ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চসিক নির্বাচন

মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ মার্চ ২০১৫

মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ দিনক্ষণ ঘোষিত না হলেও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনজুড়ে এখন এ নির্বাচনই প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে নেমেছে। পক্ষান্তরে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিরাজ করছে অনিশ্চিত পরিস্থিতি। মেয়র প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যতই বলা হোক, তারা এককাতারে রয়েছেনÑ বাস্তবতা হচ্ছে গ্রুপিং মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। অনুরূপভাবে ২০ দলীয় জোটে মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে কারও কোন রা নেই। কাউন্সিলর পদে বিএনপির অসংখ্য প্রার্থী তৎপর। কিন্তু এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না এমন আশঙ্কা বিরাজমান থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা কোন্ পথে এগুবেন তার কোন দিকনির্দেশনা না পেয়ে সবকিছু গোলমেলে অবস্থায় রয়েছে। তবে কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীদের মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা লক্ষণীয় হওয়ায় দলের বিভিন্ন সূত্রে মঙ্গলবার জানানো হয়েছেÑ দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে যারা এ নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের ইঙ্গিত পেলেও প্রার্থীরা বসে নেই। বিশেষ করে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা গ্রাউন্ডওয়ার্কে নেমে এ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তৎপর। অবস্থাদৃষ্টে লক্ষণীয়, শেষ পর্যন্ত দলীয় সমর্থন না পেলেও অনেকে সম্ভাব্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকিকে উপেক্ষা করেও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম বিএসসি, আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আবদুচ ছালাম নির্বাচনে আগ্রহী। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের বহুমুখী লবিং ততই জোরালো হচ্ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রপিং তৎপরতাও। চট্টগ্রামে ১৪ দল মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন দিলেও তা অন্য তিনজন এখনও মেনে নেননি। এ নিয়ে উল্টো সমালোচনার সুরে বলা হয়েছে, দলীয় সভানেত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত এসব প্রক্রিয়া সঠিক নয়। দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগ এ সংক্রান্ত বর্ধিত সভা আহ্বান করে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে তৎপর রয়েছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন। দৃশ্যত, এ দু’জনের অনুসারী ও সমর্থকরা সম্পূর্ণ বিভক্তিতে রয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোন ধরনের সঙ্কেত মেলেনি যে, শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে আওয়ামী লীগ কাকে সমর্থন দিচ্ছে। আওয়ামী লীগে মেয়র পদে প্রার্থিতা এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় ৪১ ওয়ার্ড জুড়ে দলের সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আগ্রহীদের মাঝেও বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোপূর্বে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান দিয়েছিলেন, আগামী সিটি নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে একজন করেই সমর্থন দেয়া হবে। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত টেকানো যাবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে সমর্থকদের মাঝে। এদিকে, বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তায় রয়েছে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা জানেন না তাদের দলের কোন প্রার্থী এ নির্বাচনে থাকবেন কিনা। ফলে শাসক দল আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সক্রিয়তা পরিলক্ষিত হচ্ছে তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র বিএনপিতে। নেতাদের অধিকাংশই আত্মগোপনে। বিএনপি সমর্থিত বর্তমান চসিক মেয়রও নীরব। আর দলীয় সিদ্ধান্ত আসার আগে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে যারা একটু আধটু নড়াচড়া করছেন তাদের বিরুদ্ধে আসতে পারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে একপ্রকার নিস্তেজ অবস্থা দলটির। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী এপ্রিলের মধ্যেই হয়ে যেতে পারে এমনই আভাস মিলেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পুলিশের ডিআইজির বৈঠকের পর। তবে যখনই হোক না কেন, আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে কয়েকমাস আগে থেকেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহীদের তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ এবং একই সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। বিগত নির্বাচনে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি অনেকটা নীরবতাই পালন করছেন। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন এবং আরও কয়েক নেতার নাম ছয়মাস আগে বেশ আলোচিত থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা অনেকটা অন্তরালে চলে গেছেন। ফলে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও প্রার্র্থী নিয়ে কোন আলোচনা নেই। বরং তাদের দল চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটিই আলোচনার বিষয়।
×