ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মালিকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ আমদানিকারক দুই জোটের

আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, গার্মেন্টসে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ মার্চ ২০১৫

আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, গার্মেন্টসে আতঙ্ক

এম শাহজাহান ॥ গার্মেন্টস খাতে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমছে না। চৈত্রের তাপদাহ সেই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধায় সব ধরনের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি কেনার সুযোগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের গার্মেন্টস খাত পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত পঁচিশ বছরে ২৫৩ গার্মেন্টস কারখানা অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে পাঁচ শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকের। শুষ্ক মৌসুম সামনে রেখে পোশাক আমদানিকারকদের বড় দুই জোট এ্যাকোর্ড ও এ্যালায়েন্স অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গার্মেন্টস মালিকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, শুল্ক মৌসুম সামনে রেখে গার্মেন্টস খাতে আগুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি গার্মেন্টস মালিকরাও বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাপমাত্রা বাড়ায় কোন কোন কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও অধিকাংশ কারখানায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ অবস্থায় শ্রমিকরা এক ধরনের মানুষিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বছরের মার্চ-জুন এই চার মাসে সাধারণত বেশি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শতভাগ কমপ্লায়েন্স না হওয়ার কারণে পোশাক কারখানায় এখন অগ্নি ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ শিল্পে সংঘটিত মোট ২৫৩ অগ্নি দুর্ঘটনায় ২৫ কারখানার ৩৮৮ জন শ্রমিক কর্মচারী নিহত হয়েছেন। যদিও বেসরকারী হিসেবে এই সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এতে সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটছে। অগ্নি দুর্ঘটনার এ হার বর্তমান আরও বেশি। ইতোপূর্বে সাভারের নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে আগুন লেগে ১২৪ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আর ওই দুর্ঘটনায় আহত হয় ৫ শতাধিক শ্রমিক। এশিয়ায় তৈরি পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে এমন ভয়াবহ অগ্নিকা- গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া ২০১০ সালে গাজীপুরের গরীব এ্যান্ড গরীব সোয়েটার কারখানা এবং আশুলিয়ার হামীম গ্রুপের কারখানায় সংঘটিত অগ্নি দুর্ঘটনায় ৫০ জন শ্রমিক মারা যায়। আর এসব ঘটনায় ক্রেতারা উদ্বিগ্ন। এছাড়া গাজীপুরের স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটলেও বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয় ঘটে। প্রতিবছরই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আগুন লাগার ঘটনা। আর ঘটছে প্রাণহানি। এর কারণ বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর আধুনিক যন্ত্র ফায়ার সার্ভিসের নেই। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের হাতে ১৪ তলার ওপরে অগ্নি নির্বাপণের কোন সিঁড়ি বা ল্যাডার নেই। তেজস্ক্রিয়তা ঠেকানোর জন্য কোন পোশাক নেই। সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়েই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অগ্নি ঝুঁকি কমাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে বিজিএমইএ কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে বিজিএমইএ’র সেই উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, তাজরীনের অগ্নি দুর্ঘটনার কথা আমরা ভুলে যাইনি। মূলত ওই ঘটনার পর সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুবিধা নিয়ে এখন প্রায় সর কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলয় গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা। তারপরও কিছু কিছু কারখানায় এখনও মালিকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নি নির্বাপণ সরঞ্জামাদি রাখছেন না। তিনি বলেন, যারা এ বিষয়ে গাফিলতি করছে বিজিএমইএ থেকে তাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই তাদের সতর্ক করা হবে। এদিকে, রাজধানীতে যতগুলো ফায়ার স্টেশন রয়েছে তা অগ্নি নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। রাজধানীতে অনেকক্ষেত্রেই বহুতল ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ভবনে অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় কোন ব্যবস্থা রাখা হয় না। এর আগে ঢাকায় অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে ২৬ জলাধার থাকলেও বর্তমানে তার একটিও নেই বলে জানা গেছে। এছাড়া অগ্নি নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর ৮২-৯৫ ভাগ সুউচ্চ ভবনে নেই স্মোক ডিটেক্টর ও হিট ডিটেক্টর। ৬২ ভাগেরও বেশি ভবনে নেই ফায়ার এলার্ম। এছাড়া ৮০ ভাগ ভবনে স্যান্ড টব নেই। অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রে শুল্ক প্রত্যাহার ॥ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রসহ আনুষঙ্গিক উপকরণে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার চেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সেই সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এছাড়া বিদেশী ক্রেতাদের দুটি ফোরাম এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স ইতোমধ্যে পোশাক কারখানাগুলোকে মান উত্তরণের তাগিদ দিয়েছে। শুধু তাই নয় শুষ্ক মৌসুম সামনে রেখে ইতোমধ্যে এই দু’সংগঠন প্রতিটি কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলেছে। এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের উদ্যোগ ॥ বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনায় গঠিত হয় ‘এ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি’ নামে ওয়ালমার্টসহ উত্তর আমেরিকার পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি জোট। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর খ্যাতনামা ব্র্যান্ড, শ্রমিক স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা মিলে গঠন করে ‘দি এ্যাকর্ড অন ফায়ার এ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি জোট।
×