ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের পরিণতি সম্পর্কে গণসচেতনতার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ মার্চ ২০১৫

ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের পরিণতি সম্পর্কে গণসচেতনতার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সর্বত্র ভেজাল পণ্যে ছেয়ে গেছে। কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে মেডিসিন খাতেও একই অবস্থা। শিশুরা ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের কেউ নিরাপদ নন। অধিকাংশ সময় নিজের অজান্তেই ভোক্তারা ভেজাল পণ্য গ্রহণ করছেন। এর ফলে নানা অজানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ভেজাল পণ্য নিয়ন্ত্রণে একাধিক আইন আছে; কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। নেই সঠিক দিকনির্দেশনাও। দেশে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অতিপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজাল পণ্য প্রতিরোধে পরিবার থেকেই সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নীতি নৈতিকতা বজায় রেখে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অতি জরুরী। রবিরার রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটরিয়ামে ‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভোক্তার অধিকার : প্রেক্ষিত কৃষিজ পণ্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিসেফ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল যৌথভাবে ওই সভার আয়োজন করে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই কৃষিপণ্যের নতুন নতুন উন্নত জাত উদ্ভাবন করছি, এগুলো অনেক নিরাপদ। দেশে অর্গানিক ফুডের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। অর্গানিক ফুডের উৎপাদনে কোন ধরনের রাসায়নিক ও পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয় না। ভেজাল প্রতিরোধে দেশে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবার থেকেই তা শুরু করতে হবে। নীতি নৈতিকতা বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করলেই ভোক্তার অধিকার বজায় থাকবে। বিসেফ ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি আতাউর রহমান মিটন সংগঠনের পক্ষে তাঁর বক্তৃতায় বলেন, পূর্ববর্তী সময়ে খাদ্যবিষয়ক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরস্পর ছাড়া ছাড়া ছিল। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এখন তা সমন্বিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। ভেজাল প্রতিরোধে দেশে একাধিক আইন আছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার প্রয়োগ নেই। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আইনে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ ও নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ বা এ জাতীয় স্বাস্থ্যকর খাদ্য পাওয়ার লক্ষ্যে করা একাধিক আইনে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের যথাযথ পদক্ষেপ নেই। দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। কারিগরি সহায়তা ছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার হতে পারেন। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ ঢাকায় বসে কাজ করায় জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে আইনের সমন্বয় হচ্ছে না। ভেজাল প্রতিরোধে সংগঠনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ইউনিয়নভিত্তিক কৃষক সমবায় সমিতি গঠনকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। সরকার খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারে। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নিরাপদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় কৃষিজ সামগ্রীর দাম কমাতে এসব পন্যের ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নেয়া যেতে পারে। শহীদুল ইসলাম নামে একজন সাধারণ ভোক্তা বলেন, ভোক্তার অধিকার রক্ষা এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। জনগণ যাতে পণ্যের বিষয়ে সকল তথ্য পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে সরকারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষকে রক্ষা এখন সময়ের দাবি। ওই মতবিনিমিয় সভায় একাধিক কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, বিএসটিআই কর্মকর্তা, সমাজ সচেতনতামূলক সংগঠনের কর্মীদের উপস্থিতিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ ড. সাইদ মনোয়ার হোসাইন, ড. জয়নুল আবেদিন ও রফিকুল ইসলাম চৌধুরী।
×