ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমস্যার মূলে-

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৬ মার্চ ২০১৫

সমস্যার মূলে-

‘যৌক্তিক’ পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া। গত মাসের শুরু থেকে প্রায় প্রতি কার্যদিবসেই হরতাল কর্মসূচী দেয়া হচ্ছে; আর তাঁর আহ্বানে চলমান অবরোধের দুই মাস পূর্তি হয়েছে এক সপ্তাহ আগেই। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার নিজের গুলশান কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বক্তব্য দেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের কোন প্রশ্ন তিনি গ্রহণ করেননি। নামে সংবাদ সম্মেলন হলেও বাস্তবে লিখিত বক্তব্য প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি যেসব কথা বলেছেন তা পর্যালোচনা করলে যে কারও কাছেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে তার অন্তঃসারশূন্যতার বিষয়টি। দেশব্যাপী পেট্রোলবোমার ত্রাস সৃষ্টি করে যে জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠায় তিনি অবিচল রয়েছেন তাতে জনতার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আজকে দেশের সমস্যার মূলে তিনিই। নেতৃত্বসুলভ দূরদর্শিতা তাঁর ভেতর অবশিষ্ট রয়েছে কিনা সেটাই এখন জিজ্ঞাস্য। নিজ দলের ভেতরেই তাঁর অবস্থান এখন আর ততখানি সুদৃঢ় নয়। একইসঙ্গে এটাও অনুমেয় যে, দল কিংবা জোটের অন্যান্য নেতার প্রতিও তাঁর বিশেষ আস্থা নেই। নিজ কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে থাকা নেতানেত্রী ছাড়া আর কাউকেই তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাননি। এমনকি দলের কারও কারও নাম উচ্চারণ করে তাঁদের মুক্তি দাবি করা হলেও তিনি তার দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মুক্তি দাবি করেননি। যাঁরা খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনেছেন তাঁদের কাছে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দেশবাসীর কাছে সুনির্দিষ্ট কী বার্তা পৌঁছে দেবেন সে ব্যাপারে তিনি খানিকটা বিভ্রান্ত। বক্তব্যে জ্বালাও-পোড়াও কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়টি স্থান পায়নি। খালেদা জিয়ার ডবল স্ট্যান্ডার্ডও দেশবাসী বুঝে গেছেন। তিনি হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছেন অথচ হরতাল তাঁর নিজ দলের নেতারাও মানেন না। বিএনপি নেতাদের সব ব্যবসাই চলছে। তারা গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। সার্বিক অর্থেই দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে হতাশ করেছে খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত। অবরোধ-হরতালের পক্ষেই তিনি রয়ে গেলেন। হরতাল-অবরোধের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেও তিনি তুষ্ট হতে পারেননি। প্রমাণ করে গেলেন চলমান সমস্যার মূলে তিনি, আর এ সমস্যা যেন তাঁর বারোমাস্যা। ব্যক্তিস্বার্থে খালেদা জিয়া সংবিধান পরিবর্তনের কথাও বললেন তাঁর বক্তৃতায়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে গত মাসেই তাঁর দলের পক্ষ থেকে অনুরূপ আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা হয়। বিএনপি বা দেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সে জন্যে সবার আগে সংবিধান মেনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। জনতার রায় পেলেই শুধু সরকার গঠন সম্ভব। এছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। ক্ষমতায় যাওয়ার সেটাই সংবিধানসম্মত পথ।
×