ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াহিদুল হকের আজ জন্মদিন

বাঙালীর সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ চেতনার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ মার্চ ২০১৫

বাঙালীর সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ চেতনার প্রতিনিধি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর সামগ্রিক সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ চেতনা ও সংগ্রামী যুগের বলিষ্ঠ প্রতিনিধি বিশিষ্ট চিন্তক ওয়াহিদুল হকের জন্মদিন আজ ১৬ মার্চ। ১৯৩৩ সালের এই দিনে ঢাকা জেলার ভাওয়াল মনহরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পেশায় সাংবাদিক হলেও, নিজের ভেতর বহু গুণের দুর্লভ সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন ওয়াহিদুল হক। বিশিষ্ট এই রবীন্দ্র গবেষক সঙ্গীতজ্ঞ ও সংগঠককে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে আজ বাঙালী। ওয়াহিদুল হক আরমানিটোলা গবর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। ছাত্রজীবনেই যুক্ত হন সাংবাদিকতার সঙ্গে। প্রায় ৫৪ বছর এ পেশায় ছিলেন। ষাটের দশকে দি অবজারভারের শিফট্ ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মর্নিং নিউজ ও দ্য ডেইলি স্টারের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। দি পিপলস্ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাহসী কলামিস্ট হিসেবে তাঁর ছিল বিপুল গ্রহণযোগ্যতা। দৈনিক জনকণ্ঠে তাঁর লেখা ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ কলামটি দারুণ পাঠকপ্রিয় হয়েছিল। ভোরের কাগজ পত্রিকায় লিখতেন ‘এখনও গেল না আঁধার’ শিরোনামে। এসব লেখায় সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি সংস্কৃতি নিয়ে লিখতেন তিনি। মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কলম সোচ্চার ছিল সব সময়। এর বাইরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ১০ বছরেরও বেশি সময় খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তবে ওয়াহিদুল হকের মূল বিচরণ ছিল সংস্কৃতি অঙ্গনে। তিনি বাঙালীর শুদ্ধ সংস্কৃতিকে বুকে লালন করতেন। সচেতনভাবে প্রচার করতেন। তারচেয়ে বড় কথা, সঙ্গীত ও সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন তিনি। সংগঠক হিসেবে নেতৃত্বের জায়গায় তাঁর কোন তুলনা ছিল না। বাঙালীর বাতিঘর ছায়ানট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ছায়ানট-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ সাল থেকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন সহ-সভাপতির দায়িত্বে। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। মুকুল ফৌজ কিশোর সংগঠনের কর্মী তিনি। বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটি পরে বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদেরও তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাঁর উদ্যোগেই প্রথম বসন্ত উৎসব উদ্যাপন করা হয়। ওয়াহিদুল হক সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশনের (বর্তমান আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। শিশু আবৃত্তি সংগঠন শিশুতীর্থ ও আনন্দধ্বনির প্রতিষ্ঠাতা। আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি। ২০০১ সাল থেকে আমৃত্যু নালন্দা স্কুলের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ওয়াহিদুল হক বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চেতনা ধারায় এসো, গানের ভিতর দিয়ে, সংস্কৃতিই জাগরণের প্রথম সূর্য, প্রবন্ধ সংগ্রহ, ব্যবহারিক বাংলা উচ্চারণ অভিধান ও সংস্কৃতির ভুবন। আবৃত্তি ও গানের সিডিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ সকল কাঁটা ধন্য করে, আজ যেমন করে গাইছে আকাশ, আছ অন্তরে, ও রবীন্দ্রনাথের কবিতা। ওয়াহিদুল হক সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। দুই বছর পর ২০১০ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এর আগে ২০০০ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ওয়াহিদুল হক ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রয়াণে দারুণ এক শূন্যতা সৃষ্টি হয় গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
×