ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের জয় দেখছেন পাইলট

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৮ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশের জয় দেখছেন পাইলট

কোয়ার্টারে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ বাড়তি রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির। ক্রিকেটপ্রেমিদের চোখ এখন মেলবোর্নে। দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়ে সবার শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছে মাশরাফিরা। বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে আসর শুরুর আগে বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন সাবেক তারকা ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে কথা বলার সময়ও ঠিক একই রকম আভাস পাওয়া গেল তাঁর কণ্ঠে। শোনা যাক রাজশাহী থেকে মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে যা বললেন। -সাক্ষাতকার তোফায়েল আহমেদ প্রশ্ন : বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে, এর আগে আমাকে দেয়া সাক্ষাতকারে এমনটাই বলেছিলেন। স্বপ্ন তো পূরণ হলো। কেমন লাগছে? পাইলট : অবশ্যই খুব ভাল লাগছে। আমাদের দলের প্রথম লক্ষ্যই ছিল কিভাবে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া যায় সেটা। এটা খুবই আনন্দের যে বাংলাদেশ খুব ভাল পারফর্মেন্স দেখিয়ে কোয়ার্টারে উত্তীর্ণ হয়েছে। নিজেদের পারফর্মেন্স দিয়ে টাইগাররা প্রমাণ করেছে কোন অঘটন ঘটিয়ে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে যায়নি। বরং ভাল খেলেই তারা দ্বিতীয় রাউন্ডের যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রশ্ন : পুরো আসরে টাইগারদের সার্বিক পারফর্মেন্স কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? পাইলট : প্রত্যেকেই খুবই সুন্দর খেলেছে। হয়ত টপ অর্ডারে দু-একজন রান পাচ্ছে না। তবে রিয়াদের পারফর্মেন্স বলার মতো। সাব্বির নিচের দিকে অসাধারণ খেলছে। সৌম্যও ভাল করছে। মুশফিক যথারীতি ধারাবাহিক। মাশরাফি-রুবেলরা সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সবমিলিয়ে টিমের পারফর্মেন্সে আমি মুগ্ধ। যেহেতু প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হয়েছে তাই এখন লক্ষ্য হবে কিভাবে সেমিফাইনাল খেলা যায়। বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে যেভাবে খেলছে তাতে সেই লক্ষ্য পূরণও খুব কঠিন কিছু না। ভারতের বিপক্ষে জিতলেও তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রত্যেকটা বিভাগেই ভাল খেলছে। দলটা এখন শুধু দুই একজনের ওপর নির্ভর নেই। টাইগাররা এবার এমন পারফর্মেন্স করেছে যেটা অনেক বড় টিমও পারেনি। প্রশ্ন : ইংল্যান্ডকে যেভাবে হারাল বাংলাদেশ তাতে ক্রিকেট বিশ্বকে কি কোন বার্তা দেয়া গেল? পাইলট : সত্যিকথা বলতে ইংল্যান্ডের এবারের দলটা খুব একটা গোছানো ছিল না। দলটাকে ওদের ছায়া বলে মনে হয়েছে। পুরোটাই অফ ফর্মে থাকা দল এবং বেশিরভাগই নবীন। ওরা যখন অস্ট্রেলিয়াতে খেলতে আসে কেউই তখন রানের মধ্যে ছিল না। মানসিকভাবেও চাঙ্গা ছিল না। ক্রিকেটে শারীরিক দিকের সঙ্গে যেটাও খুব জরুরী। প্রথম ম্যাচটাই ওদের খেলতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচ আবার নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। দুটি ম্যাচই ওরা বাজেভাবে হেরেছে। পরে শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও হেরেছে। হারার মধ্যে থাকায় মানসিক দিক থেকে ওরা অনেক দুর্বল ছিল। সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি। সেই সুযোগটাই বাংলাদেশ টিম নিয়েছে। এ জন্য টাইগারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। প্রশ্ন : বিশ্বকাপ শুরুর আগে কন্ডিশন এবং উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছিল। এখন পর্যন্ত এই দুইটি বিষয় তো খুব বেশি প্রভাব ফেলল বলে মনে হয় না। এর কারণ কি শুধুই টাইগারদের ভাল খেলা? পাইলট : আমরা ধারণা করেছিলাম অস্ট্রেলিয়াতে ঘাসের উইকেট হবে বা নিউজিল্যান্ডে বল অনেক মুভ করবে। সাধারণত ওদের দেশে যেটা হয়। সেই জিনিসটি আসলে এবার ছিল না। এটা আমাদের দলের জন্য সুবিধা হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দিকে তাকালে দেখবেন ভারত কেমন নাকানি চুবানি খেয়েছে। পরে আসলে উইকেটগুলো ফ্ল্যাট হতে শুরু করে। সুরেশ রায়না, ধাওয়ানরাও কিন্তু রানে ছিল না। ওরা ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছে। উইকেট ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়ায় পেস বোলারদের তেমন কিছু মনে হয়নি দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। ব্যাটসম্যানরাই ছড়ি ঘুরিয়েছে টুর্নামেন্টে। আগে যেখানে ছোট ছোট দলের কেউ বিশ্বকাপের মতো জায়গায় সেঞ্চুরি পেত না এবার সেখানে তাদের অনেকেই পেয়েছে। প্রশ্ন : আমাদের ওপেনিং জুটি দাঁড়াতেই পারছে না। এখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? পাইলট : আমি মনে করি ইমরুলকে একটা সুযোগ দেয়া উচিত। কারণ ও হঠাৎ করে খেলতে গেছে। এত বড় টুর্নামেন্টে হঠাৎ করে পারফর্ম করা কঠিন। তাইজুলের জায়গায় মাশরাফি দলে ঢুকলে ওপেনার হিসেবে আমি তামিম এবং ইমরুলকেই চাইব। এখন যেহেতু ওরা রানে নেই তাই ওদের নির্ভার থেকে খেলতে দেয়ার দায়িত্ব ম্যানেজমেন্টের। ওদের ফ্রি খেলতে দিলে দুজনের একজন ক্লিক করে গেলেই আমাদের শুরুটা দুর্দান্ত হবে। প্রশ্ন : ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে কোন বিষয়টি আলাদা করে নজর কেড়েছে? পাইলট : টিমটা অনেক গোছানো মনে হয়েছে। শুরুতে উইকেট পড়ে যাচ্ছে কিন্তু ব্যাটিংটা পূর্বের মতো ভেঙ্গে পড়ছে না। মিডল এবং লেট অর্ডার দারুণ করছে। অমাদের দেশে অবহেলার পাত্র পেসাররা অনেক ভাল করছে। এগুলো সবই উল্লেখ করার মতো। প্রশ্ন : কালকের ম্যাচে কারা ফেবারিট? পাইলট : আমার কাছে বাংলাদেশই ফেবারিট। প্রশ্ন : কারণ... পাইলট : প্রথম কারণ হচ্ছে ভারত টুর্নামেন্টের বড় টিম। গ্রুপ পর্বে ওরা খুব ভাল খেলেছে। অপরদিকে সে তুলনায় বাংলাদেশ আন্ডারডগ। বাংলাদেশ যেভাবে খেলে এ পর্যন্ত এসেছে এবং দিনের পর দিন উন্নতি করছে, তাতে মানসিক দিক থেকে কিন্তু টাইগাররা খুব চাঙ্গা। ভারত যেখানে ট্রফির জন্য খেলছে সেখানে আমাদের হারানো কিছু নেই। আমরা খেলছি আসলে প্রতিদিন উন্নতিটা তুলে ধরার জন্য। আমাদের ওপর চাপ তাই কম। মানসিকভাবেও আমরা ফিট। হেরে গেলেও আমাদের আফসোস থাকবে না কারণ প্রাথমিক লক্ষ্য আমাদের পূরণ হয়েছে। অপরদিকে ওরা হারলে সেটা ওদের জন্য খারাপ কিছুই হবে। এখন আমাদের আর প্রমাণ করার কিছু নেই, আছে কেবল পাওয়ার। তাই আমি আশাবাদী ভারতের বিপক্ষে আমরাই জিতব। কারণ গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুইয়ে ভারতকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিল। জিম্বাবুয়ে এমন করতে পারলে আমরা কেন নয়। ভারত আমাদের থেকে খুব বেশি এগিয়ে আছে এমনটা বলব না। যেহেতু নকআউট পর্বের খেলা এখানে আমাদের ভাল করতে হবে এবং ওদের ভুল করাতে হবে। প্রশ্ন : ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সামনে আমাদের বোলিংটা কেমন দেখছেন? পাইলট : আমি বিশ্বাস করি বোলারের জন্য আসলে গতি কিছু না। আসল জিনিস হচ্ছে লাইন এবং লেন্থ। যেটা নির্ভর করে বোলারের বুদ্ধিমত্তা এবং চালাকির ওপর। আপনি ব্যাটসম্যানকে কতটা বোকা বানাতে পারলেন সেটিই মুখ্য। এ পর্যন্ত মাশরাফি, রুবেলরা যেভাবে বল করে আসছে সেটা ধরে রাখতে পারলে ভয়ের কিছু নেই। প্রশ্ন : টুর্নামেন্টে ভারতের বোলাররা এবার অন্যতম সফল। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেমন করবে? পাইলট : যেহেতু ব্যাটিংবান্ধব উইকেট সেক্ষেত্রে মনে হয় না ওদের মোকাবেলা করাটা কঠিন কিছু হবে। জরুরী হচ্ছে আমাদের যারা ভাল ফর্মে আছে তাদের জ্বলে ওঠা। রিয়াদ, মুশফিক, সাব্বিররা ভাল খেললে সব কিছু সহজ হয়ে যাবে। রানের মধ্যে থাকলে যে কোন বোলিংকেই সহজ মনে হয়। যেহেতু ব্যাটসম্যানরা রানের মধ্যে আছে তাই মনে হচ্ছে সহজেই ওদের খেলা যাবে। প্রশ্ন : দর্শক গ্যালারি ভারতীয়দের দখলে থাকবে। এতে বাংলাদেশ কি চাপে থাকবে না? পাইলট : এটা তো বাংলাদেশের জন্য সুবিধা। বাংলাদেশে যখন ভারত খেলতে আসে তখন কিন্তু ওদের চেয়ে আমাদের ওপর চাপ বেশি থাকে। কারণ সমগ্র দর্শক থাকে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে কাল বাংলাদেশ আরও বেশি নির্ভার হয়ে খেলতে পারবে। প্রশ্ন : এক কথায় বলুন কারা জিতবে? পাইলট : বাংলাদেশই জিতবে।
×