ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাডমিন আটকের পরও থামেনি কেল্লাওয়ালারা ॥ দিচ্ছে হুমকির পর হুমকি

বাঁশেরকেল্লার ডোমেইন কেনা হয়েছে লন্ডনে, মালিক নওফেল জমির

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ মার্চ ২০১৫

বাঁশেরকেল্লার ডোমেইন কেনা হয়েছে লন্ডনে, মালিক নওফেল জমির

ফিরোজ মান্না ॥ বাঁশেরকেল্লার মূল মালিক ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছোট ছেলে নওফেল জমির। যিনি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লন্ডন চলে গেছেন। লন্ডনে এই নওফেল জমির বাঁশেরকেল্লার ওয়েবসাইটের ডোমেইন কিনে দেশবিরোধী হাতিয়ার হিসেবে বাঁশেরকেল্লাকে ব্যবহার করছে। সেখানে নওফেল একটি বাংলা পত্রিকাও বের করেছে। নাটের গুরু নওফেল লন্ডন থেকে বাঁশেরকেল্লার মাধ্যমে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালানো ও মিথ্যা প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বাঁশেরকেল্লার মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে আন্দোলনের নামে বোমা হামলার নির্দেশ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মুক্তমনা ও প্রগতিশীল মানুষদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বাঁশেরকেল্লা ইউকে নামের ওয়েবসাইট থেকে। অবৈধ ভিওআইপি করার দায়ে নওফেলের বিরুদ্ধে দেশে মামলা রয়েছে। মূল বাঁশেরকেল্লাকে ঘিরে শতাধিক বাঁশেরকেল্লা ফেসবুক পেজ ও ব্লগ তৈরি হয়েছে। শনিবারও বেশ কয়েকটি নতুন পেজ তৈরি করেছে জামায়াত শিবিরের এ্যাডমিনরা। বাঁশেরকেল্লার সব কয়েকটি পেজ ও ব্লগ আরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার শুরু করেছে। তারা চলমান আন্দোলনকে আরও কঠোর করার নির্দেশ জারি করেছে। বলা হয়েছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার যদি কোন কিছু হয় তাহলে দেশ পুরোপুরি অচল করে দেয়া হবে। অবৈধ সরকার উৎখাতে তাদের আন্দোলন চলবেই। ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত শিবিরসহ ২০ দলের নেতাকর্মীদের আরও কঠিন পথে এগিয়ে যেতে হবে। শনিবার বাঁশেরকেল্লার ১০ থেকে ১২ পেজে এমন কথা লেখা হয়েছে। বাঁশেরকেল্লার এ্যাডমিন গ্রেফতার হওয়ার পর বিটিআরসি দেশে পরিচালিত বাঁশেরকেল্লার পেজ ও ব্লগ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, বাঁশেরকেল্লার প্রধান এ্যাডমিনকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। খবরটি গুজব হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাঁশেরকেল্লার ফেসবুক পেজ থেকে বলা হয়েছে পুলিশ মিথ্যা কথা প্রচার করছে। ওই পেজে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে বাঁশেরকেল্লার প্রধান এ্যাডমিনসহ সকল এ্যাডমিন নিরাপদেই আছেন।’ পুলিশ বাঁশেরকেল্লার গ্রেফতারের বিষয়টি জানানোর পরই বাঁশেরকেল্লার ফেসবুক পেজে (িি.িভধপবনড়ড়শ. পড়স/ হবনিধংযবৎশবষষধ) এক নোটিসে বলা হয়, ‘বাঁশেরকেল্লা পেজের প্রধান এ্যাডমিনকে পুলিশ গ্রেফতারের কথা বললেও আসলে সে বাঁশেরকেল্লার কেউ নয়। নোটিসে আরও লেখা হয়েছে, এর আগেও এরকম নাটক করে এ্যাডমিন গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়েছিল সরকার। সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরও কালো থাবা ফেলার অপচেষ্টা করে আসছে প্রতিনিয়ত। সরকারের এমন মিথ্যাচারের চরম প্রতিশোধ নেয়া হবে। দেশে ও দেশের বাইরের সব এ্যাডমিন এখন সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছে। বাঁশেরকেল্লার ইউকে পেজ থেকে বলা হয়েছে, ‘এবার কঠিন আঘাত হানা হবে আওয়ামী নাৎসিদের ওপর।’ বাঁশেরকেল্লা ঢাকা, লন্ডন, দুবাই, প্যারিস ও আমেরিকা থেকে পরিচালিত পেজ থেকে বলা হয়েছে, দেশনেত্রীর গায়ে যদি একটি ফুলের টোকাও লাগে তাহলে সারাদেশ অচল করে দেয়া হবে। নিউ বাঁশেরকেল্লা ওয়েবসাইট থেকে বলা হয়েছে, তাদের কোন এ্যাডমিন আটক হয়নি। এই পেজে সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়। ‘যেন অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সব সময় আমরা সত্যের পথে অবিচল থেকে সাহসিকতার সঙ্গে সত্য উন্মোচনের কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন। আমিন।’ ফেসবুকে বাঁশেরকেল্লা পেজটির লাইক সংখ্যা আট লাখ ৯৮ হাজারের ওপরে। জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র ও ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর প্রচার চালানোর অভিযোগে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মাসে পেজটি বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপনস টিম। কিন্তু পরে ‘নিউ বাঁশেরকেল্লা’ নামে নতুন করে তা চালু হয়েছে। পুলিশের প্রতি এই পেজ থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে, ‘বাঁশেরকেল্লা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণাম ভাল হবে না। সরকার ও পুলিশের বলতে চাই, যে জামায়াত-শিবির আসলে সেই জাতি না, যে গুলি করে মারলে দমে যাবে। এরা মুসলিম। আর মুসলিম জাতি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’। এদের দমাতে পারে পৃথিবীর এমন কোন স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি। আমরা মুসলিম ‘চির উন্নত মমশির।’ বাঁশেরকেল্লার একটি পেজে বলা হয়, বাংলাদেশে পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারত প্রেম আর কতকাল এমন শিরোনাম দিয়ে লেখা হয়েছে, ভারতীয় চ্যানেলগুলো দেশে একচেটিয়া চলছে। আমাদের চ্যানেলগুলোকে ভারতীয় চ্যানেলগুলো গ্রাস করে নিচ্ছে। বাড়ির বড়দের সঙ্গে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও হিন্দী সিরিয়াল ও হিন্দী নাচ-গানের ভক্ত হয়ে হিন্দী সিরিয়ালের ঢংয়ে হিন্দীতে অনর্গল কথা বলতে শুনেছি। যে বাচ্চার মুখের বোল এখনও ফোটেনি, সেই বাচ্চাকেও হিন্দী চটুল আইটেম গানের সঙ্গে নাচতে দেখেছি। হিন্দী সিরিয়ালের কোন এপিসোড কোন কারণে মিস গেলে এক ভাবীকে আরেক ভাবীর কাছে ফোন করে ঘটনা জেনে নিতে দেখেছি। দেশ এখন পুরোপুরি ভারতীয় সংস্কৃতিই চলছে। আমাদের দেশের সব পত্রিকা তাদের বিনোদন পাতাগুলো ভারতের মুভি, নায়ক-নায়িকা এমনকি ভিলেনের খবর দিয়ে ভরিয়ে রাখে। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলো তো বলিউড বলে আলাদা একটা সেকশনই আছে। ভারতের মুভি কবে মুক্তি পেল, কত টাকা ব্যবসা করল, কোন নায়িকা কোন আইটেম ড্যান্স করে কত পেলেন, কার বাড়িতে আগুন লাগল, কার সর্দি-কাশি হলো এ জাতীয় সবকিছুই সেখানে স্থান পায়। ভারতের মুভির খবরে আমাদের কি যায় আসে? ভারতের অর্ধনগ্ন নায়িকা ও নায়কের ঘনিষ্ঠ ছবি দিয়ে আমাদের রুচিশীল পাঠকদের জন্য আমরা কেমন বিনোদনের ব্যবস্থা করছি? কোন শ্রেণীর পাঠকের কোন ধরনের বিনোদন দেবার জন্য আমাদের মিডিয়া এসব খবর প্রচার করছে? পত্রিকাগুলো কেন ভারতীয় মুভির প্রচার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে? এমন আরও অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আল্লাহর নাম ভোলাতে অবৈধ আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এমন কাজ করে যাচ্ছে। হিন্দুস্তানী এই দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতেই হবে। বাঁশেরকেল্লা, বাঁশেরকেল্লা ইউএসএ, ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল, বাকশাল নিপাত যাক, বাঁশেরকেল্লা ইউকে, তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা, আই এ্যাম বাংলাদেশী, ডিজিটাল রূপে বাকশাল, বিএএন বাঁশখালী নিউজ-২৪, ইসলামী অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, তরুণ প্রজন্ম, ভিশন ২০২১ সহ ৬০টির বেশি ফেসবুক পেজের বাইরে নতুন করে আরও কয়েকটি পেজ খোলা হয়েছে। এই পেজগুলো হচ্ছে, ধর্মদ্রোহীদের ঘৃণা করি, সম্মিলিত ইসলামী মঞ্চ, বাঁশেরকেল্লা ডিজিটাল, শহীদ তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা, বাঁধ ভাঙ্গা আওয়াজ। এই পেজগুলো থেকে রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, সেক্রেটারি মারুফুল ইসলাম, সমাজ সেবা সম্পাদক সাইয়্যেদ আমীন মুলহীমসহ যত জামায়াত শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি না দেয়া হলে সরকারকে এর জন্য কঠিন মাসুল গুনতে হবে। অবৈধ সরকার জনগণের আন্দোলনের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে এখন বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। যদি কোন জামায়াত শিবির কর্মীকে ক্রসফায়ার করা হয় তাহলে তার বদলা নেয়া হবে বলেও পেজগুলোতে হুমকি দেয়া হয়েছে। এদিকে বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশ থেকে বাঁশেরকেল্লার যেসব পেজ হচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে তারা বিদেশ থেকেই বেশি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ওই পেজ বা ব্লগগুলো বিদেশেই তৈরি। দুবাই, লন্ডন, প্যারিস, আমেরিকা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে বাঁশেরকেল্লার কম করে হলেও ৫০ থেকে ৬০ পেজ ও ব্লগ চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করার বিটিআরসির করণীয় তেমন কিছু নেই। তবে ওসব দেশে বিটিআরসির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হবে পেজগুলো যেন তারা বন্ধ করে দেয়।
×