ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দু’চার দিনের মধ্যেই তফসিল ॥ আগেভাগেই মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন এক সঙ্গে করার চিন্তাভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ মার্চ ২০১৫

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন এক সঙ্গে করার চিন্তাভাবনা

শাহীন রহমান ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। বাকি শুধু তফসিল ঘোষণা। কমিশন সূত্রে জানা গেছে তফসিল ঘোষণার আগে কমিশনের জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। আজ বুধবার, বৃহস্পতিবার কিংবা আগামী রবিবার যে কোনদিন বৈঠক শেষে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আলাদাভাবে করার চিন্তাভাবনা থাকলেও এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ইসি। এখন তিনটি নির্বাচন এক সঙ্গেই করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে নির্বাচনী আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও তা লঙ্ঘন করে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে কমিশনার, সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থী কেউই বসে নেই। পাড়া মহল্লায় নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সারা ঢাকা শহর। বড় বড় বিলবোর্ডগুলোতেও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের জনগণের পাশে থাকার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দেয়া হচ্ছে। আবার পোস্টারে দলীয় প্রধানের ছবি দিয়েও দলের প্রার্থী হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার প্রচেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও থেমে নেই। কোন দলের না হলেও এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে তারাও পিছিয়ে নেই। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য ছোট দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তফসিল ঘোষণার আগেই নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। সম্ভাব্য এসব প্রার্থীরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তোলার, খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোস্টারের মাধ্যমে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তবে সম্ভাব্য এসব প্রার্থী তালিকায় আওয়ামী লীগসহ, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের নামে প্রচার চালালেও বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের নামে কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায়নি। ভাগ হওয়ার পর এবারই প্রথম ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে উত্তর ও দক্ষিণে আলাদাভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০১১ সালে ভাগ হওয়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন স্থগিত ছিল। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার উদ্যোগ নিয়েও আইনী জটিলতা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্মতি না থাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর এ দুটি নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সীমানা সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপরই নতুন করে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ইতোমধ্যে ঢাকার দুটি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু বাকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। জানা গেছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য কমিশনের জরুরী বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। জরুরী বৈঠক শেষে যে কোন সময় তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। মনোনয়নপত্রে তালিকা করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের জন্য কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর এখন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এপিলের শেষে অথবা মে মাসের প্রথম সপ্তাহের করার জন্য চিন্তাভাবনা করছে। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান তফসিল ঘোষণার পরও কমিশন নির্বাচনের জন্য ৩৭ দিন সময় হাতে রাখতে চায়। এপ্রিলের শেষে অথবা মে মাসের প্রথমে নির্বাচন করতে হলে দু-একদিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। জানা গেছে, গত সোমবার নির্বাচনী তফসিলের গণবিজ্ঞপ্তি, পরিপত্র ও অন্যান্য চিঠিপত্রের নমুনা তৈরি করা হয়েছে। এতে নির্বাচনের দিন-তারিখের স্থান ফাঁকা রাখা হয়েছে। জরুরী বৈঠকের পর দিন তারিখ বসিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে কমিশন সচিবালয় থেকে নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ভোট কেন্দ্র ও ভোট কক্ষ স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে দুজন মেয়র ও ৯৩ সাধারণ ওয়ার্ডের কমিশনার ও ৩১ সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে কমিশনার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৩৬। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২। উত্তরের মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন। ও মহিলা ভোটার ১১ লাখ ২১ হাজার ৩১৩ জন। এছাড়া ২০১২ সালে তফসিল ঘোষণার পর যে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোট কেন্দ্রর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫ হাজার ৮২৮। তবে এ সংখ্যার আর বাড়তে পারে। এদিকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে একটি মেয়র পদসহ মোট ৫৭ ওয়ার্ডে কমিশনার পদে এবং ১৯ সংরক্ষিত মহিলা আসনে কমিশনার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ৭০। আর মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৬১ হাজার ২৯৩। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এ সিটি কর্পোরেশনের ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৭৩। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৯। বিগত ২৫ এপ্রিল ২০০২ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একই সঙ্গে করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী মেয়র প্রার্থীসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৪১ সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ও সংরক্ষিত ১৪ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৩ ও মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৯। ভোট গ্রহণের জন্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০। এছাড়া ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০। গত ১৭ জুন ২০১০ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মোট ৩২০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন। সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন। সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৩ জন। সর্বশেষ ভোটার সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ জন।
×