ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজিত হত্যাকা-ে নীরব ভূমিকার জন্য পুলিশ প্রধানের পদত্যাগ করা উচিত ছিল স্টা

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ১৭ মার্চ ২০১৫

অভিজিত হত্যাকা-ে নীরব ভূমিকার জন্য পুলিশ প্রধানের পদত্যাগ করা উচিত ছিল স্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অভিজিত অত্যন্ত মেধাবী মানুষ ছিল। সে মানুষটিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। দেশে যাতে আর কোন অভিজিতের মতো ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। রাষ্ট্রের কাজ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। যাতে করে দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। দেশের মানুষকে স্বাভাবিক মৃত্যুর গারান্টি দিতে হবে। আশা রাখি এই হত্যাকা-ের বিচারে যেন কোন পূর্বের কোন অবস্থার সৃষ্টি না হয়। হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিতকে একই জায়গায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা টিএসসির মোড় না বলে ওই মোড়কে হুমায়ুন-অভিজিত মোড় বলতে পারি। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তাটিও তাদের নামে করা হোক। ওই হত্যাকা-ে পুলিশের নীরব ভূমিকার জন্য পুলিশ প্রধানেরও পদত্যাগ করা উচিত ছিল। সোমবার রাজধানীর ডব্লুভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘অভিজিত হত্যা ও চলমান সন্ত্রাস সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক আলোজনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, জনগণকে বুঝতে হবে এই সরকারকে কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ শুরু করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, জেল হত্যার বিচার হয়েছে, হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিত হত্যাকা-েরও বিচার হবে। প্রতিটি হত্যাকা-ের বিচার করার জন্য বাংলাদেশে আইন আছে। যেহেতু আইনের শাষণে আমরা বিশ্বাস করি, সেহেতু বিচার পেতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। এই সময়টুকু আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কোন অন্যায়কারী সাজা না পেয়ে থাকতে পারবে না। বাংলাদেশে কেউ বলতে পারবে না তিনি আইনের উর্ধে, আমরা সেই বাংলাদেশ গড়ে দিয়ে যাব। বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডে আইনমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করে আরও বলেন, ড. অজয় রায়ের কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়ার অনেক কিছু রয়ে গেছে, কিন্তু তার বক্তব্যে তিনি আমাদের পাশে পাওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে গিয়েছেন। আমরা তার কাছে ঋণী হয়ে গেলাম। প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, অভিজিত অত্যন্ত মেধাবী মানুষ, সে মানুষটিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। দেশে যাতে আর কোন অভিজিতের মতো ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রের কাজ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, দেশের মানুষ যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। স্বাভাবিক মৃত্যুর গারান্টি নিশ্চিত থাকে তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের কাজ। আশা রাখি এই হত্যাকা-ের বিচারে যেন কোন পূর্বের কোন অবস্থার সৃষ্টি না হয়। অভিজিত হত্যাকা-ে পুলিশ প্রধানের পদত্যাগ করা উচিত ছিল মন্তব্য করে বিচারপতি খায়রুল হক আরও বলেন, প্রকাশ্যে জনসম্মুখে একজন মানুষকে হত্যার করা হচ্ছে, আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের কী উচিত ছিল না তাকে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া? সন্ত্রাসীদের ধরে ফেলা। কিন্তু পুলিশ এ কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই ব্যর্থতার দায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রধানের ওপর গিয়েই পড়ে। তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, তদন্তের জন্য এফবিআইকে কেন ডেকে নিয়ে আসতে হবে। ওরা যে নিয়ম মোতাবেক তদন্ত করে, আমাদের এখানে কি সেই নিয়ম মেনে তদন্ত করা যায় না। ড. অজয় রায় তার বক্তব্যে কঠিন এই সময়ে সবাইকে পাশে পাওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যারা এই কঠিন সময়ে আমার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সবার কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি রাষ্ট্রের দুটি সংস্থার উপর চরম আস্থা রাখি, পুলিশ ও বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগের উপর যেন আমরা আস্থা না হারাই তার জন্য দ্রুত সময়ে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধ ও চলমান সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে। অভিজিত একটি দর্শনের সমর্থন করে; সেই জন্য অভিজিতকে হত্যা করতে হবে ইসলামের কোথায় তা লেখা আছে। মোহাম্মদের বিদায় হজের ভাষণটি আমি বহুবার পড়েছি, সেখানে তিনি সব কিছুর উর্ধে উঠে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এখন ইসলামের নামে কি চলছে! সূচনা বক্তব্যে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির টিএসসি বলেন, অভিজিত হত্যার প্রধান আসামি ফারাবী এবং তার জঙ্গী মৌলবাদী জিহাদী ভাইরা প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের দীর্ঘকাল ধরে হত্যার কথা বলে আসছে। ব্লগ ও বিভিন্ন পুস্তিকায় তার বহু প্রমাণ আছে। কিন্তু শুধু ফারাবী একা নয়, এর পেছনে আরও বহুজন কাজ করছে। তাদের ধরতে হবে। হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিত হত্যাকা-ের ঘটনাস্থলকে তাঁদের নামে নামকরণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিতকে একই জায়গায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা টিএসসির মোড় না বলে হুমায়ুন-অভিজিত মোড় বলতে পারি। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তাটিও তাদের নামে করা হোক। বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে ওই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক হারুণ হাবীব, এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল প্রমুখ। অভিজিত ও তার স্ত্রী আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকার সময়ে মানবিক বোধে জাগ্রত হয়ে এগিয়ে আসা ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদকে এ সময় সংবর্ধনা দেয়া হয়। তাকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা, সার্টিফিকেট, নিজস্ব প্রকাশনার বই ও নগদ ত্রিশ হাজার টাকা উপহার দেয়া হয়।
×