ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাম তেল আমদানিতে বাংলাদেশ ঝুঁকছে ইন্দোনেশিয়ার দিকে

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৬ মার্চ ২০১৫

পাম তেল আমদানিতে বাংলাদেশ ঝুঁকছে ইন্দোনেশিয়ার দিকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার পাম তেল রপ্তানিতে ধস নেমেছে। জানুয়ারি মাসের তুলনায় আলোচিত মাসে রফতানি ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৪০ টনে। মালয়েশিয়া পাম অয়েল বোর্ডের বরাত দিয়ে সম্প্রতি দেশটির বিজনেসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার এ খবর প্রকাশ করেছে। তবে ইউএসএআইডির অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক ঝামেলা কম হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা ইন্দোনেশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। বর্তমানে এ তেলের ৮২ শতাংশ আমদানি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় উৎপন্ন পাম অয়েল সবচেয়ে বেশি আমদানি করে চীন, পাকিস্তান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে এসব দেশে পাম তেলের চাহিদা কম থাকায় তাদের রফতানি বাজারে প্রভাব পড়েছে। ২০০৭ সালের পর এই মাসে সবচেয়ে কম পাম তেল রফতানি হয়েছে। এক বিবৃতিতে পাম অয়েল বোর্ড জানিয়েছে, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের পাম অয়েলের মজুদও কমেছে। জানুয়ারিতে যেখানে দেশটির মজুদ ছিল ১৭ লাখ ৭০ হাজার টন, ফেব্রুয়ারিতে তা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪০ হাজার টনে। তবে গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ‘ওভারভিউ অব লোকাল মার্কেটস’ শীর্ষক বাংলাদেশ বিষয়ক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে জানানো হয়, গুণগতমানের পাম উৎপাদন ও সরবরাহকারী দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকা মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বাজার হারিয়েছে। কয়েক বছর আগেও দেশে পাম তেলের সিংহভাগ আমদানি করা হতো মালয়েশিয়া থেকেই। তবে কম দাম এবং ভিসাসহ ব্যবসায়িক ঝামেলা কম হওয়ায় আমদানিকারকরা ইন্দোনেশিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। বর্তমানে এ তেলের ৮২ শতাংশ আমদানি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। পাম অয়েল বোর্ডের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আলোচিত মাসে মালয়েশিয়ায় অপরিশোধিত পাম তেলের উৎপাদনও কমে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে এই তেলের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১২ মিলিয়ন টন, জানুয়ারিতে যা ছিল ১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন টন। একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত মাসে পাম তেলের যে উৎপাদন কম হয়েছে তাতে খুব বেশি আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ সম্প্রতি দেশটি বন্যার কবলে পড়ে। এতে পাম তেল উৎপাদনকারী কিছু এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সে কারণে মোটের দাগে তেল উৎপাদন কমে গেছে। তবে রফতানি যে কম হয়েছে তাতে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই আশা করেছিলেন নববর্ষ উপলক্ষে চীন এ মাসে মালয়েশিয়া থেকে একটু বেশিই পাম তেল আমদানি করবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি বন্যার কারণে রফতানিতে প্রভাব পড়ায় এই তেলের দামেও কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। ফেব্রুয়ারি মাসে পাম তেলের দাম কমে যায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে জেএফ এপেক্স সিকিউরিটিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, আগামী মাসগুলোতে তেলের এই লোকসান কাটিয়ে উঠবে মালয়েশিয়া। উৎপাদনও বাড়বে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশে পাম অয়েল সরবরাহের শীর্ষস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। দেশটির উৎপাদিত তেলের মান ইন্দোনেশিয়ার থেকে ভাল। তবে তুলনামূলক বেশি দামের কারণে মালয়েশিয়ার বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে পণ্য আমদানিতে শিপমেন্ট শিডিউল সহজ হওয়ায় সেদিকেই ঝুঁকেছেন বাংলাদেশের আমদানিকারকরা। ইউএসএআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গড়ে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭২ টন পাম অয়েল আমদানি করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকেই আসে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৪ টন। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। এ সময়ে দেশে মোট আমদানির প্রায় ১২ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৮ টন পাম অয়েল আনা হয় মালয়েশিয়া থেকে। বাকি ৪ হাজার ৬৭৯ টন অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
×