ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধের দামে লাগামহীন উর্ধগতি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ মার্চ ২০১৫

ওষুধের দামে লাগামহীন উর্ধগতি

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেই ওষুধের বাজার। ওষুধ কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা বাজারের চিত্র প্রায় একই রকমের। তবে খুচরা বাজারে ওষুধের দাম একেবারেই লাগাম ছাড়া। পরিস্থিতি এমন যে ওষুধের বাজারে এখন লাগামহীন উর্ধগতি। বেড়েছে সকল প্রকারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম। প্রতি মাসেই দাম বাড়ে। এলাকা বিশেষে একই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস উঠেছে। তবুও এই পরিস্থিতি তদারকি করার যেন কেউ নেই। পরিদফতর থেকে অধিদফতরে রূপ নেয়ার দেড় বছরেও গতিশীল হতে পারেনি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ড ছাড়া কোন কিছুতে পরিবর্তন আসেনি। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের দোহাই দিচ্ছেন অনেকে। সংবাদ মাধ্যম ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওষুধ কোম্পানি ও ওষুধ দোকানের মালিকরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সারাদেশেই নানা অজুহাতে বেড়েছে ওষুধের দাম। বিশেষ করে খুচরা বাজারে মূল্য বৃদ্ধির মাত্রা যেন বেশি। খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে থাকে। রাজধানীর ফার্মগেট তেজতুরি বাজারের হাবিব ফার্মেসি। ওষুধ বিক্রি ও ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ নিয়ে ব্যস্ত বিক্রেতা মো: মিলনসহ আরও একজন কর্মচারী। মো: ইয়াসিন নামে এক মধ্য বয়সী ব্যক্তি ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা আনিসুলের হাতে তুলে দিলেন ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন। ওষুধ বিক্রেতা আনিসুলের হাতে সাড়ে ৫শ’ টাকা তুলে দিলেন মো: ইয়াসিন। আর ওষুধ হাতে নিয়ে রওনা দিলেন। ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে ওষুধের দাম নিয়ে কোন দর কষাকষি হয়নি। ওষুধ বিক্রেতাদের মুখের কথাই যেন ওষুধের নির্ধারিত দাম। এ চিত্র শুধু হাবিব ফার্মেসিতে নয়, সারাদেশেই চলছে। পাইকারি বাজার থেকে কিছুটা ছাড় পান খুচরা ব্যবসায়ীরা। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন পান। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা কোন কমিশন দেন না। ফার্মগেটের হক ফার্মেসি, ফার্গনেন্স ও আকবর মেডিকেল হলে নাপা এক পাতার দাম ৮ টাকা, জিংক সিরাপ ২৮ টাকা, এডোভাস সিরাপ ৩৮ টাকা। মোহাম্মদপুরের আহমেদ ফার্মেসি, হলি ও তনিমা ফার্মেসিতে জিংক সিরাপ ৩০ টাকা, এডোভাস সিরাপ ৪০ টাকা, নাপা একপাতা ৯ টাকা ও ডায়াবিনল এক পাতা ৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাজারঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ বাজারের চেয়ে হাসপাতালের পাশের দোকান ও মার্কেটগুলোতে ওষুধের দাম বেশি। এসএমসির ওরস্যালাইন এক বাক্স (২০ প্যাকেট) মূল্য ৬৮ টাকা ৮০ পয়সা লেখা আছে। কিন্তু এ স্যালাইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মার্কেট শাহবাগ ও ওষুধের আড়ত হিসেবে পরিচিত মিটফোর্ড মার্কেটে নেয়া চচ্ছে ৭৫ টাকা করে। এভাবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাশির ওষুধ টোফেন (১ মি.গ্রা.) ট্যাবলেট প্রতিটি ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা, টোফেন সিরাপ (১০০ মি.লি.) ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। ফ্রেনজিট ট্যাবলেট (০.৫ মি.গ্রা.) ৫০ পয়সা, প্রোসান (৫০ মি.গ্রা.) ২ টাকা, প্রোসান এইচ জেড দুই টাকা, এ্যামডোকল প্লাস (৫০ মি.গ্রা.) ১ টাকা ৫০ পয়সা, এ্যামডোকল (৫০ মি.গ্রা.) ১ টাকা করে বেড়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেফট্রোন (এক গ্রাম/ভায়াল) এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ৩০ টাকা, সেফট্রোন (৫০০ মি.গ্রা.) ও (২৫০ মি.গ্রা.) ইনজেকশন ১০ টাকা করে বেড়েছে। ফ্লেক্সি ১০০ এমজি ট্যাবলেট প্রতি এক টাকা, ক্যামলোডিন ৫০ প্লাস ট্যাবলেট প্রতি এক টাকা ৫০ পয়সা, অফকপ সিরাপ ১০০ এমএল পাঁচ টাকা, মিউকোস্পেল ১০০ মিলি সিরাপ প্রতি ১০ টাকা, তুসকা ১০০ মি.লি. সিরাপ ৫ টাকা ও মালটিভিট প্লাস (৩০টি) প্রতি বোতল ১০ টাকা করে বেড়েছে। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডাইসোপিন ইনজেকশন (এক গ্রাম) ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা, একই ইনজেকশন ২৫০ মি.গ্রা. ও ৫০০ মি.গ্রা. ১০ টাকা করে বেড়েছে। ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের রক্তচাপের ট্যাবলেট ওসারটিল (৫০ মি.গ্রাম.) একেকটি ছয় টাকা থেকে বেড়ে ৮ টাকা, ওসারটিল প্লাস, ওসারটিল ১০০ মি.গ্রাম ও প্লাস প্রত্যেকটি ২ টাকা করে বেড়েছে। ট্রাইডোসিল ইনজেকশন প্রতিটি ৩০০ থেকে বেড়ে ৪৬০ টাকা, লিভোজিন সিরাপ প্রতিটি (১০০ মি.লি.) ৭৫ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, মিউকোলিট সিরাপ (১০০ মি.লি.) ১০ টাকা বেড়ে ৪০, ফিক্সোকার্ড (৫০ মি.গ্রা.) সাড়ে ৪ টাকা থেকে ছয়, রিজারভিক্স (১০০ এমজি) এক টাকা বেড়ে চার, মায়োলাক্স (৫০ মি.গ্রা.) ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা, টিমোজিন (৫০ মি.গ্রা.) ১ টাকা বেড়ে ৫ টাকা, এমবোলিট (১০০ মি.লি.) কাশির সিরাপের দাম ১০ টাকা, ম্যাগফিন (১০০ মি.লি.) ওরাল সিরাপ ৩৫ টাকা, ওনাসেরন (৫০ মি.লি.) ১০ টাকা এবং মারলক্স প্লাস (২০০ মি.লি.) সিরাপের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। রেনেটা লিমিটেডের ট্যাবলেট আলফা প্রেস এক ও দুই মি.গ্রা. এক টাকা করে বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি এ্যালজিন ইনজেকশন পাঁচ মি.গ্রা. পাঁচ টাকা, প্রতিটি ক্রিপটিন ২.৫ মিলি গ্রামের ট্যাবলেট ১০ টাকা ৪ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকায়, ক্যালসিন ৫০০ এমজি প্রতি ট্যাবলেট ৯০ পয়সা, বিগমেট ৫০০ এমজি ৫০ পয়সা, প্রোটেনিল ২০ এমজি ও ৪০ এমজি এক টাকা করে বেড়েছে। বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, বিদেশে ওষুধের কাঁচামাল ও উপকরণের দাম বেড়েছে। এ জন্য দেশের ওষুধ উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সে অনুযায়ী দেশে ওষুধের দাম খুব বেশি বাড়েনি। কিন্তু ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি জানান, ওষুধ কোম্পানিগুলো দাম না বাড়ালেও খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। এসব খুচরা বিক্রেতাকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এভাবে চলতে থাকলে সব ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের কেনার সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাবে। সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা গেছে, চেতনানাশক লিগনোকেইন গ্রুপের জেসোকেইন জেলি নামে একটি ওষুধের দাম গত এক বছরে চার দফায় বাড়ানো হয়েছে। জেসন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এই ওষুধটির দাম ৬০ টাকা থেকে এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকা। রোগীর অস্ত্রোপচার ও ক্যাথেটার পরাতে এ ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। একই কোম্পানির পভিসেভ সলুশন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, পভিসেভ ক্রিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, জেসোকেইন ইনজেকশন ২% বেড়ে ২০ থেকে ২৮ টাকা এবং জেসোকেইন ইনজেকশন ২%এ ২৮ থেকে ৩৮ টাকা করা হয়েছে। কোম্পানিটি এক বছরে এ পাঁচটি ওষুধের দাম তিন থেকে চার দফায় বাড়িয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্যবহৃত লোসারটেন পটাশিয়াম গ্রুপের এনজিলক (১০০ মিলিগ্রাম) প্রতিটি ওষুধ ১০ থেকে ১২ টাকা এবং একই ওষুধের (৫০ মিলিগ্রাম) প্রতিটি ছয় থেকে আট টাকা ও (২৫ মিলিগ্রাম) সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার টাকা করা হয়েছে। এক বছরে এই ওষুধের দাম দু’বার বাড়ানো হয়েছে। ব্যথানাশক ট্যাপেন্টাডল গ্রুপের পেন্টাডল (১০০ মিলিগ্রাম) ওষুধের দাম ১৩ থেকে ১৪ টাকা এবং একই ওষুধের (৫০ মিলিগ্রাম) ১০ থেকে ১২ টাকা করা হয়েছে। ডায়াবেটিসের ওষুধ কমেট (৫০০ মিলিগ্রাম) প্রতি পাতার দাম ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, এক্সআর (৫০০ মিলিগ্রাম) পাঁচ থেকে ছয় টাকা, সেকরিন টিম-১, ২, ৩ ও ৪-এর দাম যথাক্রমে তিন থেকে সাড়ে চার টাকা, পাঁচ থেকে আট টাকা, নয় থেকে ১০ টাকা এবং ১০ থেকে ১২ টাকা করা হয়েছে। পেন্টোপ্রাজল গ্রুপের (২০ মিলিগ্রাম) ওষুধের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। সেফ্রাডিন গ্রুপের এ্যান্টিবায়োটিক (৫০০ মিলিগ্রাম) প্রতিটি সাড়ে ১২ থেকে ১৫ টাকা, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন গ্রুপের ১৪ থেকে ১৫ টাকা, সেফিক্সিম গ্রুপের (২০০ ও ৪০০ মিলিগ্রাম) ওষুধের দাম যথাক্রমে ৩০ থেকে ৩৫ ও ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করা হয়েছে। ভিটাবিওনের (ভিটামিন বি১, ভিটামিট বি৬ এবং ভিটামিন বি১২) দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ক্যালসিয়ামের প্রতি পিসের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা এবং ক্যালসিয়াম-ডির দাম ৪ থেকে ৫ টাকা করা হয়েছে। ভিটামিন বেক্সট্রাম গোল্ডের প্রতি কৌটার দাম ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকা করা হয়েছে। ট্রিপটিন ওষুধের প্রতি পাতা ১০ থেকে ১৭ এবং আট থেকে ১২ টাকা করা হয়েছে। মিজোলাসটিন গ্রুপের মাসটেল (আর) প্রতি পাতা ৫০ থেকে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। হার্টের চিকিৎসার জন্য ক্লোপিডোগ্রেল গ্রুপের এনক্লগ প্রতি পিস ওষুধের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। হার্টের মারাত্মক সমস্যার জন্য অতি প্রয়োজনীয় স্ট্রোপ্টোকাইনেজ গ্রুপের এপটেজ নামে একটি ইনজেকশনের দাম দুই হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে। হাড়ের ক্ষয়রোধের জন্য ব্যবহৃত জলেনিক এসিড নামের একটি ইনজেকশনের দাম দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৯৪৭ টাকা করা হয়েছে। কার্ডিনেক্স ইনজেকশনের দাম ৪২৫ থেকে ৫২৫ টাকা বেড়েছে। মা ও শিশুর রক্ত নেগেটিভ থাকলে হেপাবিগ ইনজেকশন ব্যবহার করে তা পজিটিভ করা হয়। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় এই ওষুধটি বাংলাদেশে কোন কোম্পানি উৎপাদন করে না। তবে একটি কোম্পানি এটি আমদানি করে। ওষুধটির বাজারমূল্য তিন হাজার ২০০ টাকা হলেও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। এক হাজার মিলিলিটার কলোরাইড স্যালাইনের দাম ৬৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৯১ টাকা ৭২ পয়সা, ডেক্সোরাইড ৬৩ টাকা থেকে ১০০ টাকা ৮৯ পয়সা, ৬২ টাকার ডেক্সাকোয়া ৯১ টাকা ৭২ পয়সা ও ভেক্সাকোয়া ডিএস ১০০ টাকা ৪৮ পয়সা বিক্রি করা হচ্ছে। ৪০০ মিলিগ্রাম ১০০ এ্যামোডিস ট্যাবলেটের দাম ২০২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭৭ টাকা করা হয়েছে। জিম্যাক্স ৫০০ মিলিগ্রামের ৩০টি ট্যাবলেট ৩৬০ থেকে ৪২০ টাকা, ভায়োডিন মাউথওয়াশ ২৫ থেকে ৩০ ও ৩৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা করা হয়েছে। লোরাটাডিন ট্যাবলেটের ৫০টির প্রতি প্যাকেটের মূল্য ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। ধানম-ি ও ফার্মগেট এলাকায় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ প্রেন্টোপ্রাজল ১০ থেকে ৪০ টাকা, ইসোমিপ্রাজল চার থেকে পাঁচ টাকা, সিভিট প্রতি পাতা আট থেকে ১৩ টাকা, ডায়াবেটিস রোগের মেটফরমিন ট্যাবলেট ২০ থেকে ৩০ টাকা, শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ ১২ থেকে ২০ টাকা, জন্মবিরতিকরণ সামগ্রী মারভেলন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, লাইনেজ ৯০ থেকে ৯৯ টাকা করা হয়েছে। এক বাক্সে ওরস্যালাইনের পরিমাণ (২০ প্যাকেট)। যার পাইকারি মূল্য ৬৮ টাকা ৮০ পয়সা। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। স্কয়ারের সিভিট ট্যাবলেট পাতায় ৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা। ডায়াবেটিস রোগের জন্য চাহিদা সম্পন্ন ট্যাবলেট প্যাসিফিক ফার্মাসিটিক্যালসের মেটফরমিন ট্যাবলেট ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ ১২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। স্যানিটারি ন্যাপকিন ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা। ইনসেপ্টা গ্রুপের ওরাল সলিউশন প্রেডনিসোলন এবং জন্ম বিরতি করণ সামগ্রী মারভেলন ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা,লাইনেজ ৯০ টাকা থেকে ৯৯ টাকা। বি-৫০-ফোর্ট ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৩৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। প্রস্রাবের ইনফেকশনসের জন্য ব্যবহৃত অফুরান এস প্রতি ট্যাবলেট বিক্রি হয় ২০ টাকায়। ওই এলাকায় অবস্থিত গ্রীন ফার্মায় এ ওষুধের দাম রাখা হয় ১৪ টাকা ৫০ পয়সা। মিটফোর্ড ওষুধের মার্কেটে তা ২০ টাকা। তোপখানা রোডের তুনতুন মেডিসিন মার্টে অফুরান এস বিক্রি হচ্ছে প্রতি ট্যাবলেট ২২ টাকা করে। ঘন ঘন মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৪ সালের এক নির্দেশনার কারণেই ওষুধের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধিতে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা হারিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো অন্যান্য ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, ২০০৯ সালে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় ২০৯টি ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী ওই তালিকায় ২৫৬টি ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ওই তালিকা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বাংলাদেশ কেমিস্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির উপ-সচিব মনির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ছোট-বড় কোন ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিই অত্যাবশ্যকীয় এই ওষুধগুলোর ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে না। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাভুক্ত অনেকগুলোই বাজারে পাওয়া যায় না। কোম্পানিগুলো কাগজে-কলমে দেখিয়ে দেয় যে, তারা ৬০ শতাংশের বেশি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদন করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পর্যবেক্ষণের অভাব এবং সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের কারণে অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অবস্থা ॥ পরিদফতর থেকে অধিদফতরে রূপ নেয়ার সাড়ে তিন বছরেও গতিশীল হতে পারেনি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ড ছাড়া কোন কিছুতে পরিবর্তন আসেনি। জনবল, যন্ত্রপাতি ও অভিযান সহায়ক যানবাহনের অবস্থাও আগের মতোই রয়ে গেছে। কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েও তারা ভেজাল ওষুধ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে না। অধিদফতরের এমন দুর্বলতার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে ভেজাল ওষুধ। দেশে প্রায় দু’শ’টি ওষুধ কোম্পানি নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করছে। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদন করেই ওষুধ প্রস্তুত করে চলেছে। জাতীয় ওষুধ নীতি ॥ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে জাতীয় ওষুধ নীতি। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ও নকল ওষুধ উৎপাদনকারীদের শাস্তি, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করায় যথাযথ অবদান রাখতে পারছে না এই নীতি। এসব বিষয়ে কেবল ‘ঔচিত্যবোধের’ ওপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। লঙ্ঘন করলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- সে সংক্রান্ত নির্দেশনা কোথাও নেই। নীতির ১৮টি লক্ষ্যের অধিকাংশই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ সুযোগে নামসর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের, ভেজাল ও নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করে যাচ্ছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ খেয়ে শিশুমৃত্যুর পরও নীতির দুর্বলতা ও আইনের শৈথিল্যের কারণে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তি দেয়া যাচ্ছে না। কার্যকারিতা বাড়াতে অবিলম্বে এই নীতি ‘রিভিউ’ করার পরামর্শ দিয়েছেন ওষুধ প্রযুক্তিবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
×