ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘ডু অর ডাই ম্যাচে’ আইরিশ-বধের নায়ক সরফরাজ (১১*), শুক্রবার তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া

কো. ফাইনালে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ মার্চ ২০১৫

কো. ফাইনালে পাকিস্তান

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ সকল সমীরণের ফয়সালা করে দিল পাকিস্তান। রবিবার বিশ্বকাপে পুল পর্বের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল মিসবাহ-উল হকের দল। শেষ আটের পথে ম্যাচটি দু-দুলের জন্যই ছিল ‘ডু অর ডাই’, যেখানে ‘করে দেখাল’ পাকিরা। বিপরীতে বড় হারে চমকের ইতি টানল আইরিশরা। কাল মিসবাহ বাহিনী খেলেছে ফেবারিটের মতোই। শুরুতে প্রতিপক্ষকে ২৩৭ রানে অলআউট করে রাস্তা তৈরি করে দেন বোলাররা। এরপর দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সফল সমাপ্তি টানেন ‘ম্যাচের নায়ক’ সরফরাজ আহমেদ (১০১*)। ৪৬.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। ভেস্তে যায় আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের চিত্তাকর্ষক সেঞ্চুরির ইনিংস (১০৭)। শুক্রবার তৃতীয় কোয়ার্টারে এই এ্যাডিলেড ওভালেই সেমির টিকেট পেতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়বে পাকিস্তান। অবশ্য টস জিতে ব্যাটিং নেয়া আয়ারল্যান্ডের হয়ে আর কেউই সুবিধা করতে পারেননি। ম্যাচে মূল লড়াইটা ছিল আইরিশ ব্যাটিং বনাম পাকিস্তানী বোলারদের, সেখানেই ব্যর্থ তারা। একপ্রান্তে নিজের মতো করে খেলে গেছেন পোর্টারফিল্ড, অন্যপ্রান্তে পাকিদের পেস তা-বে খাবি খেয়েছেন বাকিরা। নইলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। দলীয় ১১ রানে প্রথম, ৫৬ রানে দ্বিতীয় ও ৮৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। ৩ রান করা পল স্টারলিংকে তুলে নেন বিশ্রামে থাকা পেস তারকা মোহাম্মদ ইরফানের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া এহসান আদিল। এরপর ব্যক্তিগত ১১ রানে উইকেটের পেছনে উমর আকমলের হাতে ক্যাচ বানিয়ে এড জয়েসকে ফেরান ওয়াহাব রিয়াজ। ১২ রানে নাথান ও’ব্রায়েনকে তুলে নিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে তুলে নেন রাহাত আলি। ভরসার জায়গা থেকে প্রত্যেক পেসার দারুণ বোলিং করেন। এরপর দুটি প্রায় হাফ সেঞ্চুরির জুটি হলেও সেটিকে বড় করতে পারেনি আইরিশরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে ছয় নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গ্যারি উইলসনের ব্যাট থেকে। পোর্টারফিল্ডের কথা আলাদা করে না বললেই নয়। ক্যারিয়ারের ৭ম সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পথে ১৩১ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ রান করেন তিনি। তাঁকে সাজঘরে ফেরান সোহেল খান। আয়ারল্যান্ড তো বটেই, আইসিসির সহযোগী কোন দেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির অনন্য নজির স্থাপন করেন ৩০ বছর বয়সী এ বাঁহাতি। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৪৯ রান দেন পাকিস্তানী বোলাররা। পোর্টারফিল্ডের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ম্যাচের পার্থক্য গড়ে যায় ওখানেই। ফল : ঠিক ৫০ ওভারে ২৩৭ রানে অলআউট আইরিশরা। ওয়াহাব রিয়াজ ৩টি, সোহেল খান ও রাহাত আলি প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট। জবাব দিতে নেমে ব্যাট হাতে পাকিদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। যে ওপেনাররা চলতি বিশ্বকাপে আগের পাঁচ ম্যাচ মিলে করেন ৫২, সেই তাঁরাই অসাধারণ। সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে জ্বলে ওঠেন আহমেদ শেহজাদও। ওপেটিং জুটিতে ১২০ রান যোগ করেন তাঁরা! ৭১ বলে ৭ চারের সাহায্যে ৬৩ রান করে আউট হন শেহজাদ। ভারতের বিপক্ষে ৪৭-এর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ে ম্যাচে ফিরেছিলেন ১ ও ০ রানে। দুর্বল আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৯৩ রানের ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ১৮। কালকের চমৎকার এই ইনিংস পাকিস্তানের ওপেনিং সমস্যার সমাধান করবে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের কঠিন ম্যাচে। অন্যদিকে কোন প্রশংসাই সরফরাজের জন্য যথেষ্ট নয়! ওপেনিংয়ে শেহজাদের সঙ্গে ‘বুড়ো’ ইউনুস খানকে দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে অথচ প্রথম চার ম্যাচে তাঁকে দলেই রাখা হয়নি! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কঠিন ম্যাচে নেমেই করেন ৪৯ রান, উইকেটের পেছনে ৬ ক্যাচের অনন্য রেকর্ড গড়ে হন ম্যাচসেরা অথচ সেটিই ছিল তাঁর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। সেই ধারা অব্যাহত রেখে ফের মাত করলেন ২৭ বছরের করাচী প্রতিভা। খেললেন অপরাজেয় ১০১ রানের চমৎকার ইনিংস। ১২৪ বলে ৬ চারে সাজানো তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর (ইমরান নাজির) কোন পাকিস্তানীর সেঞ্চুরিও এই প্রথম! শেষ দিকে উমর আকমল (২৯ বলে ২০*) ‘বিগ হিটে’ না গিয়ে স্ট্রাইক দেয়ার তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন সরফরাজ। ম্যাচ শেষে বোলারদের পাশাপাশি সরফরাজেরও প্রশংসা করেন মিসবাহ। পাক অধিনায়ক বলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে এটি ছিল আমাদের জন্য বড় চাপের ম্যাচ। শুরুতে কাজটা সহজ করে দিয়েছে বোলাররা। ভাল বল করেছে রিয়াজ, রাহাত ও সোহেল প্রত্যেকে। এরপর ব্যাট হাতে শেহজাদের ফেরাটাও লক্ষণীয়, সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং করেছে সরফরাজ।’
×