ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৭ মার্চ ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

বসন্ত ফুরাল বলে। সেদিনও প্রিয়জন কানে কানে বললেন- অপার্থিব আনন্দে ফুটছে ফাল্গুন। আর আজ করতে হচ্ছে কাউন্টডাউন! চৈত্র শুরু হয়ে গেছে যে! বিদায় নেবে বসন্ত। অনেকে বলতে পারেন, পঞ্জিকা মেপে বসন্ত আসে নাকি? কিংবা বিদায় নেয়! না, তা সত্য নয় বটে; তবু মিথ্যেও বা বলি কী করে জলবায়ু বদলে যাওয়া এই দেশে। ঢাকা এখন রীতিমতো হাঁসফাঁস করছে দিনের বেলার গরমে। পারদ পঁয়ত্রিশের দাগ ছুঁয়ে ফেলবে বলে মনে হচ্ছে। চৈত মাসের শুরুতে ঢাকা এত উষ্ণ হয়ে উঠলে জ্যৈষ্ঠে তার কী দশা হবে ভেবে শঙ্কিত বোধ করি। পরের কথা না হয় পরে ভাবা যাবে। আমাদের মনের ভেতর যে চিত্রল চৈত্র রয়েছে তার উদ্দেশে বরং নিবেদন করি রবি-কবির কয়েকটি চরণ : চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে। মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মৌমাছিদের পাখায় পাখায়, ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিঃশ্বাস- মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ। গ্রীষ্মবান্ধব শরবত-মামারা এপ্রিল আসার ঢের বাকি। তন্দুর তৈরির উনুনের মধ্যকার গনগনে আঁচের মতো দিনগুলো এখনও আসেনি। তবু ঢাকা মহানগরীতে এসে পড়েছেন শরবত-মামারা। ফুটপাথের ওপর তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। আগে গ্রীষ্মকালে রাজধানীর রাজপথে বেশি দেখা যেত আখের রস খাওয়ার তোড়জোড়। ছাল বের করে ফেলা কঞ্চিসম লম্বা লম্বা আখের ধড় ঢুকিয়ে দেয়া হতো একটানা বিচিত্র শব্দ তোলা দুই চাকাঅলা মাড়াই কলে। চিড়ে চ্যাপ্টা করে আখের সবটুকু রস নিংড়ে বের করে আনা হতো। সত্যিমিথ্যে জানিনে, সেই ছেলেবেলাতেই শুনেছিলাম গ্লাসের মধ্যে স্যাকারিন দেয়া থাকে আগে থেকেই। তাই আখের রস এত মিঠা লাগে। দেখতে দেখতে ঢাকার রাস্তায় আখের রস বিক্রি কমে এলো। সেই জায়গা দখল করতে চলেছে বোধকরি লেবুর শরবত। কোন যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ছে না। হাতেই তা তৈরি করা যায়। আখের বাতিল ছোবড়ার জঞ্জাল জমানো আর জায়গা মতো সেই আবর্জনা ফেলে দেয়ার ঝক্কি নেই। কচলানো লেবু আর কতটা জায়গা নেয়। অবশ্য বলছি বটে লেবু কচলানোর কথা, আসলে তার বালাই নেই। চাপ-দেয়া হ্যান্ডি কলের পেটে গোটা কিংবা আধ টুকরো লেবু ঢুকিয়ে এক চাপে তার রস বের করে ফেলা সম্পূর্ণ ঝক্কিহীন। চাকা লাগানো কাঠের পাটাতনের ওপর শরবতের দোকান সাজিয়ে বসতে আলাদাভাবে লাগে কেবল পানির ফিল্টার; অবশ্য তার ওপরের কম্পার্টমেন্টে একতাল জমাট বাঁধা বরফ থাকা চাই। প্রচ- গরমে হিমশীতল না হোক মোটামুটি ঠা-া লেবুর শরবতের কদরই আলাদা। কোন কোন শরবতওয়ালা আবার চিনি দেয়া লেবুর পানির ভেতর সামান্য টেস্টিং সল্টও দিয়ে থাকেন। কাঠের পাটাতনের অনেকটা জুড়ে রাখা হয় সবুজ লেবুর স্তূপ। কাকলীর মোড়ে যে শরবত-মামাকে দেখলাম তাঁকে আমি রুচিবানই বলব। তিনি সবুজাভা বাড়িয়েছেন সবুজ লেবুর পাশে ছোট্ট সবুজ বালতি রেখে। চাকাওয়ালা কাঠের গাড়ি নয়, তিনি টেবিল পেতেই বসেছেন। বসেছেন বলাটাও ভুল, তিনি সারাক্ষণ দাঁড়িয়েই থাকেন দুই হাত সামনে বাড়িয়ে টেবিলের ওপর ভর দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে। টেবিলের সামনের অংশটায় আবার লাল কাপড় ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আর যে জায়গাটা তিনি বেছে নিয়েছেন সেখানে টেবিলের মাপের চাইতে দ্বিগুণ আড়াই গুণ বড় রঙিন দেয়ালচিত্র রয়েছে। ঢাকার রাস্তায় দেয়ালচিত্র! না চমকে ওঠার কিছু নেই, ওটা একটা কোচিং সেন্টারের রঙিন দেয়াল-বিজ্ঞাপন। সব মিলিয়ে শরবত বিক্রির জায়গাটা একটা ছোটখাটো অস্থায়ী দোকানের আদল পেয়েছে। মাত্র পাঁচ টাকায় ঠা-া এক গ্লাস লেবুর শরবত কেনার লোকের তেমন অভাব ঘটছে না (শুনেছি কোথাও কোথাও আবার দশ টাকায় বিকোচ্ছে এক গ্লাস)। রাজধানীর লাখো কর্মসন্ধানী ভাসমান গরিব মানুষের জীবনসংগ্রামের ভেতর চৈত্র এসেছে দুঃসহ গরমের কঠিন কামড় নিয়ে। তাদের পাশে এই শরবত-মামারাও আছেন স্বস্তিদানকারী বান্ধব হয়ে। ঘর্মাক্ত মানুষকে সরাসরি তৃপ্তি দানের মতো পেশায় যুক্তদের মনের স্বস্তিটার খোঁজ কি কেউ রাখে? রমনার রমণীয় উজাড় সৌন্দর্যের বাগান যেন রাজধানীর একেকটা পার্ক। তবু বসন্তকাল এলে অনেক কবি-সাহিত্যিকই যান উদ্যানে সামান্য শান্তির আশায়। গত সপ্তাহে রমনা গিয়েছিলেন লেখক ফারুক মঈনুদ্দীন। বিদেশের বহু পার্কে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাধারী একজন ব্যক্তি। তাঁর জবানিতেই শোনা যাক রমণীয় রমনায় অভিজ্ঞতার একচ্ছত্র : ‘রমনা পার্কে ছবি তুলছিলাম। নাগলিঙ্গম ফুলের ছবি তোলার সময় কয়েকজন কৌতূহলী ভ্রমণকারী এসে দাঁড়ালেন, ছবি তোলা শেষ করে ভিউ ফাইন্ডার থেকে চোখ সরাবার পর একজন জানতে চাইলেন, ভাই, কী ফুল এইগুলা? বললাম, নাগলিঙ্গম। পাশ থেকে আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন, এইগুলা কি খাওয়া যায়? আমি তাজ্জব। একটা অপরিচিত ফুল দেখে খাওয়ার কথা মনে পড়ে যাদের, তারা কী প্রকৃতির মানুষ। একটু মজা করে বলি, সব কিছু কি খেতে হয়? শুধু চোখে দেখলে হয় না? তারা কী বুঝলেন কে জানে। আমরা যে যার পথ ধরি। পরে দেখি আরেকজন হাঁটা শেষ করে উদোম গায়ে নাগলিঙ্গম ফুল পাড়ার চেষ্টা করছেন। বুঝলাম, ইনিও খাদকশ্রেণীর একজন। তার ভুঁড়িটা দেখলেই বোঝা যায়।’ ঢাকাবাসীর নদী আঁধারের চেয়ে কালো আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ছিল শনিবার। আগের দিন শুক্রবারে সদরঘাটে যাওয়ার সুবাদে বুড়িগঙ্গা দর্শনের সুযোগ হলো। এটাকে সৌভাগ্য হিসেবে দেখতে পারছি না। অথচ সেই আশির দশকে ছাত্রাবস্থার দিনগুলোতে সময় ও সুযোগ পেলেই চলে যেতাম সদরঘাটে শুধু নদীসান্নিধ্য উপভোগের জন্যই। যেন অন্ধকারের চেয়েও কালো হয়ে পড়েছে বুড়িগঙ্গার জল। আর কী বিশ্রি পচা গন্ধ! নদীর প্রতি আমরা দায়িত্বশীল থাকতে পারিনি। নদী যেমন নিরন্তর তার সিঞ্চনে ও সম্পদে আমাদের উপকার করে চলেছে, তেমনি আমাদেরও উচিত ছিল মাস কিংবা মৌসুম ভেদে নদীর ব্যাপারে বিশেষ সচেতন থাকা। বহুমাত্রিক ব্যস্ততার এই যুগে নদীর প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত শুধু নয়, সত্যিকারের কিছু করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে ‘নদীমাতৃক’ হলেও সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে আমরা ইতোমধ্যে নিজেদের নদীবৈরী জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রমাণ করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলো আঞ্চলিক রাজনীতি এবং বহুজাতিক পুঁজির সর্বনাশা সম্প্রসারণেরও শিকার হয়েছে। নদীখেকোদের দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই। নদীর দুর্গতির জন্য কর্তৃপক্ষীয় অমনোযোগিতার পাশাপাশি নাগরিক অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। আমরা যেভাবে সভ্যতা, কৃষি, যোগাযোগ, জীববৈচিত্র্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নদীর কাছে ঋণী, আর কোন দেশ ততটা নয়। আবার নদীর প্রতি আমাদের ঔদাসীন্যেরও জুড়ি মেলা কঠিন। আশার কথা, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাম্প্রতিককালে নদীবিষয়ক সক্রিয়তা বেড়েছে। বেড়েছে গণমাধ্যমের মনোযোগও। এখন যদি নাগরিকরা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়, মুমূর্ষু নদীগুলোকে স্বচ্ছতোয়া স্রোতস্বিনীতে রূপান্তর অসম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করি, নদী আমাদের ডাকছে; এখন সাড়া দিতে হবে। সাড়া নানাভাবে দেয়া যায়। সচল নদী আমাদের অধিকার, ওই অধিকার নিশ্চিত করতে নদীর ডাকে সাড়া দিয়ে, নদীর জন্য কাজ করে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কর্মীরা নদীর জঞ্জাল সরানোর কাজে আক্ষরিক অর্থে হাত লাগাতে পারেন। নদীর কল্যাণের জন্য প্রতীকী হলেও অন্তত কিছু কাজ আমরা সাধারণ নাগরিকরা করতে পারি। নদীবিষয়ক সাহিত্য, প্রবন্ধ লিখে কিংবা পড়ে, নদীবিষয়ক চলচ্চিত্র দেখে, নদীর ছবি তুলে কিংবা চিত্র এঁকে, নদীতে বেড়াতে গিয়ে, নদীর কথা আলোচনা করা যেতে পারে। অনুজ ও বিদ্যার্থীদের নদী রক্ষার শপথ করানো যেতে পারে। মা-বাবা তাঁর সন্তানকে নদী-সংবেদনশীল হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিতে পারেন। আমরা কথায় কথায় বলি, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু এই জননীর জন্য আমরা কতটুকু করতে পেরেছি? করার আছে অনেক কিছু। নারীর নির্মাণ : চলচ্চিত্র প্রদর্শনী টেলিভিশনের দুই নারীকর্মী উদ্বুদ্ধ করলেন শনিবার ঢাকায় শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উৎসবে যেতে। শাহবাগের গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখি উৎসবের তেমন ছটা নেই। তথ্যমন্ত্রী বক্তৃতা করছেন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই দর্শকসংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এলো। বেশ খানিকটা বিরতি দিয়ে যখন চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হবে সেসময় চারপাশে খুঁজলাম কোন নারী চলচ্চিত্রকারের দেখা মেলে কিনা। না, পেলাম না। নারী দর্শকও যথেষ্ট কম। অথচ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল দর্শনী ছাড়াই নারীরা সিনেমা দেখতে পারবেন এই উৎসবে। বিসমিল্লায় গলদ যাকে বলে, নির্ধারিত ছবি ‘আকাশ কত দূরে’ প্রদর্শনে অপারগতা প্রকাশ করা হলো মঞ্চ থেকে। কারণ কারিগরি ত্রুটি। বিদেশী একটি প্রামাণ্য চিত্র চালিয়ে দেয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে হুট করে আবার সেটা বন্ধ করে দিয়ে ‘আকাশ কত দূরে’র প্রদর্শন শুরু হলো। এক ফাঁকে উৎসব অফিসে গিয়ে দেখি বেশ খাঁ খাঁ অবস্থা। চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের একাংশ এলেই তো মিলনায়তনের অর্ধেকটা অন্তত পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। শনিবার বহু প্রতিষ্ঠানেই ছুটি থাকে। তারপরও দর্শক সমাগম কম দেখে একটু অবাকই হলাম। ইংল্যান্ড বধে ঘোড়ার গাড়ির র‌্যালি এক সময় ঢাকাবাসীর অন্যতম বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। বাহারি ঘোড়ার ঢাকাইয়া যাত্রী ও গাড়োয়ানদের রসবোধ নিয়ে কত মজার গল্পই না চালু আছে। ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ির সেই চল প্রায় উঠে যেতে বসেছে। তারপরও মাঝেমধ্যে নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা কিংবা বিশেষ কোন প্রচারণায় ঢাকঢোল সহযোগে সারি বেঁধে ঘোড়ার গাড়ির চলাচল আধুনিক ঢাকাবাসীদের চমকে দেয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ড বধের পর ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ঘোড়ার গাড়ির র‌্যালি নিয়ে বিজয় মিছিল পথচারীদের প্রচুর বিনোদন দিয়েছিল। এ নজরকাড়া শোভাযাত্রা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে। উৎসবের রঙে সাজানো হয়েছিল ঘোড়ার গাড়িগুলোকে। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দেশের ক্রিকেটারদের জার্সি গায়ে সেই গাড়িতে চেপে সহাস্যে উল্লাস প্রকাশ করেছিল তরুণ ক্রিকেটপ্রেমীরা। ব্যান্ড পার্টির বাদ্যে চারদিকে এক ভিন্নতর আমেজ বিরাজ করছিল। পরশু বৃহস্পতিবার ভারতকে হারিয়ে আরেকটা বিশাল র‌্যালির সুযোগ করে দিক বাংলাদেশের টাইগাররা- এটাই প্রত্যাশা। পথে পথে দুর্গন্ধ ও কুশ্রিতা ফের রবিবার থেকে হরতাল, ফের তীব্র যানজট। ফুটপাথ ও রাস্তায় পিঁপড়ের সারির মতো মানুষের আনাগোনা সন্ধেবেলা অফিস ছুটির পর। গায়ে গা লাগা দশা। চরম বিরক্তিকর। ঢাকা নগরীর অধিকাংশ বহিরাগতই এসেছেন গ্রাম থেকে। গ্রামে বাড়ি হলেই গ্রাম্য হবেন এমন কোন কথা নেই। আবার নগরে জন্ম নিলেও বহুজনই নাগরিক হয়ে ওঠেন না। ঢাকার রাস্তায় যারা পথ চলেন তাদের ভেতর নাক-ঝাড়া আর থুতু ফেলার রোগ আছে প্রচুর লোকের। তারা আড়াল আবডাল খোঁজেন না, গর্ত কিংবা নর্দমাও নয়। পথের ওপরেই নাক ঝাড়েন, থুতু ফেলেন। ঠিক পাশেই যদি আপনি থাকেন, তাহলে নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তা না হলে গায়ে বা কাপড়ে এসে পড়তে পারে দেহ-বর্জ্য। গাড়ির ভেতরে থাকলে ধোঁয়াধুলো ছাপিয়ে দুর্গন্ধ নাকে আসে না। কিন্তু ঢাকার বড় বড় রাস্তায় হাঁটার সময় অবধারিতভাবে আপনার নাকে এসে লাগবে বিচিত্র দুর্গন্ধ। মানুষের মলমূত্র আর খাবারের পচনশীল উচ্ছিষ্টের দুর্গন্ধে ঢাকার নবাগত আগন্তুকের বমনের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। তবে অনেকেরই এসব সয়ে যায় কালেকালে। তা না হলে রাস্তায় নাক চেপে বা নাক ঢেকে ক’জনকেই বা আপনি পথ চলতে দেখেন! ফেসবুকে ঢাকার কড়চা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিলবোর্ড নিয়ে দু’কথা লিখেছিলাম আগের কলামে। এক সপ্তাহের ভেতর প্রভূত উন্নতি হয়েছে বিলবোর্ডের প্রচারণা শোভা ও বক্তব্যের। একজন ব্যবসায়ী নেতা ‘আমরা ঢাকা’ ব্যানারে প্রচার চালাচ্ছেন। তুলে ধরছেন মহানগরীর নানা সমস্যা ও সঙ্কট শনাক্তের কথা, আর অঙ্গীকার করছেন সমাধানের পথে যাত্রার। দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতোই। আর সাবেক মেয়রপুত্র বাবার ছবির পাশে নিজের ছবি দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জনতার পাশে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আরেকটি বিলবোর্ডে শিশুকন্যার সঙ্গে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল আলোকচিত্র চলতি পথে পথিকের খানিকটা ভাললাগা এনে দিচ্ছে। ঢাকার দিনরাত কলামে ঢাকা নিয়ে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্ট/স্ট্যাটাস মাঝেমধ্যে তুলে ধরার ইচ্ছে রাখি। নগরপিতার দৌড়ে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে তরুণ কবি আহমেদুর রশীদ টুটুলের বক্তব্য এখানে তুলে দিলাম : ‘মেয়র হতে আগ্রহীরা এর মধ্যেই নিজেদের সুখী সুখী, নাদুসনুদুস ছবি আর নাগরিকদের সুখ-সুবিধার নানা গালভরা অঙ্গীকারের বাণী দিয়ে ঢাকার বিলবোর্ডগুলোর দখল মোটামুটি নিয়ে নিয়েছেন। এর সঙ্গে আছে পোস্টার ও চিকা। টিভি চ্যানেলগুলোও এই সম্ভাব্যদের ইন্টারভিউ প্রচার শুরু করে দিয়েছে। ঢাকা এখন একটি দ্রুত বর্ধনশীল শহর। আমরা এই শহরের বসবাসকারীরা, কে না স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম শহরের! কারওয়ানবাজার, গুলিস্তানের আন্ডারপাসের রাস্তার উপরের অংশের দেয়ালগুলো টেরাকোটার ম্যুরালে সাজানো, রাস্তার আইল্যান্ডগুলো সবুজ ঘাসে ঢাকা, ফুটপাথগুলোতে নির্বিঘেœ হাঁটতে পারার সুবিধা এসব কিছুই শহর ঢাকাকে কেন্দ্র করে আমাদের ছোট ছোট স্বপ্ন। ট্রাফিক জ্যামকে সহনশীল মাত্রায় নিয়ে আসার ব্যাপারে একজন সাধারণ সিএনজি চালকও বেশ যুক্তিসঙ্গতভাবে ভাবতে পারেন। বলছিলাম মেয়র পদে আসীন হওয়ার স্বপ্নদেখা বিশিষ্টজনদের প্রচারের কথা। যাদের একজনের মুখেও এখন পর্যন্ত শুনিনি, ঢাকা শহরে তারা একটি পাঠাগার বানাবেন, মঞ্চনাটকের হল বানাবেন বা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বানাবেন। আমি মনে করি, ঢাকার চার প্রান্তে কমপক্ষে চারটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বানানো প্রয়োজন। যেখানে পাঠাগার থাকবে, নাটকের হল থাকবে, বইমেলা করার সুযোগ থাকবে এবং আড্ডা দেয়ার পরিবেশ ও সুযোগ থাকবে। এছাড়া ঢাকার শাহবাগ এলাকায় একটি আধুনিক বইয়ের মার্কেট গড়ে তোলাও সময়েরই প্রয়োজন। শাহবাগের আজিজ মার্কেটের সামনের রাস্তাটার নাম ‘কবিতা সরণি’ করলে রাষ্ট্র ও নগরের গৌরব বাড়বে বৈ কমবে না। আর টিএসসির পাশে, যে জায়গাটিতে অভিজিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে- সেখানে একটা প্রতিবাদ ও সাহসের যূথবদ্ধ উচ্চারণের প্রতীক স্থাপন করে এদেশের স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার লেখকদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোটাও আমার দৃষ্টিতে জরুরী কাজ বলেই মনে হয়। সম্মানিত মেয়র পদপ্রার্থীগণ, আপনাদের স্বপ্ন ও ভাবনায় এই বিষয়গুলো দয়া করে অন্তর্ভুক্ত করুন।’ ১৫ মার্চ ২০১৫ [email protected]
×