানে নিদেন এক সেঞ্চুরির হাহাকার, সেখানে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরির অনন্য নজির গড়লেন মাহমুদুল্লাহ। হ্যামিলটনে খেললেন অপরাজিত ১২৮ রানে দুরন্ত ইনিংস, ক্রিকেট-বিধাতা যেন নিচে নেমে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন! মাহমুদুল্লাহ আজ তাই বিশ্বকাপ-সেঞ্চুরিয়ান, টানা দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান, টাইগার ক্রিকেটের অনন্য নাম। বিশ্বকাপে প্রথম হলেও ওয়ানডেতে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ সেঞ্চুরির রেকর্ড এটি। ২০০৬ সালে জিম্বাবুইরে বিপক্ষে পর পর দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফিস। ওই বছর ১৩ অক্টোবর নাগপুরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে ১২৩* ও ৩০ নবেম্বর খুলনায় ১০৫* রান করেছিলেন দলের বাইরে থাকা এই ওপেনার। একটি টুর্নামেন্টে, অন্যটি দিপক্ষীয় সিরিজেÑ বিশ্বকাপের সঙ্গে কী আর তার তুলনা চলে? বিশ্বকাপ বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ, যেখানে প্রতিনিধিত্ব করাই একজন ক্রিকেটারের আজীবনের স্বপ্ন। সেই মঞ্চে টানা দুই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের নামটাকেই ইতিহাসের পাতায় খোদাই করে নিলেন মাহমুদুল্লাহ অথচ ২০০৭ সালে অভিষেকের পর স্কটল্যান্ড ম্যাচ পর্যন্তÑ আগের ১১৩ ওয়ানডেতে কোন সেঞ্চুরিই ছিল না তাঁর! গুরুত্বের বিচারেও নাফিসের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরির তুলনা চলে না। কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেতে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৩ রান করে ছিলেন জয়ের নায়ক। কাল দলকে জেতাতে পারেননি, তবে কোয়ার্টার ফাইনালের রসদ পেতে গোটা দলকেই করেছেন উজ্জীবিত। দলীয় ২৭ রানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ২৮৮ রানের লড়াকু পুঁজির কারিগড় মাহমুদুল্লাহ। তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকারকে নিয়ে ১৮ ওভারে ৯০, ষষ্ঠ উইকেটে সাব্বির রহমানের সঙ্গে ৮ ওভারে ৭৮ ও সপ্তম উইকেটে নাসির হোসেনকে নিয়ে মাত্র ২.৩ ওভারে ২৭ রানের জুটিই প্রমাণ করে বাংলাদেশের ইনিংসজুড়ে ছিলেন কেবলই মাহমুদুল্লাহ! প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে রান পাননি। মাঝে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেন ২৩ ও ২৮। ৬২ রান করে ছন্দে ফেরেন স্কটল্যান্ড ম্যাচে। সেই ছন্দে অপরূপ সুর তুলে তারপরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তুলে নেন বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি (১৩৮ বলে ১০৩)। কাল সেই সুরে রানের ‘রোশনাই’ ছোটালেন ২৯ বছর বয়সী ‘ময়মনসিংহ হিরো।’ হ্যামিলটনে ব্যাট হাতে ‘হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা’ হলেন মাহমুদুল্লাহ! ১২৩ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় সাজালেন অপরাজেয় ১২৮ রানের দুরন্ত ইনিংস। বিশেষ করে শুরুর দিকে সৌমকে নিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদির পেস-তোপ যেভাবে সামলেছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। শুরুতেই অবশ্য দুই-দুইবার জীবন পান তিনি। পাওয়া জীবন নিয়ে মাহমুদুল্লাহ যে ইতিহাস হয়ে উঠবেন, সেটি হয়ত অনুমানই করতে পারেননি কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চমৎকার এই সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এলেন মাহমুদুল্লাহ। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি ও টানা দুই সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তিগাথা রচনাকারী এই টাইগার উইলোবাজের রান ৩৪৪, গড় ৮৬। সেঞ্চুরি ২ ও হাফ সেঞ্চুরি ১টি! এক্ষেত্রেও প্রথম তিনিÑ আগের চার বিশ্বকাপে কখনই কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান সেরা পাঁচে নাম লেখাতে পারেননি। আগের সর্বোচ্চ ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের, ২০০৭ বিশ্বকাপে ২১৬ রান করেছিরেন তিনি।
×