ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে দণ্ডিত সিজারকে ধাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৬ মার্চ ২০১৫

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে দণ্ডিত সিজারকে ধাওয়া

বিডিনিউজ ॥ সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্রে তাঁর তথ্য পেতে এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপিকর্মী রিজভী আহমেদ সিজার নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে ধাওয়া খেয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের ফুডকোর্টে শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে বক্তব্য শুরু করার পর পর তার ওপর চড়াও হন আওয়ামী লীগকর্মীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ পাহারায় সটকে পড়েন সিজার। ভার্জিনিয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয়ের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ায় গত ৪ মার্চ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্ট। সিজার (৩৬) বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে থাকেন তারা। আগামী ২০ এপ্রিল কারাগারে উপস্থিত হতে সিজারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সিজার। আওয়ামী লীগকর্মীদের তোপের মুখেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন সিজার। তার এ তৎপরতা জানাজানি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় জ্যাকসন হাইটসের ফুডকোর্টে জড়ো হন। এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনের স্থানে আসেন সিজারের বাবা মোহাম্মদ উল্লাহ। কয়েক মিনিটের মাথায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে সেখানে হাজির হন সিজার। একপাশে বাবা এবং আরেক পাশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, কাজী আজম ও সাইদুর রহমানকে রেখে মঞ্চে বসেন সিজার। ঝটপট লিখিত বক্তব্যের অনুলিপি সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে সেখানে হানা দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী। ‘হি ইজ এ্যা কনভিকটেড ক্রিমিনাল, হি হ্যাজ নো রাইট টু অর্গানাইজ প্রেস কনফারেন্স’Ñ চিৎকার করে এ কথা বলতে বলতে পুলিশকে সরিয়ে দিয়ে সিজারের হাত থেকে বক্তব্যের অনুলিপি কেড়ে নেন মামুন। এ সময় বেশ কয়েক ডজন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী সিজারকে ‘কনভিকটেড ক্রিমিনাল’, ‘সিজার হচ্ছে সন্ত্রাসী’ বলতে থাকেন। ‘সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং আঘাত করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তার জায়গা এটা নয়। তার জায়গা হচ্ছে জেলখানা’ বলতে শোনা যায় অনেককে। এ সময় উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা চুপসে যান। পরিস্থিতি মারমুখী হলে পুলিশ সদস্যরা সিজারকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। এর একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ঘটনাস্থলে আসেন। সিদ্দিক বলেন, ‘ফেডারেল কোর্টে দোষ স্বীকার করে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের কী থাকতে পারে? আসলে ওরা হচ্ছে ক্রিমিনাল। বাংলাদেশে যেমন সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কাজ করছে, এই প্রবাসেও বিএনপির লোকজন মানুষ অপহরণসহ মানুষের মান-সম্মান হরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’ আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের রায়ে উল্লেখ রয়েছে- সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন। অথচ লাজ-লজ্জাহীনভাবে সংবাদ সম্মেলনে সে কথা অস্বীকারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এহেন মিথ্যাচার আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এই প্রবাসেও শুরু হলো প্রতিরোধ।’ লিখিত বক্তব্যে সিজার বলেন, ‘নিউইয়র্ক ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও আমাকে নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যার সঙ্গে কোন কোন ক্ষেত্রে বাস্তবতার মিল নেই। আদালতের রায়কে পাশ কাটিয়ে আমার প্রতিপক্ষের কিছু উদ্দেশ্যমূলক অযথা বক্তব্যকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কিছু অসত্য তথ্য তাঁদের কোন ক্ষতি করার অথবা তাঁদের ভীতি প্রদর্শনের কোন কথা আদালতে কোন পর্যায়ে আমি বলিনি, স্বীকারোক্তি তো দূরের কথা।’ তবে সিজারের দণ্ড নিয়ে নিউইয়র্কের বিচারিক আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর সংশ্লিষ্টদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গোপন তথ্য পেতে এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেয়ার কথা সিজার আদালতে স্বীকার করেছেন। এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দিয়ে জয় সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছিলেন তা বাংলাদেশী এক সাংবাদিক, এক রাজনৈতিক মিত্র ও একজন প্রাইভেট গোয়েন্দাকে দিয়ে বিনিময়ে সিজার প্রায় ৩০ হাজার ডলার নিয়েছিলেন বলেও এতে বলা হয়েছে। সিজার সরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ নেতারাও ওই স্থান ত্যাগ করেন। এরপর সিজারের বাবা মাহমুদ উল্লাহ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যত বিনষ্টের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইমেজ ধ্বংসের এ প্রক্রিয়ায় বিএনপির হাইকমান্ডের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমার ছেলে একাই এ কাজে লিপ্ত হয়েছিল।’ তবে সিজারের বিরুদ্ধে আদালতের রায় ঘোষণার পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপির দু-একজনের বিশ্বাসঘাতকতার বলি হলো আমার ছেলে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
×