ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমার বাবা বিজয় দাসকে সিরাজ মাস্টারসহ অন্য রাজাকাররা হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৭ মার্চ ২০১৫

আমার বাবা বিজয় দাসকে সিরাজ মাস্টারসহ অন্য রাজাকাররা হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আবদুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৯তম সাক্ষী সুকুমার দাস জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার বাবা বিজয় দাসকে আসামি সিরাজ মাস্টারসহ অন্য রাজাকাররা চুলকাঠি বাজারের কাঠের ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করেছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছে। আরেক মামলায় পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী পুষ্প রানী কর্মকার জবানবন্দীতে বলেছেন, ফোরকানসহ অন্য রাজাকাররা আমার বোন শোভা ও ভাইয়ের স্ত্রী সুষমাকে তুলে নিয়ে যায়। একদিন পর তাদেরকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। তাদের যে অবস্থা হয়েছিল তা বর্ণনা করার মতো নয়। তাদের যে চিকিৎসা করেছিল সেই দেবেন ডাক্তার ও তার স্ত্রীকেও রাজাকাররা হত্যা করেছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেন। অসমাপ্ত জেরা বুধবার আবার শুরু হবে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছে। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত হবিগঞ্জের দুই সহোদর রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াকে সেফহোমে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এই দুই আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার ক্ষেত্রে যা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আবদুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৯তম সাক্ষী সুকুমার দাস জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আমার নাম সুকুমার দাস। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৬ বছর। আমার ঠিকানা- গ্রাম রণজিতপুর, থানা ও জেলা-বাগেরহাট। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স আনুমানিক ১১/১২ বছর ছিল। সে সময় আমি বাবাকে সাংসারিক কাজকর্মে সহযোগিতা করতাম। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষী এই জবানবন্দী প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুর হক সুমন। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবুল হাসান। সুকুমার দাস তার জবানবন্দীতে বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক বৃহস্পতিবার আনুমানিক বেল ১১/১২টার দিকে আসামি সিরাজ মাস্টার, রজব আলী ফকির, আকিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল রাজাকার আমাদের গ্রামের দক্ষিণ দিক যৌখালী নদীর দিক হতে এসে আমাদের রণজিতপুর গ্রাম আক্রমণ করে। তারা গ্রামে এসে গ্রামের বাড়ি-ঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচারে প্রায় ৪০/৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসী যাদের সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ছিল তাদের হত্যা করে। আমরা বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন ঐ দিন রাতেই বাড়ি-ঘর ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী ঘনশ্যামপুর গ্রামে মামা সন্তোষের বাড়িতে আশ্রয় নেই। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর তারিখে আগের দিন ঘনশ্যামপুর স্কুলে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের গোলাগুলি হয়। একই তারিখে সকালের দিকে একদল রাজাকার আমার বাবা বিজয় দাসকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে চুলকাঠি বাজারে নিয়ে যায়। আমার বাবাকে যখন রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায় তখন আমি পিছু পিছু যেতে থাকলে রাজাকাররা আমাকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি যেতে বললে আমি ভয়ে বাড়ি ফিরে আসি। ঐ দিন রাতের বেলা আমার মামার এক বন্ধু যিনি পেশায় মুচি ছিলেন তার কাছে সংবাদ পাই যে, আসামি সিরাজ মাস্টার, রাজাকার রজব আলী ফকিরসহ তাদের সহযোগী রাজাকাররা আমার বাবাকে চুলকাঠি বাজারের কাঠের ব্রিজের কাছে হত্যা করেছে। পরদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি আমার বাবার লাশ খুঁজে পাইনি। তবে রক্ত দেখেছি। ভাটার টানে খালে থাকা বাবার লাশ ভেসে গিয়েছিল। ফোরকান মল্লিক ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী পুষ্প রানী কর্মকার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেছেন। অসমাপ্ত জেরার জন্য বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর মোখেলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম।
×