ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে গির্জায় জঙ্গী হামলা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৮ মার্চ ২০১৫

পাকিস্তানে গির্জায় জঙ্গী হামলা

ফের সন্ত্রাসীদের বোমা বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হলো পাকিস্তানের লাহোর। রবিবার সকালে প্রার্থনা চলাকালে শহরের দুটি গির্জার ফটকে আত্মঘাতী হামলাকারীরা এই বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলায় হামলাকারীসহ প্রাণ হারিয়েছে ১৭ জন। আহত হয়েছে ৭৮ জন। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বিস্ফোরণ দুটি ঘটানো হয়। গির্জা দুটি খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ থেকে বিচ্ছিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী জামাত-উল-আহরার। জানা গেছে, পাকিস্তানে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের অধিকাংশেরই বাস এ এলাকায়। সেখানে প্রায় দশ লাখ খ্রীস্টান বসবাস করে। দেশটিতে রয়েছে দেড় শতাধিক গির্জা। হামলাকারীরা গির্জায় ঢুকতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা পেয়ে প্রবেশপথেই বিস্ফোরণ ঘটায়। পাকিস্তানের খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরনের হামলা নতুন নয়। প্রায়ই তারা উগ্রপন্থী জঙ্গীদের হামলার শিকার হয়। এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়। ঘটনাটি যে ন্যক্কারজনক অপরাধ তাতে সন্দেহ নেই। কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর এই ধরনের পরিকল্পিত হামলা উদ্বেগ এবং নিন্দনীয় বিষয়। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে পেশোয়ারের একটি চার্চে বোমা হামলার ঘটনায় ৮১ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়। বিশ্বে পাকিস্তানের আরেকটি পরিচয় পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে। এশিয়ায় দেশটি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি নানা সময়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল কায়েদা-তালেবানসহ জঙ্গীদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়দাতার অভিযোগ রয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে। খাল কেটে কুমির আনার পরিণতি যা হয় পাকিস্তান মূলত এখন সেই অবস্থায়। এই কারণে দেশটির গণতন্ত্র বার বার ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। বলা চলে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের থাবায় বিধ্বস্ত দেশটি। সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে পাকিস্তানে বার বার সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, নেতৃত্বের লোভ, অপরিণামদর্শিতা এবং বিদেশী শক্তির লেজুড়বৃত্তির কারণে রাষ্ট্রটি পালাবদলের চক্রে বেসামাল। এই সুযোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসারিত হচ্ছে। পাকিস্তানের বড় সমস্যা এখন জঙ্গীবাদ। বলা হচ্ছে, জঙ্গীবাদের জন্যই রাষ্ট্রটি আজ আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত। পাকিস্তানের অস্ত্রভা-ারে মজুদকৃত পারমাণবিক বোমা। কারও কারও মতে, নিকট ভবিষ্যতে যদি পাকিস্তানে কোন বিপর্যয় ঘটে, সেই সুযোগে এসব পরমাণু অস্ত্র জঙ্গীদের হাতে পড়াও বিচিত্র নয়। আর এটা যদি সত্যি সত্যি ঘটে, তাহলে পাকিস্তানের জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা আর হতে পারে না। ইতোমধ্যে দেশটিতে আল কায়েদাসহ তালেবানদের উপস্থিতি ও প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। খোদ আল কায়েদাপ্রধান লাদেনের অবস্থান ছিল পাকিস্তানে। এখনও দেশটির কিছু এলাকা তালেবান নিয়ন্ত্রিত। নানা সময়ে তারা ভিন্ন মতাবলম্বী বা অন্য ধর্মের লোকদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। তবে শুধু গির্জায় নয়, বিভিন্ন সময়ে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে এই জঙ্গী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে এই বর্বর হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের সোচ্চার হওয়া দরকার। তা না হলে বিশ্বটা দিনে দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এই ধরনের হামলা তথা নৃশংসতা বন্ধে দেশটির সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ সেটাই প্রত্যাশা করে।
×