ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার স্থান কাশিমপুর কারাগারে, সংলাপের টেবিলে নয় ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৬ মার্চ ২০১৫

খালেদার স্থান কাশিমপুর কারাগারে, সংলাপের টেবিলে নয় ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দ্রুত নির্বাচন দিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সংলাপের দাবির জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সংলাপের টেবিল নয়, কাশিমপুর কারাগারই খালেদা জিয়ার স্থান। রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনু আরও বলেন, এ মুহূর্তে দেশে নির্বাচন নিয়ে কোন সমস্যা নয়। আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদই দেশের প্রধান সমস্যা। এখন আগুন সন্ত্রাসের রানী, অশান্তির রানী খালেদা জিয়ার জায়গা সংলাপের টেবিল নয়, কাশিমপুর কারাগার। লাগাতার অবরোধ ডেকে নিজের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়া গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে আবারও ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সংলাপের দাবি তোলেন। বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতেই রবিবার সরকারের তরফ থেকে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য ‘অসত্য ও একগুয়েমিতে ভরা’; সেখানে ‘নতুন কিছু’ নেই। খালেদা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ‘ভয় পান’ বলেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেননি বলে মন্তব্য করেন ইনু। তিনি বলেন, সকলের আশা ছিল তিনি মন পরিবর্তন করবেন। তিনি অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে চরম হতাশ করেছেন। খালেদার সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা বা সংলাপ হতেই পারে, তবে শুধু একটি নির্বাচনের জন্য কোন ‘এ্যাডহক ব্যবস্থার ফর্মুলা নিয়ে’ আলোচনা ‘যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।’ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য কোন স্থায়ী প্রস্তাব খালেদা জিয়া দেননি, দিতেও পারছেন না। অবরোধের গত ৬৭ দিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরাসরি নির্দেশে আগুন সন্ত্রাসের কারণে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে অনেক মানুষ। এই হত্যা ও খুনের মামলাগুলো আমরা প্রশাসনিকভাবে সাজাচ্ছি। এগুলো যখন আদালতে যাবে আদালত বিধি মোতাবেক পদেক্ষেপ নেবে। সরকার ‘নাৎসি কৌশল’ নিয়ে নিজেরা নাশকতা ঘটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলায় জড়াচ্ছেÑ খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগও নাকচ করে দেন জাসদ সভাপতি ইনু। তিনি বলেন, তাঁর (খালেদা) উস্কানি অনুযায়ী দলের নেতারা নির্দেশনা দিয়ে নাশকতা করছে এবং হাতেনাতে ধরা পড়ছে। এতকিছুর পর মামলা হলে তা কিভাবে মিথ্যা মামলা হয়? খালেদা জিয়া ক্ষমতার জন্য ‘উম্মাদ হয়ে গেছেন’ বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী ইনু। লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত শুক্রবার বিকেলে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গত ৫ জানুয়ারি থেকে তাঁর অবরোধের নামে ডাকা সহিংস-রক্তাক্ত কর্মসূচীর ৬৭ দিনের মাথায় তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। ‘অবরোধের’ ৬৭তম দিনে তাঁর ও তাঁর পুত্রের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা পেট্রোলবোমা-আগুন, সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা-বর্বরতা চালিয়ে নারী-শিশুসহ শতাধিক সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। জনগণ ও রাষ্ট্রের ব্যাপক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, কয়েক লাখ এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক পরিবার-পরিজন চরম অনিশ্চয়তা ও মানসিক অশান্তির মধ্যে পতিত হয়েছেন। দেশে উৎপাদন-বিপণন-বাণিজ্য-রাজনীতিতে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে নতুন কিছুই নেই। বরং ডাহা অসত্য ও একগুয়েমিতে ভরা। তিনি বলেছেন, দেশে ‘রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সঙ্কট’ চলছে এবং এ সঙ্কটের ‘একমাত্র সমাধান নির্বাচন।’ আবারও বলছি, নির্বাচন নিয়ে দেশে কোন সঙ্কট নেই। বর্তমান সরকার সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী সকল নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে। সরকার কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বা নির্বাচনে কারও অংশগ্রহণে কোন ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা থেকে এখন পর্যন্ত নবম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন শূন্য আসনের উপনির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ হাজার হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সকল নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শরিকরা অংশগ্রহণ করেছেন এবং বহু ক্ষেত্রেই তারা বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বিচার বিভাগকে সম্পৃক্ত করে পুরনো ধাঁচের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কোন সুযোগ নেইÑ সেটা জানার পরও এ নির্বাচনের পূর্বে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের অযৌক্তিক দাবি তোলেন। এখানে উল্লেখ্য, সংবিধান সংশোধনে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করেছিলেন। সেদিন বেগম খালেদা জিয়া সংবিধান সংশোধনের এ কমিটির আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি। সুতরাং পঞ্চদশ সংশোধন একতরফাভাবে করা হয়েছে বলে বেগম জিয়া যে দাবি করেছেন তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। ইনু বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-সমাজে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা-সংলাপ হতেই পারে। কিন্তু শুধু একটি নির্বাচনের জন্য কোন এ্যাডহক ব্যবস্থার ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য কোন স্থায়ী প্রস্তাব বেগম খালেদা জিয়া দেননি, দিতেও পারছেন না। উনার ভাবখানা দেখে দেশবাসীর কারই বুঝতে আর বাকি নেই যে, সোনার থালায় করে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে উনার পাতে তুলে না দেয়া, সোনার পাল্কিতে চড়িয়ে উনাকে প্রধানমন্ত্রী বা কোলে করে তুলে উনাকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে না দেয়া পর্যন্ত উনি আগুন সন্ত্রাস ও মানুষ পোড়ানোর দুষ্কর্ম বন্ধ করবেন না। উনার মনে শান্তি ও রহম আসবে না। উনি ক্ষমতার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন। কোন যুক্তিবুদ্ধি-সভ্যতা-মানবতা-আইনকানুন-সংবিধান-আবেদন-নিবেদন-অনুনয়-বিনয়-কান্না-আহাজারির কোনই মূল্য বেগম জিয়ার কাছে নেই। উনি বিশ্ব এজতেমা, পরীক্ষা, পূজা, ঈদে মিলাদুন্নবীর কোন কিছুরই ধার ধারেন না। বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, জঙ্গীবাদী-মৌলবাদীদের রক্ষা, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলা ও বিচার থেকে উনি ও উনার পরিবারের সদস্যদের নিষ্কৃতির জন্য উনি নিজেই নিজেকে ভুল রাজনীতির পথে নিয়ে গেছেন। উনার ভুল রাজনীতির খেসারত কেন জনগণ দেবে? তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তিনি আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা বন্ধের জন্য কোন ঘোষণা বা আহ্বান তো দেননি বরং উনি আগুন সন্ত্রাসের দায় আড়াল করার জন্য চরম অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন। বেগম জিয়া ও তাঁর পুত্র ৫ জানুয়ারির পূর্ব থেকেই প্রকাশ্যে নাশকতার উস্কানি দিয়েছেন, উনার দলের নেতারা সেই উস্কানি অনুযায়ী দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। নাশকতা সংঘটিত করছেন। নাশকতা সংঘটনকালে উনার দলের নেতাকর্মীরা হাতেনাতে ধরা পড়ছে, এতকিছুর পর মামলা হলে তা কিভাবে সাজানো মামলা, হয়রানিমূলক মামলা, মিথ্যা মামলা হয়? তাহলে কি গণমাধ্যম মিথ্যা বলছে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কি মিথ্যা বলছে? বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘উনারা হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না।’ ১৯৭৫ থেকে ’৮১ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান আমলে কর্নেল তাহেরসহ কত হাজার সৈনিককে হত্যা করা হয়েছিল? ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বেগম জিয়ার শাসনামলে শাহ এ এস এম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে কারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল? কারা আইভি রহমানসহ অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল? এ সকল হত্যাকা-ের খুনীদের বাঁচানোর জন্য বেগম জিয়া সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তদন্ত কাজকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছিলেন। বেগম জিয়ার হাতে রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। আগুনে পোড়া লাশের গন্ধ এখনও উনার দামী পারফিউমের গন্ধকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। দেশের মালিকানা নিয়ে উনার এত অবিশ্বাস কেন? বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাষ্ট্র-প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কর্তৃত্ব করছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বেগম জিয়ার অবিশ্বাস নতুন নয়। ১৯৯৭ সালে যখন পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছিল তখনও তিনি বলেছিলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি হলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। উনার কথায় সে দিনও মানুষ হেসেছিল, আজও হাসছে। বেগম জিয়া বলেছেন, সরকার সঙ্কট দীর্ঘায়িত করছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সরকার কোন সঙ্কট সৃষ্টি করেনি। বেগম খালেদা জিয়াই আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অচল করে দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে অস্বাভাবিক সরকার আনার জন্য সঙ্কট সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত। সরকার শক্ত হাতে সকল সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাত মোকাবেলা করে দেশকে সচল রেখেছে। জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছে। দেশে শান্তি ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যা যা করার দরকার তাই তাই করবে। সরকার সন্ত্রাসীদের কাছে, জঙ্গীবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। বরং আগুন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে নির্বাচন দেশের কোন সমস্যা না। আগুন, সন্ত্রাস, নাশকতা-জঙ্গীবাদ দেশের প্রধান সমস্যা। সবার আগে আগুন, সন্ত্রাস, নাশকতা-জঙ্গীবাদ দমনও নিশ্চিহ্ন করা হবে। এখন আগুন সন্ত্রাসের রানী, অশান্তির রানী বেগম খালেদা জিয়ার জায়গা সংলাপের টেবিল নয়, কাশিমপুর কারাগার। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেননি, বরং তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে সাংবাদিকদের বের করে দিয়েছেন। উনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ভয় পান। আমরা জনগণের রাজনীতি করি। জনগণের কাছে জবাবদিহি করি। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে এখন তা উত্থাপন করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
×