ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বল হাতে জ্বলে উঠলেন সাকিব, কিন্তু...

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৪ মার্চ ২০১৫

বল হাতে জ্বলে উঠলেন সাকিব, কিন্তু...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জয় তুলে নেয়, একটিতে পরাজয় দেখে আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। ওই ৪ ম্যাচে সাকিব ব্যাট হাতে দুটি অর্ধশতক হাঁকালেও বল হাতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। শিকার করতে পেরেছেন মাত্র ৩ উইকেট। ব্যাটে-বলে চৌকস বিশ্বের দুই নম্বর ওয়ানডে অলরাউন্ডারের কাছ থেকে তাই শেষ গ্রুপ ম্যাচে প্রত্যাশাটা বেশিই ছিল। কারণ, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বরাবরই বেশ ভাল রেকর্ড সাকিবের। শেষ পর্যন্ত কিউইদের পেয়েই বল হাতে ভেল্কি দেখালেন তিনি। শিকার করলেন ৫৫ রানে ৪ উইকেট। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বিশ্রামে থাকায় এদিন সাকিবের কাঁধেই ন্যস্ত হয়েছিল দলের নেতৃত্বভার। ব্যাট হাতে এদিন ব্যর্থ হলেও বল হাতে জ্বলে উঠলেন দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর নেতৃত্ব পাওয়ার ম্যাচে। তবে দলকে জেতাতে পারলেন না দেশসেরা এ ক্রিকেটার। বাংলাদেশ হেরে গেছে ৩ উইকেটে। বোলার সাকিবের স্বরূপে ফিরে আসাটা শেষ আটে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বড় অনুপ্রেরণা এটাই বিশেষ প্রাপ্তি। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ক্রিকেটার কেন সাকিব, সেটা হাড়ে হাড়ে প্রথম কিন্তু টের পেয়েছিল নিউজিল্যান্ডই। ২০১০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসে ওয়ানডে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা বরণ করতে হয়েছিল সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের কারণে। ওই সিরিজে সাকিব ৪ ম্যাচে ৭১.০০ গড়ে ২১৩ রান করার পাশাপাশি ১৫.৯০ গড়ে ১১ উইকেট শিকার করে সাকিব হয়েছিলেন সিরিজসেরা। হ্যামিলটনে শুক্রবার খেলতে নামার আগে কিউইদের বিরুদ্ধে সাকিবের সমৃদ্ধ রেকর্ডটাই বলে দিচ্ছিল তিনিই মূল প্রতিপক্ষ হবেন তাদের জন্য। ব্যাটে-বলে সমানতালে নৈপুণ্য দেখিয়ে একাধারে তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই শীর্ষ অলরাউন্ডার হিসেবে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে সাকিব এবার বিশ্বকাপ অভিযানে এসেছিলেন। তবে ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতে কার্যকর হয়ে উঠতে পারেননি। তাই ওয়ানডের শীর্ষস্থানটা হারাতে হয়েছে। কিন্তু অতীত স্মৃতি, রেকর্ড সেসব ভুলে যায়নি কিউইরা। সেটা সাকিব বোলিংয়ে আসার পর থেকেই তাঁকে মোকাবেলা করার ধরন দেখেই স্পষ্ট হয়ে উঠল। হ্যামিলটনের পেসবান্ধব উইকেটে স্পিন বোলারদের জন্য দুঃসাধ্য ভাল কিছু করা। তবে যে দুটি সিরিজে কিউইরা হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তাতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশী স্পিনাররা। দুর্বলতাটা জানা, তাই শুরুতেই সাকিব নিজেই আক্রমণে। সফলতাও পেয়ে গেলেন বেশ দ্রুত। আর সাকিবের সফলতা মানেই টিম বাংলাদেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠা। কিউই ব্যাটিংয়ের পুরোধা অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম বিধ্বংসী হতে পারেননি চিরাচরিত স্বভাবসিদ্ধভাবে। সাকিবের শিকারে পরিণত হয়েছেন কিছু করার আগেই। আরেক নির্ভরযোগ্য কেন উইলিয়ামসনকেও শিকার করে টাইগার শিবিরে স্বস্তি আনেন সাকিব। তাঁকে এরপর আরও সমীহ করেই খেলেছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। প্রথম স্পেলটা ৪ ওভারে এক মেডেনসহ ২৫ রানে দুই উইকেট নিয়ে শেষ করেন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে মার্টিন গাপটিল ও রস টেইলর থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা বাংলাদেশের কাছ থেকে। ফিরতি স্পেলে ফিরেই ইনিংসের ৩১তম ওভারে সেঞ্চুরিয়ান গাপটিলকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে আরেকবার বাংলাদেশ দলে স্বস্তি আনেন সাকিব। দ্বিতীয় স্পেলে আরও ৩ ওভার বোলিং করে ৯ রান দিয়ে আরেকটি উইকেট। শেষ মুহূর্তের জন্য নিজেকে জিইয়ে রাখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৪৫তম ওভারে আবার ফিরেই চতুর্থ আঘাত হানেন তিনি। এবার শিকার হলেন ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান লুক রনকি। সাকিবের জন্য তিনি নিজেকে মেলে ধরারও সুযোগ পেলেন না। পুরোটা সময় দারুণ বোলিং করে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন এদিন। কিন্তু ৪৯তম ওভারে তাঁর করা ৫ বলে ১২ রান নিয়েই আগেভাগে জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। ৮.৫ ওভারে ৫৫ রানে ৪ উইকেট। বোলার সাকিব জ্বলে উঠেছেন এটাই স্বস্তির বিষয়। কারণ সামনে আসছে শেষ আটে ভারতের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা। এর আগেই বোলার সাকিবকে ফিরে পাওয়া খুব অপরিহার্য ছিল বাংলাদেশের জন্য।
×