ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

খালেদার গ্রেফতারি পরোয়ানা যে কোন দিনে তামিল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৮ মার্চ ২০১৫

খালেদার গ্রেফতারি পরোয়ানা যে কোন দিনে তামিল

শংকর কুমার দে ॥ যে কোন দিন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল, গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির অনুমতির বাস্তবায়ন ঘটানো হতে পারে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাস দমনে সফলতা অর্জন করার পর সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো সত্বেও মুখ থুবড়ে পড়েছে সহিংস সন্ত্রাসী আন্দোলন। উদ্বেগের সঙ্গে বেকায়দায় বিএনপি-জামায়াত জোট। গত আড়াই মাসে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তৈরি করা প্রতিবেদনে এই ধরনের তথ্যচিত্রের উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের পতন ঘটাতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে চলতি ১৫ মার্চ পর্যন্ত আড়াই মাসের বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে সহিংস সন্ত্রাসে নিহত হয়েছে ১১৯ জন। এর মধ্যে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৬৪ জন। বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনিতে মারা গেছে ৩৭ জন। সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ লাশ ও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ১৮ জন। যানবাহন আগুনে ও ভাংচুর হয়েছে ১ হাজার ১শ’ ২১টি। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই দিনমজুর, পথচারী, প্রবাসী, শিশু, নারী। তবে গত ১৫ দিন ধরে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাস বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের কোথাও প্রথম থেকেই কোন অবরোধ ছিল না, ছিল না হরতালও। তবে আতঙ্ক ছিল, ছিল উদ্বেগ। এখন দেশের কোথাও অবরোধ নেই, নেই হরতালও। এমনকি উদ্বেগ, উৎকন্ঠারও অবসান ঘটেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষয়িষ্ণু আন্দোলনে গতি আনতে বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতারের জন্যই প্রস্তুতি নিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। কিন্তু সরকারের ধীরে চলো নীতির কাছে বিএনপি-জামায়াত জোটের কূটকৌশল মার খাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে একবার আন্দোলনের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ে দলের অস্তিত্ব মহাসঙ্কটে পড়ার আতঙ্কে ভুগছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাউদ্দিন নিখোঁজ, বেগম জিয়ার পরিবারের ঘনিষ্টজন মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী, অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের আত্মগোপন, মাঠছাড়া স্থানীয় ও এলাকার নেতা-কর্মীদের কারণে বহুমুখী সঙ্কটে পড়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এই অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করা, সংলাপে বসার দাবি আদায়, বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছেন তাঁর দল ও তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্টজন ও দলের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পাওয়া এই ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিশ্ব এজতেমা, হিন্দু ধর্মালম্বীদের সরস্বতী পূজা, লাখ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট। এতে ত্যক্ত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে মানুষজন। সুযোগ পেয়েছে সরকার। জিরো টলারেন্স নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। একটু সময় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান চালানোর ফলে জেলা, শহর, বন্দর, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সহিংস আন্দোলনবিমুখ হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। কমে আসে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস, যা এখন গত এক পক্ষকাল ধরে দেশের আর কোথাও নেই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের সহিংস সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। সংলাপের জন্য তোড়জোড় নেই জাতি সংঘের। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সংলাপের বিষয়ে ধীরে চলো নীতির পথে চলছে। সরকারের কৌশলী পদক্ষেপে সন্তুষ্ট বিদেশী প্রভাবশালী দেশগুলোও। একদিকে সহিংস সন্ত্রাস করে আন্দোলন অনির্দিষ্টকাল আন্দোলন চালিয়ে নিতে ব্যার্থতা, আরেকদিকে বিদেশী প্রভাবশালী দেশগুলোর মুখ ফিরিয়ে নেয়ার মধ্যদিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের সহিংস সন্ত্রাস দমনের পর দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় সরকারের মধ্যে এক প্রকার রিলাক্স মুডের অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন যে কোন দিন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল, গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশি চালানো হতে পারে। সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলে যে কোন দিন আদালতের নির্দেশের বাস্তবায়ন ঘটবে।
×