মামুন-অর-রশিদ ॥ এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদে এখন বইছে শান্তির সুবাতাস। শিক্ষা থেকে অবকাঠামো, কিংবা সাংস্কৃতিক বিকাশ থেকে ক্রীড়াঙ্গন- সব ক্ষেত্রেই এখানে দেখা দিয়েছে উন্নয়নের ছোঁয়া। খুব বেশি দিনের কথা নয়, মাত্র কয়েক বছর আগেও যেখানে শিশুদের ঘুম পাড়ানো হতো ভয়ঙ্কর খুনী-সন্ত্রাসী বাংলাভাইয়ের কথা বলে। যে জায়গার নাম শুনলে বড়দেরও গা রীতিমত শিউরে উঠত, সেই স্থানটি রাজশাহীর বাগমারা। প্রত্যন্ত উপজেলা হলেও বাগমারা এক সময় দেশের সাধারণ মানুষের কাছে রক্তাক্ত জনপদ হিসেবেই পরিচিত ছিল। এই বাগমারায় যখন অব্যাহত ছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নির্মমতা-তখন ভয়ে নিয়মিত স্কুল-কলেজে যেতে পারত না সাধারণ শিক্ষার্থী, অথচ সেখানেই এখন দল বেঁধে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলযাত্রার চিত্র চোখে পড়ে। অবাক বিস্ময় যে, সেখানবার জীবনযাত্রার গতি-প্রকৃতিও এখন বদলে গেছে অনেকটাই। এক সময় যেখানে অপহরণ, খুন, জখম, হত্যা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। আর বাংলাভাইয়ের উত্থান, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, লাল পতাকা বাহিনীর নৃশংসতা আর বিভীষিকাময় জীবনের গল্প ছিল প্রতিদিনের জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম। আজ বাগমারাবাসী তাদের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ভুলে দিনবদলের পথে এগোচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হওয়ায় যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব বিষয়, সেখানেই আজ সাধারণের দোরগোড়ায় উন্নত চিকিৎসা সেবা।
শুধু কী তাই? বাগমারায় এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব চলছে, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্রীড়া উন্মাদনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাগমারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ সারাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে রাজশাহী জেলার মধ্যে বাগমারা উপজেলার সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। এসবই ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাগমারার উদাহরণ।
বাগমারার মানুষ এখন পূর্বের চেয়ে শান্তিতে বাসবাস করতে পারছে। ফলে বদলে গেছে এ উপজেলার প্রতিটি গ্রাম। পাল্টে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। এখন আর বাংলাভাইয়ের ভয় দেখিয়ে শিশুদের ঘুম পাড়াতে হয় না। বরং এখনকার সকালগুলো ঘরে ঘরে শিশুদের বই পড়ার আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা এবং সরকারের উদ্যোগে জাতির অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বদলে যেতে থাকে বাগমারার দৃশ্যপট। সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম চলে এখানে। এরই মধ্যে গ্রাম থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে পাকা সড়ক। প্রতিষ্ঠা হয়েছে অসংখ্য স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-মক্তব। আর বিদ্যুতের আলোর ছোঁয়া সর্বত্র লক্ষ্যণীয়।
রাজশাহীর প্রত্যন্ত উপজেলা বাগমারা। বিভাগীয় শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। ১৬ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভা নিয়ে বাগমারা উপজেলা গঠিত। এখানকার লোকসংখ্যা প্রায় চার লাখ। এখানকার প্রতিটি কার্যক্রমে এলাকার যুবক, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করছে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা সামাজিক কর্মকা-ের পাশাপাশি পড়ার টেবিলে বসছে। বিপথগামী তরুণরা মাদক এবং সন্ত্রাস ত্যাগ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষি কাজে মনোনিবেশ করছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ এবং বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের উন্নয়নমূলক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ততার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতির দিকে।
দুই বছর আগে এ উপজেলায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সে সময় বলেছিলেন, রক্তাক্ত বাগমারায় আর রক্ত ঝরবে না। তাঁর সে কথা আজ অনেকটাই সত্য। শুধু প্রধানমন্ত্রী একা নন, গত ৮ বছরে পর্যায়ক্রমে বাগমারায় এসে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিগণ। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় বাগমারায় এসে বাগমারাকে শুধু সমৃদ্ধই করেনি, সারাদেশে পরিচিত করেছেন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: