ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহবাগে আগুনকণ্ঠীদের গল্প শোনো অনুষ্ঠান

যে সংগ্রাম জীবনকে নতুন করে ভাবায় তার কাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৫ মার্চ ২০১৫

যে সংগ্রাম জীবনকে নতুন করে ভাবায় তার কাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমার মায়ের বিয়ে হয় মাত্র ১৩ বছর বয়সে। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ জন্য বিয়ের পর থেকেই তিনি স্বামীর নানা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমার জন্মের পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। কারণ আমার জন্মদাতা ছেলে সন্তান আশা করেছিলেন। এ কারণে একমাত্র সন্তান হওয়ার পরও আমি কোনদিন বাবার আদর-স্নেহ পাইনি। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়ই আমার জন্মদাতা আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন আমার নির্যাতিতা মা হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী। প্রচ- আগ্রহ থাকলেও শ্বশুরবাড়ির বাধার কারণে আমার মা বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু তার গর্ভের মেয়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবেÑ এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে শুরু করেন নতুন করে বাঁচার সংগ্রাম। একমাত্র মায়ের প্রেরণাতেই আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি, আমার লড়াকু মা কোনদিন হারবে নাÑ শনিবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘আগুনকণ্ঠীদের গল্প শোনো’ অনুষ্ঠানে গর্ভধারিণী মায়ের কঠিন জীবন সংগ্রামের কাহিনী এভাবেই তুলে ধরলেন রুহী আক্তার। আগুনকণ্ঠা মা ফাতেমা আক্তার সুহীর মেয়ে রুহী এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছেন। ‘যুক্তি, নারী মুক্তির সুর হোকÑ ধর্মান্ধতা-সহিংসতা দূর হোক’ সেøাগানকে সামনে রেখের আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বাচিক পরিবেশনায় নারী মুক্তি আন্দোলনের সেকাল-একালের ৬ অগ্নিকন্যার জীবন সংগ্রামের নানা চিত্র উঠে আসে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের রচনা ‘নারী ও ধর্মভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে পাঠ করে শোনান শামীমা নীপা। ধর্মের নামে মৌলবাদীরা কীভাবে নারীকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখতে চায় প্রায় ১০০ বছর আগের প্রবন্ধে তাই লিখেছিলেন বেগম রোকেয়া, যা ২০১৫ সালেও প্রাসঙ্গিক। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রথম নারী শহীদ বিপ্লবী অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আত্মাহুতি দেয়ার আগের রাতে তার মায়ের কাছে শেষ একটি চিঠি লেখেন। মা ও দেশমাতৃকার প্রতি আবেগভরা প্রীতিলতার সেই চিঠিটি পড়ে শোনান তামান্না তিথি। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অগ্রদূত ও কবি বেগম সুফিয়া কামালের গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সাক্ষাতকার পাঠ করেন বন্যা লোহানী। নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সুফিয়া কামাল ১৯৯১ সালে ওই সাক্ষাতকারটি দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রজন্মের লড়াকু নারী রাফিদা আহমেদ বন্যার সাহসী উচ্চারণ পড়ে শোনান ঋতু সাত্তার। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুর্বৃত্তদের হামলায় বন্যার স্বামী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় নিহত হন। ওই ঘটনায় বন্যাও মারাত্মকভাবে আহত হন। সম্প্রতি ফেসবুক স্ট্যাটাসে কুসংস্কার, অজ্ঞতা, মৌলবাদ ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে নিজের স্বামীর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বন্যা। মেয়েকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলবার অদম্য ইচ্ছা পূরণের জন্য ফাতেমা আক্তার সুহী স্বামীর ঘর ছাড়তে কেমন দ্বিধাহীন ও অবিচল ছিলেন- সেই কষ্টগাঁথা শোনান তারই মেয়ে রুহী। আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা জয় করে কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের সংগ্রামের কাহিনী শোনান ফারজানা স্বপ্না। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজকদের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুশী কবির। চমৎকার দুটি গান গেয়ে শোনান তরুণ শিল্পী তুহিন কান্তি দাস। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ফারজানা নূরী। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আয়োজকদের পক্ষ হতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নারীর প্রতি সকল বৈষম্য নিরসনে অবিলম্বে জাতিসংঘ সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নসহ আট দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
×