ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারীর প্রতি সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৬ মার্চ ২০১৫

নারীর প্রতি সহিংসতা

নারী নির্যাতনের নৃশংসতম একটি ধরন হচ্ছে এ্যাসিড নিক্ষেপ। এ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার কোন নারীর শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক ক্ষেত্র যে কতটা ভয়াবহ তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারোর উপলব্ধি করা প্রায় অসম্ভব। এ্যাসিড সন্ত্রাসের যে কোন ঘটনা যে কোন সচেতন মানুষকে ব্যথিত করে। তবে একথা সত্য, বাংলাদেশে এখন এ্যাসিড সন্ত্রাসজনিত অপরাধকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। এই অপরাধে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি এখনও সকল ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়নি। এ্যাসিড সন্ত্রাস নারীর প্রতি সহিংসতার একটি চরম রূপ এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অপরাধীদের দ্রুত যথাযথ বিচার না হওয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আইনী দুর্বলতার সুযোগে অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ এ্যাসিড সন্ত্রাসসহ নারীর প্রতি সহিংসতাকে যেন আরও উস্কে দিচ্ছে। শুক্রবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বখাটে ও তার সহযোগীরা হবিগঞ্জের জয়রামপুর তৈলখালী গ্রামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মুখে এ্যাসিড ছুড়ে মারে। এতে তার মুখ ও হাত ঝলসে যায়। সে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এবার সে স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। ৯ বিষয়ে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাকি ছিল তিনটি। কিন্তু পরীক্ষায় বসা হলো না তার। ভেঙ্গে গেল তার স্বপ্ন। হবিগঞ্জের এই কিশোরীর ওপর এ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা যে কোন বিবেকবান মানুষকে পীড়া দেবে নিঃসন্দেহে। বার্ন ইউনিটে তার আর্তনাদÑ আমি পরীক্ষা দিতে চাই, ওরা আমার মুখ ঝলসে দিয়েছে, ওরা আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল। তার আকুতিই বলে দেয় এ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার মেয়েটি কতটা অসহায়। এ্যাসিড সন্ত্রাস বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এ্যাসিড সন্ত্রাসের পরিমাণ কমে আসছে। তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে এ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা বাড়লেও ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অপরাধ আবার কমতির দিকে ছিল। গত ১০ বছরে এ্যাসিড সন্ত্রাসের মামলায় ১৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। যদিও এখনও কোন মৃত্যুদ- কার্যকর হয়নি। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ১০২ জনের। অবশ্য অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেশিরভাগ মামলায় আসামিরা ছাড়া পেয়ে যায়। এছাড়া দেশে এ্যাসিড আমদানি, বিক্রয়-বিতরণ, ব্যবহারের যে আইন ও লাইসেন্সের শর্তাবলী রয়েছে তাও যথেষ্ট সময়োপযোগী নয়। তাই আইনের সময়োপযোগী সংশোধন প্রয়োজন। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করলে কিংবা অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন করা দরকার। গণমাধ্যম, সরকারী-বেসরকারী সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা রোধে আইনী প্রতিকারের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তোলা দরকার।
×