ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গর্বিত ব্রেন্ডন টেইলর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ মার্চ ২০১৫

গর্বিত ব্রেন্ডন টেইলর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শনিবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। তবে ম্যাচ আসলে জমিয়ে দিয়েছিলেন জিম্বাবুইয়ের অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। সত্যিকারের ট্র্যাজিক হিরো। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারলেন না তিনি। তারপরও ক্যারিয়ারের শেষ একদিনের ম্যাচে শতরানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দেয়ায় ব্রেন্ডন টেইলরের প্রশংসা করেছে ক্রিকেট দুনিয়ার অনেক তারকাই। ঘোষণাটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। একাদশতম বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিই ছিল তার ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। আর এদিনই জ্বলে উঠলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে করলেন ১৩৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। আর কখনই তিনি নিজের দেশের হয়ে খেলবেন না। এখন থেকে খেলবেন ইংল্যান্ডে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে। সেখানে ৩ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন। তবে ভারতের বিপক্ষে ব্রেন্ডন টেইলর যেন এদিন অন্যরকম একটা দাগ রেখে গেলেন। আসলে প্রচ- আত্মবিশ্বাস না থাকলে এমন চোখ ধাঁধানো স্ট্রোক নেয়া কঠিন। গ্যারি সোবার্স, রিচার্ড হ্যাডলির নটিংহ্যামশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব ব্রেন্ডনকে নিয়ে যে ভুল করলেন না তা দারুণভাবেই প্রমাণ করে গেলেন টেইলর। একদিনের ক্রিকেটে, তাঁর অষ্টম তিন অঙ্কের ইনিংস খেলার মাঝে ড্রাইভ, কাট, পুল, সুইপ, রিভার্স সুইপের প্রদর্শনী মেলে ধরে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কের দর্শকদের প্রবল আনন্দ দিয়ে গেলেন। আউট হওয়ার পর তিনি যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, তখন গোটা স্টেডিয়ামের ভারতীয় সমর্থকরাও দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। শুধু গ্যালারিতে থাকা ভক্ত-অনুরাগীরাই নন, মাঠের সুরেশ রায়না-রিবাট কোহলিরাও তাঁকে পিঠ চাপড়ে দিলেন। দেশের হয়ে শেষ খেলায় শুধু সেঞ্চুরি করার জন্য নয়, বরং এমন একজন ক্রিকেটার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবেন না, এটা জানার পর থেকে অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। আর তার প্রতি এমন সম্মান প্রদর্শন করায় গর্বিত ব্রেন্ডন টেইলর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে তাদের স্পর্শ আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তারা অনেক বড় মাপের ক্রিকেটার, বিশ্বব্যাপীই সুনাম রয়েছে তাদের; তারা এমনটি না করলেও পারত। কিন্তু সত্যিই আপনি যখন আপনার প্রচেষ্টার মূল্যায়ন পাবেন তার অনুভূতিটা অন্যরকম।’ এ সময় ব্রেন্ডন টেইলর আরও বলেন, ‘স্পষ্টতই জানি যে তারা আমাকে সমর্থন করে। কিন্তু তারা যখন চমৎকারভাবে দাঁড়িয়ে হাততালি প্রদর্শন করে তা দেখতে সবসময়ই ভাল লাগে। তারা যেভাবে আমাকে সাড়া দিয়েছে তা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত এবং আমি খুবই গর্বিত অনুভব করি।’ জিম্বাবুইয়ের ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই ম্যাচে শতরানের ইনিংস খেলেন ব্রেন্ডন টেইলর। শুধু তাই নয়, ব্রেন্ডন টেইলরের আগে মাত্র ৭ ব্যাটসম্যান তাঁদের ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। টেইলরের আগে অবশ্য জিম্বাবুইয়ের চার ব্যাটসম্যান তিন অঙ্কের কোটা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন, এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ডেব হটন, নেইল জনসন এবং ক্রেইগ উইশার্ট। আর বিশ্বের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শতরানের ইনিংস খেলেন টেইলর। তার একদিন আগেই বিরল এই কীর্তি গড়েন বাংলাদেশের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান রিয়াদ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করেন টেইলর। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচ খেলে ৪৯৬ রান সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে আছেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা। আর দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে রেখেছেন ব্রেন্ডন টেইলর। ছয় ম্যাচে ছয় ইনিংসে তার মোট রান ৪৩৩। এখানে দ্বিতীয় হলেও জিম্বাবুইয়ের ইতিহাসে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে এখন টেইলর। এর আগে এই স্থানটি দখল করে রেখেছিলেন নেইল জনসন। কিন্তু দুর্ভাগ্য টেইলরের। দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও দুটি ম্যাচেই পরাজয় দেখে তাঁর দল।
×